নিজের বাগানে সঞ্জিত দাস।—নিজস্ব চিত্র।
ছিলেন বাবুদের বাগানের মালি। কাজ হারিয়ে মাংস ব্যবসায় নেমে সামান্য সঞ্চয় করেন। ওই টাকায় জমি লিজে নিয়ে ফুল ও রকমারি সবজি চাষ করে তাক লাগিয়েছেন জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া রাউত বাগানের সঞ্জিত দাস। কৃষি দফতরের সহযোগিতা ছাড়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে শস্য বৈচিত্র্যের ধারণা প্রয়োগের এমন অভিনব উদ্যোগ দেখে অবাক কৃষি আধিকারিকরা। চাষির বাগানের গ্ল্যাডিওলাস যাচ্ছে অসম ও মেঘালয়ে। প্রতিদিন স্থানীয় বাজারে যাচ্ছে বেগুন, শালগম ও মুলো।
শহরের এক অভিজাত পরিবারের ফুল বাগানে টানা কয়েক বছর কাজ করেন সঞ্জিতবাবু। সেটাও প্রায় ২৫ বছর হয়েছে। তখন থেকে স্বপ্নের জাল বোনা শুরু। বছর পঞ্চাশের চাষির ফুল গাছ পরিচর্যার ফাঁকে একলা মনে ভাবতেন ‘আমার যদি নিজের একটা বাগান থাকত’। কিন্তু সাধ পূরণে বাঁধা ছিল নিজের জমি অভাব উপায় খুঁজেছেন। অনেক সহজে মেলেনি। বাবুদের বাগানে কাজ হারানোর পরে মাংসের ব্যবসায় নামেন। ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলেন। প্রতি সপ্তাহে কিছু টাকা জমা করে প্রায় টাকা সঞ্চয় করেন। গত বছর ওই টাকা দিয়ে পাঁচ বছরের জন্য ছয় বিঘা জমি লিজে নেন তিনি।
জলপাইগুড়ি মহকুমা কৃষি অধিকর্তা হরিশ্চন্দ্র রায় বলেন, “সঞ্জিতবাবুর লড়াই দেখে অবাক হতে হয়। তিনি যে ভাবে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে শস্য বৈচিত্র্যর ধারনা বাস্তবে প্রয়োগ করেছেন ভাবা যায় না। ছয় বিঘা জমিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিয়েছেন ওই চাষি। দু’বিঘা জুড়ে রয়েছে বাহারি রঙয়ের গ্ল্যাডিওলাস ফুল। পাশে টুকরো জমিতে ফুটেছে গাঁদা ফুল। বাগান ঘিরে আছে আলু, বেগুন, শালগম, মূলো খেত। দুবিঘা জমিতে আলু, আধ বিঘে জমিতে বেগুন এবং ১ বিঘা জমিতে মূলো চাষ করেন সঞ্জিতবাবু। মূলো বিক্রি করে পাঁচ হাজার টাকা ঘরে তুলেছেন তিনি।
তবে মাংসের ব্যবসা ছাড়েননি তিনি। তাঁর কথায়, “চাষের জন্য টাকা দরকার প্রথম বছর লাভ হবে না। তাই মাংসের ব্যবসা বন্ধ করিনি।” তিনি জানান, বিঘাতে ৬০ হাজার গ্ল্যাডিওলাস ফুলের স্টিক হওয়ার কথা। অসময়ে বৃষ্টির জন্য ৪০ হাজারের মতো টিকেছে। অসম ও মেঘালয়ে প্রতি ফুলের স্টিক ৩ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লক্ষ টাকা। নতুন গ্ল্যাডিওলাস ফুল গাছের গুটি পাশের জমি দেখিয়ে চাষি বলেন, আরও তিন বিঘা পাঁচ বছরের জন্য লিজে নিয়েছি।আগামী মরশুমে চার বিঘা জমিতে গ্ল্যাডিওলাস ফুলের চাষ করব। ওই কাজে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন স্ত্রী রেখা দেবী এবং ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে। তপন জৈব সারের জন্য চাষি খেতের প্রান্তে তৈরি গোয়াল ঘরে দুটি গরু রেখেছেন।
শুধুমাত্র সবজি অথবা ফুলের চাষ করেন না কেন? প্রশ্ন শুনে চাষি হাসেন তাঁর বিনয়ী উত্তর, মারবেন নাকি! ফুল চাষে লোকসান হলে সবজি দিয়ে সামলে নেব সবজিতেও বৈচিত্র্য আছে আলুতে মার খেলে বেগুন দিয়ে সামাল দেব হচ্ছেও সেটা কোথায় জানলেন ওই পদ্ধতি? চাষি জানান, বাবুদের বাগানে কাজ করার সময় ওই শিক্ষা রপ্ত করেন এখন সেটা নিজের খেতে প্রয়োগ করছেন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy