Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
পুকুরিয়া-কাণ্ড

তদন্তে প্রাক্তন ওসির গাফিলতির প্রমাণ

আগেই সরানো হয়েছিল ওসি-র দায়িত্ব থেকে। বিভাগীয় তদন্তেও অভিযোগের প্রমাণ মেলায় এ বার মালদহের এক পুলিশ অফিসারের পদোন্নতির পথেও বাধা পড়ল। প্রদীপ সরকার নামে ওই অফিসারের বিরুদ্ধে থানায় সালিশিসভা বসিয়ে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগের মিটমাটের চেষ্টা করা, নির্যাতিতা মহিলাকে থানায় আটকে মানসিক চাপে ফেলার মতো অভিযোগ ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৪
Share: Save:

আগেই সরানো হয়েছিল ওসি-র দায়িত্ব থেকে। বিভাগীয় তদন্তেও অভিযোগের প্রমাণ মেলায় এ বার মালদহের এক পুলিশ অফিসারের পদোন্নতির পথেও বাধা পড়ল। প্রদীপ সরকার নামে ওই অফিসারের বিরুদ্ধে থানায় সালিশিসভা বসিয়ে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগের মিটমাটের চেষ্টা করা, নির্যাতিতা মহিলাকে থানায় আটকে মানসিক চাপে ফেলার মতো অভিযোগ ছিল।

মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বলেন, “বিভাগীয় তদন্তে ওই অফিসারের কর্তব্যে গাফিলতির প্রমাণ মিলেছে। ফলে, এর পরে পদোন্নতির প্রথম সুযোগটি উনি পাবেন না। ওঁর ফের ওসি পদ পাওয়াতেও সমস্যা হবে।” পুলিশ সুপার জানান, থানায় সালিশিসভা বসানোর অভিযোগের তদন্ত এখনও চলছে। প্রদীপবাবু বলেন, “এ বিষয়ে যা বলার পুলিশ সুপারই বলবেন।” ঘটনার পরে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগকে নস্যাৎ করে নির্যাতিতার চরিত্র নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন জেলার মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। এ দিন তিনি বলেছেন, “এ ব্যাপারে যা বলার রাজ্য পুলিশের ডিজি-ই বলবেন।”

নির্যাতিতার আতঙ্কের শুরু গত জুলাই মাসে। ইংরেজবাজার থানা এলাকার ওই বিধবার অভিযোগ, সে সময় তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে লাগোয়া পুকুরিয়া থানার বাসিন্দা শাসক দলের কর্মী রিন্টু শেখ। পুলিশ থানায় সালিশিসভা বসিয়ে মীমাংসার পরামর্শ দেয়। কিন্তু রিন্টুকে ধরেনি। বারবার অভিযোগ তুলে নিতে বললেও তাতে রাজি না হওয়ায় ১০ নভেম্বর মহিলাকে ফের ধর্ষণের চেষ্টা ও বাধা দেওয়ায় তাঁর বৃদ্ধ বাবার ডান চোখে রড দিয়ে আঘাত করার অভিযোগ ওঠে রিন্টুর বিরুদ্ধে। বিধবার দাবি, এর পরে রিন্টু গ্রেফতার হলেও ফের শুরু হয় পুলিশের ‘কারসাজি’। অভিযুক্তের নিরক্ষর স্ত্রী-র টিপসই দেওয়া বয়ানে ইচ্ছেমতো লিখে অভিযোগকারিণীকেই পাল্টা প্যাঁচে ফেলার ছক কষা হয়। জবানবন্দি নেওয়ার নামে তাঁকে প্রায় ২৪ ঘণ্টা থানায় আটকে বয়ান বদলের জন্য মানসিক চাপ দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। এমনকী, রিন্টুকে আদালতে হাজির করানো হলে বিধবা জানতে পারেন, তাঁর অভিযোগের বয়ান থেকে ধর্ষণের প্রসঙ্গটি পুরোপুরি বাদ দিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। ১০ নভেম্বরের হামলায় পুলিশের নথিবদ্ধ করা এফআইআরে কয়েকটি ত্রুটিপূর্ণ দিক চোখে পড়ে আইনজাবীদের। আঙুল ওঠে পুকুরিয়া থানার তৎকালীন ওসি সাব-ইনস্পেক্টর প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে। পুলিশ সূত্রের খবর, এর পরেই ওসি-র পদ থেকে সরিয়ে কালিয়াচক থানায় সেকেন্ড অফিসার করে দেওয়া হয় ওই পুলিশকর্মীকে। শুরু হয় বিভাগীয় তদন্ত। সম্প্রতি তার রিপোর্ট জমা পড়ে পুলিশ সুপারের কাছে। ইতিমধ্যে থানায় সালিশিসভা বসানোর অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি এবং অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে ইতিমধ্যে মালদহের সিজেএম আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন সমাজকর্মী বিপ্লব চৌধুরী।

স্থানীয় সূত্রের খবর, নির্যাতিতা বিধবার বাবা এখনও অসুস্থ। চোখে স্পষ্ট দেখতে পান না। মাসখানেক পরে অস্ত্রোপচার হবে। বিধবা বলেন, “আমাদের এই অবস্থার জন্য যারা-যারা দায়ী, তাদের প্রত্যেকেরই যেন শাস্তি হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

malda pukuria
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE