Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বধূর প্রাণ বাঁচাতে রোজা ভেঙে রক্ত দিলেন আনোয়ার

আনোয়ারের এই ভূমিকায় রীতিমত খুশি প্রমীলাদেবীর পরিবার৷ আর আনোয়ার যে কলেজে পড়াশোনা করেন, সেই আলিপুরদুয়ার বিবেকানন্দ কলেজের অধ্যক্ষ গোবিন্দ রাজবংশী বলেন, ‘‘এমন ছাত্ররাই আমাদের গর্ব৷’’

দৃষ্টান্ত: আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে আনোয়ার। নিজস্ব চিত্র

দৃষ্টান্ত: আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে আনোয়ার। নিজস্ব চিত্র

পার্থ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৮ ০১:২২
Share: Save:

হাসপাতালে ভর্তি মুমূর্ষু রোগীর রক্তের প্রয়োজন৷ কথাটি কানে এসেছিল তাঁর৷ আর দেরি করেননি৷ রোজা ভেঙে রক্ত দিলেন প্রথম বর্ষের কলেজ পড়ুয়া আনোয়ার রহমান৷ বৃহস্পতিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে৷

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন দুয়েক আগে কোচবিহারের মরিচবাড়ি এলাকার বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের গৃহবধূ প্রমীলা রায় আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন৷ প্রমীলাদেবীর ছেলে চিত্তরঞ্জন রায় জানান, প্রায় মাস ছয়েক ধরে তাঁর মা রক্তাল্পতায় ভুগছেন৷ প্রতি পনেরো দিন অন্তর প্রমীলাদেবীকে রক্ত দিতে হয়৷ প্রমীলাদেবীর রক্ত বি পজিটিভ। এ বারে দরকার ছিল তিন ইউনিট রক্ত। হাসপাতালে রক্ত কম। তাই যে কোনও গ্রুপের রক্ত দান করলে, সেই মতো বি পজিটিভ রক্ত দেওয়া হয় রোগীকে। গত ছ’মাস ধরে রক্ত দিতে হচ্ছে বলে রায় বাড়ির লোকেরা তো বটেই, পরিচিতরাও রক্ত দিয়ে দিয়েছেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে আর তাঁদের রক্ত নেওয়া যাবে না। তাই এ বারে প্রমীলাদেবীর জন্য বাইরে থেকে কারও রক্ত নিতে হত। তার মধ্যে এক ইউনিট রক্ত তাঁরা সংগ্রহও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু বাকি রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রমীলাদেবীর বাড়ির লোকেরা যোগাযোগ করেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে৷ কিন্তু তাঁরাও রক্ত দিতে পারেননি।

তখন সেই সংগঠনের সূত্রেই আচমকাই আলিপুরদুয়ারের পাটকাপাড়ার বাসিন্দা আনোয়ার রহমানের যোগাযোগ হয়৷ কিন্তু সমস্যা ছিল, একে তো আনোয়ার রোজা রেখেছেন৷ তার উপর এ দিন দুপুরে তাঁর কলেজের পরীক্ষাও ছিল৷ কিন্তু তাতেও থামিয়ে রাখা যায়নি আনোয়ারকে৷ তিনি রাজি হয়ে যান৷ তাঁর রক্তের গ্রুপ এ পজিটিভ৷ দেরি না করে দুপুর বারোটার দিকে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে ছুটে যান আননোয়ার৷ ব্লাডব্যাঙ্কে এক ইউনিট রক্ত দিয়ে তার বিনিময়ে এক ইউনিট বি পজিটিভ রক্ত প্রমীলাদেবীর বাড়ির লোকেদের হাতে তুলে দেন তিনি৷ তারপর কলেজে গিয়ে পরীক্ষা দেন৷ আনোয়ারের কথায়, ‘‘রোজা আমি পরের বছরও করতে পারব৷ কিন্তু রক্ত না দিলে ওই রোগীকে বাঁচাতে পারতাম না৷’’ তাঁর বাড়ির লোকও ছেলের সিদ্ধান্তে সানন্দে সায় দেন।

আনোয়ারের এই ভূমিকায় রীতিমত খুশি প্রমীলাদেবীর পরিবার৷ আর আনোয়ার যে কলেজে পড়াশোনা করেন, সেই আলিপুরদুয়ার বিবেকানন্দ কলেজের অধ্যক্ষ গোবিন্দ রাজবংশী বলেন, ‘‘এমন ছাত্ররাই আমাদের গর্ব৷’’ আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সুপার চিন্ময় বর্মন বলেন, ‘‘রোজা ভেঙে রক্ত দিয়ে মহৎ কাজ করেছেন ওই কলেজ ছাত্র৷’’ হাসপাতালের ওই কর্তা জানিয়েছেন, ‘‘রক্ত নেওয়ার প্রয়োজনেই প্রমীলাদেবী আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷ কেন তাঁর এই রক্তাল্পতা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ তার বাড়ির লোকেদের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে৷’’ ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জানিয়েছে, প্রমীলাদেবীর জন্য বাকি এক ইউনিট রক্তের ব্যবস্থা তাঁরা করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood Donation Ramadan Roja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE