রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পুলিশের লাঠিচার্জ।
কলেজ ভোটে বিরোধীদের ঠেকাতে ফের বোমা, গুলি নিয়ে হামলার অভিযোগ উঠল শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। সোমবার দুপুরে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার কলেজে এবিভিপি সমর্থকরা মনোনয়ন তুলতে গেলে টিএমসিপি সমর্থকরা তাঁদের উপর যথেচ্ছ বোমা ও গুলি ছোড়ে বলে অভিযোগ। এবিভিপি-র দুই সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আর এক সমর্থকের কপাল ছুঁয়ে গুলি চলে গিয়েছে। এই জেলার সুরেন্দ্রনাথ কলেজে টিএমসিপি-এসএফআই সংঘর্ষের সময়ে ইটের আঘাতে জখম হয়েছেন রায়গঞ্জ থানার আইসি গৌতম চক্রবর্তী সহ ১৫ জন পুলিশকর্মী।
কলেজ দখল করতে এবিভিপি-র সমর্থকদের উপরে টিএমসিপি হামলা করছে বলে অভিযোগ তুলে সম্প্রতি বিজেপি উত্তর দিনাজপুর ও মালদহে বন্ধ ডেকে ভাল সাড়া পেয়েছে। তারপরে এই দিন এই দুই জেলার বেশ কয়েকটি কলেজে মনোনয়নপত্র তোলার প্রথম দিন ছিল। সকাল থেকেই উত্তেজনা ছিল সব ক’টি কলেজেই। সকাল থেকেই কলেজের মূল দরজা এবং লাগোয়া এলাকায় অন্তত শ’পাঁচেক টিএমসিপি সমর্থক জড়ো হন বলে অভিযোগ। তুলনায় পুলিশ ছিল সামান্যই। দুপুর দু’টোর পরে মনোনয়ন তুলতে এবিভিপি সমর্থকরা মিছিল নিয়ে আসতেই সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। তখনই গুলিবিদ্ধ হন এবিভিপি-র তিন সমর্থক। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে মিঠুন শেখের বাঁ পায়ে এবং সেলিম হোসেনের কোমরে গুলি লেগেছে। সেলিমকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সুদীপ্ত মণ্ডলের কপাল ঘেঁষে গুলি বের হয়ে গিয়েছে।
এবিভিপি সমর্থকদের পিছনেই সিপিআইয়ের ছাত্র সংগঠন এআইএসএফের সমর্থকরা কলেজে আসছিলেন। মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সিপিআই নেতা শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়। তাঁদের উপরেও গুলি বোমা নিয়ে টিএমসিপি হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তাঁকে লক্ষ করে গুলি চালানো হয়েছে অভিযোগ করে ইটাহার থানার সামনে দুপুর থেকে অনশনে বসেন শ্রীকুমারবাবু।
রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ কলেজে সংঘর্ষ থামাচ্ছে পুলিশ।
কলেজ ভোট ঘিরে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে জেলার সুরেন্দ্রনাথ কলেজও। আহত আইসি গৌতমবাবুকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তৃণমূলের এক প্রাক্তন ব্লক সভাপতিও হাসপাতালে ভর্তি। এই কলেজেও সকাল থেকেই মূল ফটক দখল করে রাখার অভিযোগ ওঠে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। কয়েকজন এসএফআই সমর্থকের হাতে তির ধনুক ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রথমে জলকামান ব্যবহার করে। তারপরে দফায় দফায় লাঠিও চালায়। সংঘর্ষে দু’পক্ষের অন্তত ১৮ জন জখম হন। টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অজয় সরকারও সংঘর্ষের সময় আহত হন। রায়গঞ্জের তাঁদের তিন কাউন্সিলরও পুলিশের লাঠিতে জখম হয়েছেন বলে তৃণমূলের দাবি।
বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু জানান, প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে পুলিশ নীরব দর্শক। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা স্বীকার করেছেন, “এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী না থাকায় গোলমাল থামাতে অনেকটা দেরি হয়েছে।” তবে থানায় কোনও পক্ষই কোনও অভিযোগ করেনি। বিজেপি যদিও আজ, মঙ্গলবার ১২ ঘণ্টার ইটাহার বন্ধ ডেকেছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রীই কলেজে কলেজে হিংসা পরিচালনা করছেন।” যত দিন সরকার কলেজ ভোটে হিংসা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারবে, তত দিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রাখার দাবিও তুলেছেন রাহুলবাবু। ইটাহার কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা কথা শ্রীকুমারবাবুর স্ত্রী স্বপ্না মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “মনোনয়ন তোলার পরও ছাত্ররা ভিতরে ছিল। পুলিশকে বারবার বলা হলেও কোনও কাজ হয়নি।”
ইটাহার কলেজে সংঘর্ষের পর থানার সামনে অনশনে
বসেছেন সিপিআই নেতা শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়।
তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইটাহার কলেজের গণ্ডগোল নিয়ে দলের জেলা সভাপতি ও বিধায়ক অমল আচার্যের কাছ থেকে খোঁজ নেন। পরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “অমলবাবু জানিয়েছেন, তৃণমূলের ছাত্ররা যখন মনোনয়ন জমা দিয়ে ফিরছিলেন, তখন এবিভিপি-সহ বিরোধীরাই তাঁদের উপরে আক্রমণ করে।”
মালদহের সামসি কলেজেও এবিভিপি ও এসএফআই প্রার্থীদের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। টিএমসিপি অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
তবে এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যে টিএমসিপি-র দু’গোষ্ঠীর মধ্যেই মারপিটে তাদের চার কর্মী জখম হন। উত্তর ২৪ পরগনার ফলতাতেও মনোনয়নপত্র তোলা নিয়ে টিএমসিপি-এসএফআই সমর্থকদের সংঘর্ষে জখম হয়েছেন দু’পক্ষের ১০ জন।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy