Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
রামঘাটে ধৃত ২৫ জনের জেল হেফাজত

তল্লাশির নামে পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ

রামঘাটে কাণ্ডে জড়িতদের খোঁজে তল্লাশির নামে পুলিশ বাড়িতে ঢুকে নিরীহ বাসিন্দাদের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল। বুধবার দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার সকাল অবধি পুলিশ রামঘাট লাগোয়া এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন কাউন্সিলর অমরনাথ সিংহ-সহ মোট ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। আরও অন্তত ১২০ জন পুলিশের সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন। তাঁদেরই খোঁজ করছে পুলিশ বাহিনী। বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, তল্লাশিতে গিয়ে এক মানসিক অবসাদগ্রস্ত যুবককে মাটিতে ফেলে মারধরও করেছে পুলিশ।

রামঘাটে পুলিশ তল্লাশি করতে গিয়ে এ ভাবে ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। বৃহস্পতিবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

রামঘাটে পুলিশ তল্লাশি করতে গিয়ে এ ভাবে ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। বৃহস্পতিবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০২:২০
Share: Save:

রামঘাটে কাণ্ডে জড়িতদের খোঁজে তল্লাশির নামে পুলিশ বাড়িতে ঢুকে নিরীহ বাসিন্দাদের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল। বুধবার দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার সকাল অবধি পুলিশ রামঘাট লাগোয়া এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন কাউন্সিলর অমরনাথ সিংহ-সহ মোট ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। আরও অন্তত ১২০ জন পুলিশের সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন। তাঁদেরই খোঁজ করছে পুলিশ বাহিনী। বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, তল্লাশিতে গিয়ে এক মানসিক অবসাদগ্রস্ত যুবককে মাটিতে ফেলে মারধরও করেছে পুলিশ। ওই যুবক এলাকারই একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের একাংশ শ্মশানযাত্রীদের উপরে হামলার প্রতিবাদে ‘ব্যবসা-বন্ধ’ ডেকে দোকানপাট করে দেন। ব্যবসায়ীদের আরেকটি অংশ অবশ্য তাতে সাড়া দেননি।

সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি, পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছে। পুলিশ অত্যাচার বন্ধ না করলে শিলিগুড়ি বন্ধ ডাকার হুমকিও দিয়েছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য-সহ অনেক নেতা। আজ, শুক্রবার শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারের অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর কথা ঘোষণা করেছেন দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার। তিনি বলেন, “পুলিশকে কাজে লাগিয়ে রাজ্য সরকার যে ভাবে অত্যাচার চালাচ্ছে তা কোনমতে মেনে নেওয়া যাবে না।”

রামঘাটের বাসিন্দা শোভা সিংহ, দুর্গাদেবী, বেবি মিত্র, মীনা থাপাদে’র অভিযোগ, “পুলিশ মারধর করেছে। বাড়িতে ছেলেরা থাকতে ভয় পাচ্ছে।” রামঘাট লাগোয়া ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাসের বক্তব্য, “রাতে এনজেপি ফাঁড়ির পুলিশ বাড়িতে ঢুকে জিনিসপত্র তছনছ করে। মানসিক অবসাদগ্রস্ত ভাই বাড়িতে ছিল। ওঁকে মারধর করা হয়েছে। আমরা পুলিশে অভিযোগ করব।”

শ্মশানযাত্রীদের উপরে হামলার প্রতিবাদে শিলিগুড়ির নয়াবাজার এলাকায় ব্যবসা বন্‌ধ। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

তবে তৃণমূল নেতাদের দাবি, ওই এলাকায় কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি’র নেতারা অশান্তি জিইয়ে রাখতে সক্রিয় রয়েছেন। এ দিন বিকেলে শিলিগুড়ি শহরে মিছিলও করে তৃণমূল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “১০ লক্ষ মানুষের শহরে আরেকটা বৈদ্যুতিক চুল্লি দরকার কি না তা বিরোধীরা বলুক। তাঁরা তা না করে উল্টে বিশৃঙ্খলাকে মদত দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে নানা ধরণের ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন।”

এ দিন ধৃত ১৮ জনকে শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে ধৃতদের তোলা হয়। সকলেরই জামিনের আবেদন খারিজ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের কাউকেই পুলিশের তরফে হেফাজতে চাওয়া হয়নি। কেন পুলিশ হেফাজতে চায়নি তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীরা।

ধৃতদের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সব মিলিয়ে দাঙ্গা, সরকারি কাজে বাধা, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র নিয়ে জমায়েত, খুনের চেষ্টা, ছিনতাই, চুরির মতো জামিন অযোগ্য ধারা-সহ ২৬টি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতে পুলিশের নথিতেও একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে বলে আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন। পুলিশের পাঠানো ফরওয়ার্ডিং’-এ ধৃতদের সকলের নাম থাকলেও, কে কোন অভিযোগ করেছে তার কোনও উল্লেখ্য নেই বলে অভিযোগ। ধৃতদের সকলের চিকিৎসা করার জন্য একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করার আর্জিও জানান ধৃতদের আইনজীবীরা। তাঁদের অন্যতম পার্থ চৌধুরী অভিযোগ করেন, “ধৃতদের মেডিক্যাল পরীক্ষার পরেও মারধর করা হয়েছে। আদালতে পুলিশের পাঠানো নথিতে কোনও কিছু স্পষ্ট নয়। পুরোটাই সাজানো মামলা।” যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) ওজি পাল বলেন, “ওখানে তো পুলিশকে মারা হয়েছে। পুলিশের গাড়ি জ্বালানো হয়েছে।”

রামঘাটের জের। ১) বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে শিলিগুড়ি শহরে তৃণমূলের মিছিল।

২) রামঘাটের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। ৩) শিলিগুড়ি আদালত

চত্বরে প্রাক্তন কাউন্সিলর অমরনাথ সিংহ এবং ৪) কংগ্রেস নেতা রাজেশ যাদব। ছবিগুলি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।

এ দিন শিলিগুড়িতে ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব সংগঠন যুব লিগের কনভেনশনেও বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা না-করে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির চেষ্টা ও তার জেরে গোলমালের ঘটনার কড়া সমালোচনা করা হয়। কনভেনশনের পরে মিছিলও হয়। শহরের হাসমি চক এলাকায় তারা পথ অবরোধ করছে বলেও পুলিশ বাধা দেয়। চাকুলিয়ার ফব বিধায়ক ইমরান আলি রমজ (ভিক্টর)-সহ ৫ জন যুব নেতাকে গ্রেফতারও করে। পরে তাঁদের অবশ্য ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া হয়। এ দিনের ঘটনা ফরওয়ার্ড ব্লকের ঘোষিত কর্মসূচি ছিল। তার পরেও এই গ্রেফতারিতে ক্ষুব্ধ বাম নেতৃত্ব। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “আমাদের একজন ইমরান আছেন। পুলিশকে জানিয়ে মিছিল করার জন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ও দিকে একজন ইমরান আছেন। তিনি একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের এ রাজ্যে প্রতিষ্ঠাতা। সারদার টাকা সীমান্তের ওপারে মৌলবাদী-সন্ত্রাসবাদীদের পৌঁছে দিতে সাহায্য করার অভিযোগ আছে তাঁর নামে। তিনি এখনও বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।”

এ দিন সাত সকাল থেকেই এলাকা ছিল সুনসান। গুটিকয়েক পান, মুদির দোকান খুললেও খদ্দের খুবই কম। বড় রাস্তায় গাড়ি চলাফেরাও তেমন নেই। অনশন মঞ্চের সামনে ভিড় নেই। মঞ্চে বসে জনা দশেক মহিলা। শ্মশানের মূল ফটকের সামনে একদল ইন্ডিয়ান রির্জাভ ব্যাটেলিয়ন (আইআরবি) জওয়ান মোতায়েন।

দুপুরে বামফ্রন্টের এক প্রতিনিধি দল এলাকায় যান। তাঁরা পুলিশ কমিশনারেটে গিয়েও স্মারকলিপি দেন। পরে জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “পুলিশ বাড়ি ঢুকে শিশু, ছাত্রদেরও পিটিয়েছে। অথচ পুলিশের অপদার্থতার জন্যই ঘটনা ঘটেছে। আমরা এলাকার নাগরিক মঞ্চের পাশে থাকব। টানা অবস্থান এবং বন্ধ ডাকার কথাও চিন্তাভাবনা করছি।” বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন বসু’র দাবি, “সিপিএম যা করেছে, এখন তা তৃণমূল করছে। কয়েকজন পড়ুয়াকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় আমরা প্রতিবাদ করায় ছেড়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jail custody ramghat siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE