Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
পাহাড়পুর

তৃণমূল পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নালিশ

রাস্তার কাজ না করে জাতীয় গ্রামীণ কর্ম সুনিশ্চিতকরণ প্রকল্পের (এনআরইজিএস) টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠল জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। এছাড়াও বার্ষিক অ্যাকশন প্ল্যান ছাড়া কুয়োর রিং কেনা নিয়েও পুকুর চুরির অভিযোগ আছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৭
Share: Save:

রাস্তার কাজ না করে জাতীয় গ্রামীণ কর্ম সুনিশ্চিতকরণ প্রকল্পের (এনআরইজিএস) টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠল জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। এছাড়াও বার্ষিক অ্যাকশন প্ল্যান ছাড়া কুয়োর রিং কেনা নিয়েও পুকুর চুরির অভিযোগ আছে।

জেলা কংগ্রেস তফসিলি সেলের তরফে ২৪ নভেম্বর জেলা প্রশাসন এবং জাতীয় গ্রামীণ কর্ম সুনিশ্চিতকরণ প্রকল্প আধিকারিকের কাছে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা দুর্নীতির অভিযোগ লিখিতভাবে জানানো হয়। ১০ ডিসেম্বর জেলা এনআরইজিএস সেল থেকে সদর ব্লকের বিডিও-কে ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ দিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) দিব্যেন্দু দাস বলেন, “পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু প্রকল্পের কাজ নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। সেগুলি কয়েক দিনের মধ্যে খতিয়ে দেখা হবে।”

জাতীয় গ্রামীণ কর্ম সুনিশ্চিতকরণ প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার সুদীপ ঘোষ বলেন, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে সদর ব্লকের বিডিও-কে ঘটনাটি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।” জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বিডিও শ্রদ্ধা সুব্বা বলেন, “তদন্ত চলছে। ওই বিষয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।”

দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান রাহেনা খাতুন। তিনি বলেন, “নিয়ম মেনে সব কাজ হয়েছে। প্রশাসনের কর্তাদের হাতে সমস্ত কাগজ তুলে দেওয়ায় হয়েছে।”

সম্প্রতি ওই পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন সিপিএম এবং কংগ্রেস সদস্যরা। ২৬ নভেম্বর ওই প্রস্তাবের উপরে তলবি সভাকে ঘিরে তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধী সমর্থকদের সংঘর্ষ বাধে। সভা ভেস্তে যায়।

ওই পরিস্থিতিতে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য সদর বিডিও-কে পাঠানো জাতীয় গ্রামীণ কর্ম সুনিশ্চিতকরণ প্রকল্প আধিকারিকের নির্দেশটি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে।

জেলা কংগ্রেস তফসিলি সেলের অভিযোগ, নিয়মের তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা লুঠ করেছে তৃণমূল পঞ্চায়েত কর্তারা। তথ্য জানার আইন ব্যবহার করে দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য উদ্ধার করা হয়েছে। সংগঠনের জেলা সভাপতি তথা পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রাধান বিশ্বজিত্‌ সরকার জানান, অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী গ্রাম পঞ্চায়েতের উন্নয়নের কাজ হয়। ২০ হাজার টাকার উপরে কোনও কাজ হলে দরপত্র ডেকে জিনিসপত্র কিনতে হয়। অথচ পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান তৃণমূল প্রধান ও তাঁর সঙ্গীরা ওই নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা লুঠ করেছেন।

প্রশাসনের কর্তাদের তিনি জানান, এনআরইজিএস প্রকল্পে এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য ৪ লক্ষ ৩২ হাজার ৪৯৭ টাকা খরচ দেখানো হয়। অথচ কাজ হয়েছে মাত্র আড়াইশো মিটার রাস্তার। ভুয়ো শ্রমিকের তালিকা তৈরি করে ওই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

বিশ্বজিত্‌বাবুর আরও অভিযোগ, গত জানুয়ারিতে গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে আড়াইশো জন উপভোক্তার জন্য ৩৯ লক্ষ টাকায় দেড় হাজার কুয়োর রিং কেনা হয় টেণ্ডার না করে কোটেশনের মাধ্যমে সেগুলি কেনা হয় বলে অভিযোগ।

এথেলবাড়ির একটি সংস্থা গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯৩ ট্রাক কুয়োর রিং পাহাড়পুরে পৌঁছিয়ে দেয়। শুধু ১৯ ফেব্রুয়ারি ৩৩ ট্রাক রিং সরবরাহ হয়। অভিযোগ, সেগুলি এক জায়গায় না রেখে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। জেলা কংগ্রেস তফসিলি সেলের নেতৃত্বের প্রশ্ন, শেষ দিনে ৩৩ ট্রাক কুয়োর রিং কোথায় ফেলা হল? কোনও এক জায়গায় সরবরাহ করা রিং জমা করে হিসেব বুঝে না নিয়ে কেন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে?

সদর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সভাপতি রাখি বর্মণ বলেন, “অ্যাকশন প্ল্যান ছাড়া টেণ্ডার না ডেকে কেমন করে ওই সামগ্রী কেনা হল বুঝতে পারছি না। ব্লক প্রশাসনের কর্তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।”

জেলা কংগ্রেস তফসিলি সেলের জেলা সভাপতি জানান, খোঁজ নিয়ে জেনেছেন একটি সংস্থা ৪০ শতাংশ ছাড়ে কুয়োর রিং সরবরাহ করতে রাজি হয়। কিন্তু সেখান থেকে সামগ্রী না নিয়ে অন্য একটি সংস্থার কাছ থেকে সাড়ে ১০ শতাংশ ছাড়ে সামগ্রী নেওয়া হয়। যে পরিমাণ রিং সরবরাহের কথা বলা হয়েছে, সেটা এলাকায় পৌঁছেছে কিনা তা নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেন। তাঁর কথায়, “কুয়োর রিং কেনা নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের নথিপত্রে যে ১২ লক্ষ ৮৫ হাজার পাঁচশো টাকা অতিরিক্ত খরচ দেখানো হয়েছে, তা লুঠ হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE