Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আমূল সংস্কারে ভোল বদলাবে বাগডোগরার, বরাদ্দ ২৫ কোটি

প্রতিমাসেই বাড়ছে যাত্রী সংখ্যা। আগামী মাসেই বাড়তে চলেছে বিমানের সংখ্যাও। এই অবস্থান বাগডোগরা বিমানবন্দর দীর্ঘদিনের পুরানো টার্মিনাল ভবনের খোলনলচে পাল্টে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এএআই)। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, জমির অভাবে এখনই নতুন টার্মিনাল তৈরি করা না যাওয়ায় পুরনো ভবনটিকেই প্রায় ২৫ কোটি টাকায় আমূল সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৯
Share: Save:

প্রতিমাসেই বাড়ছে যাত্রী সংখ্যা। আগামী মাসেই বাড়তে চলেছে বিমানের সংখ্যাও। এই অবস্থান বাগডোগরা বিমানবন্দর দীর্ঘদিনের পুরানো টার্মিনাল ভবনের খোলনলচে পাল্টে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এএআই)। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, জমির অভাবে এখনই নতুন টার্মিনাল তৈরি করা না যাওয়ায় পুরনো ভবনটিকেই প্রায় ২৫ কোটি টাকায় আমূল সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ‘সিকিউরিটি হোল্ড’ এরিয়া। আপাতত বাগডোগরা বিমানবন্দরের একটি সিকিউরিটি হোল্ড এরিয়া রয়েছে। নতুন পরিকল্পনায় সেটিকে দুটি করা হচ্ছে। এরমধ্যে একটিকে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের সময় আলাদা করে সংরক্ষিত করে রাখা হবে। তাতে ২৫০ জন করে দু’জায়গায় যাত্রীদের বসানোর ব্যবস্থা করা যাবে।

এ ছাড়া রেঁস্তোরাটিকে টার্মিনাল ভবনের সামনে আনা, ভিআইপি এক্সিট এলাকাকে ঢেকে দেওয়া, ট্যারমাকের দিকে অংশ বাড়ানো, ইমিগ্রেশন, কাস্টমসের নতুন বসার ব্যবস্থা, ছাড়াও কমন ইউজ ট্যারমিনাল সিস্টেমকে (কিউট) বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এএআই-র তরফে চূড়ান্ত নকশা তৈরি করে দিল্লিতে পাঠানোর পর তার প্রাথমিক অনুমোদনও মিলেছে। সমস্ত কাজের জন্য তিন-চার মাস সময় রাখা হয়েছে। এএআই অফিসারেরা জানান, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম বা আইএলএস পরিষেবা চালু হতে পারে। এতে আরও বিমান ও যাত্রী সংখ্যা বাড়বে। একটি বিমান সংস্থা ওই ব্যবস্থা চালু হলে সকাল ৮টা থেকে একাধিক বিমান চালাতে পারে বলেও জানিয়ে রেখেছে। আবার ২৯ মার্চ থেকে রাজ্যে বাগডোগরা থেকে টাটা ভিস্তারা’র দুটি নতুন বিমান চালু হচ্ছে।

বাগডোগরা বিমানবন্দরের অধিকর্তা রাকেশ সহায় বলেন, “যাত্রী পরিষেবার কথা মাথায় রেখেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন টার্মিনাল ভবন তৈরি করা না অবধি পুরানো ভবনটিকেই সংস্কার করে নানা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। ছ-মাসের মধ্যে সব কাজ হয়ে যাবে।” তিনি জানান, দিনের কোনও কোনও সময় ৪০০-৬০০ যাত্রী টার্মিনাল ভবনের ভিতরে থাকছেন। গত ৩০ জানুয়ারি কম দৃশ্যমানতার জেরে ১০ বিমান বাতিল হয়। হাজার দেড়েক যাত্রীকে টার্মিনাল ভবনের ভিতরে-বাইরে রাখতে সমস্যা কিছু হয়। এ সব কিছু চিন্তা করেই নতুন ব্যবস্থা।

এএআই সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বছরের নভেম্বর মাস অবধি ৭ লক্ষ সাড়ে ২৭ হাজার যাত্রী এই বিমানবন্দরকে ব্যবহার করেছেন। গত বছর এই সময়ে সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪ লক্ষের মত। নভেম্বর অবধি বিমান চলছে ৭১৯৮টি। গতবার তা ছিল ৫১১২টি। কার্গোর পরিমাণ গতবারের ১২৯৯ টন থেকে বেড়ে ১৯৫৮ হয়েছে। আগামী এক বছরে যাত্রী সংখ্যা ১০ লক্ষ ছাঁড়িয়ে যাবে। বিমান চলাচলের সংখ্যাও দাঁড়াবে ১০৭৩৬টির মত।

বিমানবন্দরের কয়েকজন অফিসার জানান, দুটি সিকিউরিটি হোল্ড এলাকা, নতুন শৌচাগার, ট্যারমাকে নামার আলাদা র্যাম্প তৈরি হবে। সেই সঙ্গে বাইরের এলাকায় কাঁচ দিয়ে ঘেরা সুদৃশ্য রেঁস্তোরা হবে। এর নিচ দিয়েই ভিআইপিদের ঢোকা এবং বার হওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া যাত্রীদের টার্মিনালে ঢোকার পর কিউটের সংখ্যা বাড়িয়ে ১৬টির মত করা হচ্ছে। বুধবারই এর অনুমোদন মিলেছে। এরমধ্যে কয়েকটি বিমান সংস্থা কর্পোরেট, এক্সিকিউটিভ এবং ভিআইপি যাত্রীদের জন্য আলাদা কিউট রাখবে।

গত আড়াই মাসে তিন দফায় ২৪টি বিমান বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ডিসেম্বর মাসে দু’দিন ও জানুয়ারি মাসে একদিন বিমান বাতিল হয়েছে। বিমানবন্দরের অফিসারদের হিসাবে, এক একটি বিমানে ১৫০ জন যাত্রীর হিসাব ধরলেও ৩৬০০ জনের মত যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে ৪-৫টি বিমানের যাত্রী টার্মিনালে ঢুকলেও গোটা ভবনটি কার্যত ভিড়ে ঠেসে যাচ্ছে। যাত্রীদের ঠিকঠাক বসা, শৌচগারের ব্যবস্থা তো দূরের কথা ঠিকমত দাঁড়ানোর জায়গায় থাকছে না। অপরিসর টার্মিনালকে তাই বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকছে না। সেই সঙ্গে দোতলায় স্মোকিং জোন গড়ারও দাবি তুলেছেন বিমানবন্দরে অপেক্ষারত বহু যাত্রী।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গত ৩০ জানুয়ারি ১০টি বিমান বাতিল হওয়ার পরেই এএআই সর্বোচ্চ মহল থেকে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে আইএলএস ব্যবস্থা তৈরির দ্রুত জমি হস্তান্তর করার আবেদন করা হয়েছে। বিমানবন্দরের একাংশ কর্মী, অফিসারেরা জানান, গত সাত বছর ধরে ওই জমি সরকার এএআই’র হাতে তুলে দিতে পারেনি। সম্প্রতি সমস্যা অনেকটা মিটেছে। এখন কিছি বিদ্যুতের খুঁটি, মন্দির এবং ২-৩ বাড়ি সরানোর প্রক্রিয়া চলছে। তবে তা দ্রুত না হওয়ায় সমস্যা বাড়ছে। টাকা এবং বায়ুসেনা কাজের জন্য তৈরি থাকলেও ২৩ একরের ওই জমি মিলছে না। এই প্রসঙ্গে দার্জিলিঙের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) রচনা ভকত বলেন, “জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি, খুব দ্রুত সমস্যা মিটবে।”

উত্তরবঙ্গের একমাত্র ‘সচল’ বিমানবন্দর বাগডোগরা বিমানবন্দর। সাধারণ বাসিন্দা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে দেশ বিদেশের পর্যটকেরাও এই বিমানবন্দরের উপর নির্ভরশীল। দার্জিলিং, সিকিম, তরাই-ডুয়ার্স ছাড়াও নেপাল ও ভুটানের মত প্রতিবেশী রাষ্ট্রে এই বিমানবন্দর থেকে যাতায়াত করা হয়। এরজন্য দিনে দিনে এর চাহিদা বাড়ছে। তাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কক, ভুটানের পারোর বিমান এখন নিয়মিত যাতায়াত করছে। যদিও কাঠমান্ডুর বিমান (স্পাইসজেট) আপাতত বন্ধ রয়েছে। গত ২০১৩ সালে প্রায় ৪ লক্ষ ৩০ হাজার পর্যটক এই অঞ্চলে এসেছিলেন। যার মধ্যে ৩০ হাজারের মত বিদেশি ছিলেন। গত বছর পর্যটকদের সংখ্যা বেড়ে সাড়ে ৭ লক্ষ হয়েছে। বিদেশি পর্যটকেরা এসেছেন ৪৫ হাজারের মত। এর অধিকাংশই বাগডোগরা বিমানবন্দরকে ব্যবহার করেছেন।

ইর্স্টান হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরর্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্রাট সান্যাল বলেন, “এখন বাগডোগরায় সন্ধ্যা অবধি রোজ ১৩টি বিমান ওঠানামা করছে। দিনে দিনে তা আরও বাড়বে। এখনই টার্মিনাল ভবন সংস্কার, নতুন ভবন তৈরি না হলে আগামীতে আরও সমস্যা বাড়বে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kaushik chowdhuri siliguri bagdogra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE