Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গোষ্ঠী-সংঘর্ষ কালিয়াচকে, মন্ত্রীকে যেতে নিষেধ পুলিশের

এলাকার দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ চলছে। রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রর দাবি, দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে মালদহের কালিয়াচকের মোজমপুরে শাসক দলের এক পঞ্চায়েত সদস্যাকে বিবস্ত্র করে ঘোরানো হয়েছে খবর পেয়ে এলাকায় যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি এই যুক্তিতে তাঁকে সেখানে যেতে দেননি পুলিশ-কর্তারা।

মালদহের মোজমপুরের রাস্তায় টহল দিচ্ছে র্যাফ। শুক্রবার মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

মালদহের মোজমপুরের রাস্তায় টহল দিচ্ছে র্যাফ। শুক্রবার মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মোজমপুর শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১১
Share: Save:

এলাকার দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ চলছে। রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রর দাবি, দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে মালদহের কালিয়াচকের মোজমপুরে শাসক দলের এক পঞ্চায়েত সদস্যাকে বিবস্ত্র করে ঘোরানো হয়েছে খবর পেয়ে এলাকায় যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি এই যুক্তিতে তাঁকে সেখানে যেতে দেননি পুলিশ-কর্তারা। শুক্রবার এই ঘটনার পরে মোজমপুরের বাসিন্দাদের প্রশ্ন, যে এলাকায় মন্ত্রীকেই নিরাপত্তা দিতে পারছে না পুলিশ, সেখানে আমজনতা আছে কার ভরসায়?

সাবিত্রীর দাবি, মোজমপুরে গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়েছে কংগ্রেস-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের মধ্যে। যদিও স্থানীয় কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরীর বক্তব্য, “মোজমপুর পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে। তাদের নানা গোষ্ঠী ক্ষমতা দখলের জন্য লড়ছে বলেই পুলিশ সামাল দিতে পারছে না।”

শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে গোলমালের অভিযোগ উঠেছে বর্ধমান ও বীরভূমেও। বর্ধমানের বৈকুণ্ঠপুরে বৃহস্পতিবার রাতে পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধানকে গুলির ঘটনায় দলেরই পাঁচ নেতা-কর্মীর নামে অভিযোগ হয়েছে। ধরা হয়েছে এক জনকে। বীরভূমের খয়রাশোলে তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে দলের অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।

কালিয়াচকের মোজমপুরে কয়েক দিন ধরে বিক্ষিপ্ত গোলমাল চলছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে বোমাবাজি, গুলি চলে। এক পঞ্চায়েত সদস্যাকে বিবস্ত্র করে মারধরের অভিযোগও উঠেছে। বিবাদ থামাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। এ দিন ১৮ জনের বিরুদ্ধে কালিয়াচক থানায় অভিযোগ করেন মোজমপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সারেফা বিবি। তাঁর পরিজনদের অভিযোগ, রিন্টু শেখ নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে তাঁদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। রিন্টু এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। রিন্টুর দাবি, অভিযোগ ভিত্তিহীন।

এ দিন সাবিত্রীদেবী ওই এলাকায় যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। মন্ত্রীর ক্ষোভ, “কংগ্রেস-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আমাদের এক পঞ্চায়েত সদস্যাকে বিবস্ত্র করে মারধর করায় তাঁর বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম। পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ডিআইজি নিষেধ করেন।” মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদী বলেন, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি বলেই মন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়, তিনি যাতে মোজমপুরে না যান।”

কংগ্রেসের দাবি, জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি সাবিত্রী মিত্রের গোষ্ঠীর সঙ্গে বর্তমান সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের গোষ্ঠীর বিবাদেই অশান্তি চলছে মোজমপুরে। মোয়াজ্জেম বলেন, “আমি সভাপতি হওয়ার আগে মোজমপুরে চার-পাঁচটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই থাকত। ফের সেখানে গোলমাল শুরু হয়েছে। এর মধ্যে মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের যাওয়া রুখে পুলিশ ঠিক কাজই করেছে।” রাজ্যের আর এক মন্ত্রী তথা দলীয় রাজনীতিতে সাবিত্রী-বিরোধী বলে পরিচিত কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর মন্তব্য, “মোজমপুরে যা অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি, তাতে মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের যাওয়া নিরাপদ নয়। হতে পারে, কেউ মন্ত্রীর গাড়ির সামনে বোমা ফেলে দিল। তখন কী হবে!” সাবিত্রীদেবী যদিও ওই এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানেননি। তিনি বলেন, “মোজমপুর এখন কংগ্রেস-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। তাদেরই একাধিক গোষ্ঠী ওখানে লড়ছে। দলের নেতা মুকুল রায়কে ঘটনা জানিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mojompur kaliachak community clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE