প্রতীকী ছবি।
চেঁচামেচি শুনে বারান্দায় এসে দেখেন, রাস্তায় পড়ে রয়েছে এক যুবকের দেহ। পিচ রাস্তা ভেসে যাচ্ছে রক্তে। চমকে উঠেছিলেন শহরের একটি হাইস্কুলের শিক্ষক। বাস্তব নাকি কোনও থ্রিলার ছবি! ওই দৃশ্য দেখে অসুস্থ বোধ করতে থাকেন উনি। শনিবার আর স্কুলেই যেতে পারেননি। বললেন, ‘‘ত্রিশ বছর ধরে শিলিগুড়ি কলেজ পাড়ায় রয়েছে। এরপর তো রাস্তায় বের হতেই ভয় করবে।’’
জ্যুসের দোকানে এসেছিলেন কলেজ পড়ুয়া ইমন দাস। প্রকাশ্য রাস্তায় এক যুবককে কোপাচ্ছে আর এক যুবক। এমন দৃশ্য দেখার পর একা বাড়ি ফিরতে পারেননি। ইমন বলেন, ‘‘ফোন করে বাবাকে ডেকে এনেছি। তারপর বাড়ি ফিরেছি।’’
শনিবার সকালের শিলিগুড়িতে প্রকাশ্যে খুনের ঘটনার পরে এমন আতঙ্কেই ভুগছে বাসিন্দারা। বিশেষত কলেজ পাড়ার মতো এলাকায় এমন ঘটনা আতঙ্ক বাড়িয়েছে। এলাকার বাসিন্দা পলাশ মিত্রের কথায়, ‘‘এখানে মেয়েদের স্কুল-কলেজ রয়েছে। সকলেই আতঙ্কিত। ভয়ে অনেক মহিলা বাড়ি থেকেও বের হতে চাইছেন না। কতদিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কে জানে!’’
অফিস, স্কুল-কলেজের সময় শহরে ব্যস্ততম এলাকা কলেজ পাড়ায় এক যুবককে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় শহরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব ওই পাড়ায় থাকেন। কাউন্সিলর তাঁর স্ত্রী শুক্লাদেবী। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য তিনি কলকাতায় রয়েছেন। কিন্তু সকাল সওয়া দশটা নাগাদ ঘটনার পর থেকে সাত ঘন্টা কেটে গেলেও তাঁকে ওয়ার্ড কমিটির লোকজন কিছু জানায়নি। পরে বিষয়টি জানতে পেরে তিনিও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, ‘‘শহরে পুলিশি নজরদারিটা কী উঠেই গেল! সব পুলিশকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিলে এই শহরের হবেটা কি? রাস্তায় বেরোলে ব্যাগ টেনে নিচ্ছে দুষ্কৃতী। দিনেদুপুরে ব্যস্ত এলাকায় কোপাচ্ছে। মহিলাদের উত্যক্ত করার প্রবণতা বাড়ছে। এভাবে চলতে পারে না। শহরের মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন।’’
এলাকার পরিস্থিতি, কাজকর্ম নিয়েও কাউন্সিলের কাছে খবর নেই। ওয়ার্ড কমিটির লোকজনও তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না বলে অভিয়োগ। শুক্লা দেবী বলেন, ‘‘ওয়ার্ড কমিটির কেউ কিছু আমাকে জানাননি। এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।’’ তবে তিনি জানিয়েছেন, এ ধরণের ঘটনার পিছনে কী উদ্দেশ্য রয়েছে পুলিশ সেটা বার করুক। এলাকায়, স্কুল কলেজ রয়েছে। মানুষের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতেই পারে। এলাকার ওয়ার্ড কমিটির সম্পাদক সংগ্রাম মিত্র ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের কাছে গিয়ে ফের এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানানো হবে।’’
পুরসভার কংগ্রেসের পরিষদীয় নেতা সুজয় ঘটন জানান, তাঁর ওয়ার্ডে দিন কয়েক আগেই এক মহিলাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে তাঁর ব্যাগ ছিনতাই করে পালিয়েছে দুই বাইক আরোহী। মহিলার হাত ভেঙে যায়। তাঁকে নার্সিংহোমে ভর্তি হতে হয়। গত শুক্রবারও ওয়ার্ডে একটি সংস্থার অফিসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘একের পর এসব ঘটনা ঘটলে শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তো সকলেই তুলবেন। এদিন যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে চিলড্রেন পার্ক এলাকায় পুলিশ আধিকারিকদের অফিসও খুব বেশি দূরে নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy