Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গণধর্ষণে নাম জড়াল তৃণমূল নেতার

গণধর্ষণের মামলায় নাম জড়াল শাসক দলের নেতার। সেই অভিযোগ নিতে পুলিশ গড়িমসি করেছে বলেও দাবি করেছেন নাবালিকা নির্যাতিতা ও তার মা। রবিবার সন্ধ্যায় কোচবিহারের দিনহাটা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। নির্যাতিতা ও তার মায়ের দাবি, অভিযোগ নেওয়ার আগে থানায় তাদের তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছে। রাতে অভিযোগপত্র নেওয়া হলেও সই করে রিসিভড কপি দেয়নি পুলিশ।

নমিতেশ ঘোষ
দিনহাটা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩১
Share: Save:

গণধর্ষণের মামলায় নাম জড়াল শাসক দলের নেতার। সেই অভিযোগ নিতে পুলিশ গড়িমসি করেছে বলেও দাবি করেছেন নাবালিকা নির্যাতিতা ও তার মা। রবিবার সন্ধ্যায় কোচবিহারের দিনহাটা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। নির্যাতিতা ও তার মায়ের দাবি, অভিযোগ নেওয়ার আগে থানায় তাদের তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছে। রাতে অভিযোগপত্র নেওয়া হলেও সই করে রিসিভড কপি দেয়নি পুলিশ।

ঘটনার সূত্রপাত গত ৩ ফেব্রুয়ারি। অভিযোগ, সে দিন স্কুল থেকে ডেকে নিয়ে হোটেলে আটকে রেখে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে তার ‘প্রেমিক’। সে যে বিবাহিত, তা পরে জানতে পারে মেয়েটি। ভেঙে পড়ে সে। বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য পরের দিন ‘প্রেমিক’ তাকে নিয়ে যায় দিনহাটার মাতালহাটের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি আজিজার রহমানের বাড়িতে। সেখানে ফের ছাত্রীটিকে আটকে রেখে ওই তৃণমূল নেতা তাকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। কাউকে জানালে পরিবারের সবাইকে খুন করে ফেলা হবে বলে হুমকিও দেন বলে ছাত্রীর অভিযোগ। রবিবার দিনহাটা থানায় ‘প্রেমিক’ সন্তোষ বর্মন ও আজিজারের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন মেয়েটির মা। আরও এক তৃণমূল নেতা, ভেটাগুড়ি ২ অঞ্চল কমিটির সভাপতি প্রদীপ বর্মনের নামে ভয় দেখানো, হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার সন্তোষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজিজার ও প্রদীপ এখনও অধরা। যা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, কোনও মহিলা এমন অভিযোগ আনলেই পুলিশের উচিত, প্রথমেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা। এখানে অভিযুক্তেরা শাসক দলের হওয়ায় পুলিশ আড়াল করছে।”

কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব অবশ্য দাবি করেছেন, “অভিযোগ সঙ্গে সঙ্গেই নেওয়া হয়েছে। ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। অভিযুক্তদের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর পরেও কারও কোনও অভিযোগ থাকলে আমাকে লিখিত ভাবে জানানো হোক। সেই মতো ব্যবস্থা হবে।”

এমন ঘটনায় দলের দুই নেতার নাম জড়ানোয় অস্বস্তিতে তৃণমূল। দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ঠিক কী হয়েছে, জানি না। খোঁজ নিয়ে যা বলার বলব।” অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দুই তৃণমূল নেতা।

মাতালহাট অঞ্চলের ভলকা-পুটিমারি এলাকার বাসিন্দা ওই ছাত্রী জানিয়েছে, ভেটাগুড়ির বালাডাঙার সন্তোষের সঙ্গে তার বছর খানেকের পরিচয়। ৩ তারিখ দুপুরে সে যখন স্কুলে ছিল, তখন সন্তোষ তাকে ফোনে জানায় যে তার বাবা অসুস্থ। দিনহাটা হাসপাতালে যেতে হবে। স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে একটি ছোট গাড়ি নিয়ে স্কুলে হাজির হয় সন্তোষ। তাকে গাড়িতে তোলে। কিছুদূর যাওয়ার পরে সে বুঝতে পারে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন করতে সন্তোষ তার মোবাইল ফোন কেড়ে সিমকার্ড বের করে নেয় বলে অভিযোগ। তার পরে সে তাকে আলিপুরদুয়ারে নিয়ে গিয়ে একটি হোটেলে তুলে ধর্ষণ করে। যদিও ছাত্রীর মায়ের বক্তব্য, তাঁরা জানতেন, সে তার এক বান্ধবীর বিয়েতে গিয়েছে।

ওই ছাত্রীর অভিযোগ, পরের দিন সে জানতে পারে প্রেমিক বিবাহিত। তখন সে ভেঙে পড়ে। পরিস্থিতি মেটাতে ভেটাগুড়ি ২ অঞ্চল কমিটির সভাপতি প্রদীপ বর্মন সন্তোষের সঙ্গে আজিজারের যোগাযোগ করিয়ে দেন। অভিযোগ, সন্তোষ তাকে আজিজার রহমানের বাড়ি নিয়ে যায়। আজিজার নিজের বাড়িতে মেয়েটিকে আটকে রেখে ফের ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। পর দিন সেখান থেকে পালিয়ে বাড়ি ফিরে আসে ওই ছাত্রী। প্রদীপ বর্মনের বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর অভিযোগ হয়েছে। মেয়েটি অবশ্য জানিয়েছে, প্রদীপবাবু তাঁকে শারীরিক নিগ্রহ করেননি। তার কথায়, “দু’দিন ভয়ে কাউকে কিছু বলিনি। পরে শরীর ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল। তাই মাকে সব বলি। আমি অভিযুক্তদের শাস্তি চাই।”

দুই তৃণমূল নেতা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আজিজার বলেন, “একটি বিবাহিত ছেলের সঙ্গে ওই ছাত্রী পালিয়েছিল। পরে বালাডাঙা এলাকার বাসিন্দারা তাকে উদ্ধার করে। সেখানকার আমাদের দলের এক নেতা প্রদীপ বর্মন আমাকে ডেকে সব জানান। ওই মেয়েটি আমার মেয়ের সঙ্গে পড়াশোনা করত। সে জন্য আমি ওকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখি। আমার বাড়িতে ওই মেয়েটি দিনের বেলা ঘণ্টা চারেক ছিল। আমার মেয়ের সঙ্গেই ছিল সে। অভিযোগ ভিত্তিহীন।” প্রদীপবাবুর দাবি, ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে ওই ছাত্রী সন্তোষ বর্মনের সঙ্গে বালাডাঙায় যায়। তা নিয়ে এলাকায় হইচই শুরু হয়ে যায়। তাঁর কথায়, “আমি জানতে পারি, ওই ছাত্রীর বাড়ি মাতালহাটে। সেখানকার তৃণমূল নেতা আজিজারকে ডেকে ওই ছাত্রীকে বাড়ি পৌঁছে দিতে বলি। আমরা মেয়েটিকে তার পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছি। তাঁরা আলোচনা করে সন্তোষের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ করবেন সেটা তাঁদের ব্যাপার। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছে।”

এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপিও। তাদের অভিযোগ, “শাসক দলের নেতাদের চাপে পড়েই দিনহাটা থানা অভিযোগ নিতে গড়িমসি করেছে। পরে ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও সোমবার সকাল ১১টা পর্যন্ত তার ডাক্তারি পরীক্ষা হয়নি।” পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব অবশ্য জানান ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE