Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
অভিযোগ তৃণমূলের অন্দরেই

প্রার্থী বাছাইয়েও সক্রিয় সিন্ডিকেট

পুরভোটে দলের প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরকে ঘিরে গড়ে ওঠা ‘সিন্ডিকেট’ এর হাত রয়েছে বলে সন্দেহ গাঢ় হয়েছে দলের অন্দরেই। দলের এক শীর্ষ নেতার নামে ওই সিন্ডিকেট চক্র প্রতিটি দরপত্র প্রাপকদের কাছ থেকে মাসে বহু লক্ষ টাকা আদায় করেন বলেও অভিযোগ। তৃণমূলের অন্দরের খবর, সিন্ডিকেটের একটি গোষ্ঠী যাঁকে প্রার্থী করতে চাইছে, অন্যপক্ষ তাতে বাধা দিচ্ছে বলেই গোলমাল বেঁধেছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের কাছেও বেশ কিছু তথ্য পৌঁছেছে।

আদালতে তোলা হচ্ছে অভিযুক্ত ঠিকাদার উত্তম করকে। ছবি: দিব্যেন্দু দাস।

আদালতে তোলা হচ্ছে অভিযুক্ত ঠিকাদার উত্তম করকে। ছবি: দিব্যেন্দু দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৫ ০১:৫২
Share: Save:

পুরভোটে দলের প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরকে ঘিরে গড়ে ওঠা ‘সিন্ডিকেট’ এর হাত রয়েছে বলে সন্দেহ গাঢ় হয়েছে দলের অন্দরেই। দলের এক শীর্ষ নেতার নামে ওই সিন্ডিকেট চক্র প্রতিটি দরপত্র প্রাপকদের কাছ থেকে মাসে বহু লক্ষ টাকা আদায় করেন বলেও অভিযোগ। তৃণমূলের অন্দরের খবর, সিন্ডিকেটের একটি গোষ্ঠী যাঁকে প্রার্থী করতে চাইছে, অন্যপক্ষ তাতে বাধা দিচ্ছে বলেই গোলমাল বেঁধেছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের কাছেও বেশ কিছু তথ্য পৌঁছেছে।

পুলিশের একটি সূত্রের খবর, খুনের মামলায় অভিযুক্ত এক ব্যবসায়ী ইদানীং তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে ‘সিন্ডিকেট’ চালাচ্ছেন। ওই নেতার মদতে কোনও বিধির তোয়াক্কা না করে শহরে একটি মাছের বেআইনি পাইকারি বাজারও ওই ব্যবসায়ীর এক আত্মীয় চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ। প্রধাননগর এলাকার একাধিক সক্রিয় তৃণমূল কর্মীর অভিযোগ, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সামনেই একটি হোটেলে দীর্ঘদিন ধরে ‘সিন্ডিকেট’ চলছে। তা নিয়ে হইচই হওয়ায় পরে ওই চক্রটি এখন মহানন্দাপাড়ার পশু হাসপাতাল রোডের একটি হোটেলের সামনে সক্রিয় বলেও তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ। সম্প্রতি পুরভোটে প্রার্থী দেওয়া নিয়েও এই সিন্ডিকেট সক্রিয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এর পরেই গত শুক্রবার বিকেল থেকে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমালের সূত্রপাত হয়।

পুরভোটের মুখে দলের মধ্যে ‘সিন্ডিকেট’ চালানো ও তা নিয়ে সংঘর্ষের অভিযোগ ওঠায় নেতা কর্মীদের নিয়ে শনিবার বৈঠকে বসেছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দেব। এ দিন গৌতমবাবু বলেন, “দলের নেতাদের ডেকে খোঁজখবর করেছি। কোনও রকম অনিয়ম এবং অন্যায় প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। তবে প্রধাননগরের ঘটনায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই, বিজেপি পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালিয়েছে।”

দলীয় নেতাদের উপর হামলায় ঘটনায় দলেরই কর্মীদের গ্রেফতার হওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, “পুলিশ অভিযোগ মতো তদন্ত করে পদক্ষেপ করেছে। গ্রেফতারির বিষয় জানি না, তাই কিছু বলতে পারব না।” তিনি দাবি করেন, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কাজকর্ম নিয়ে কোনও সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।

তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমালের তদন্তে নেমে পুলিশের কাছেও ‘সিন্ডিকেট’ চালানোর ব্যাপারে কিছু তথ্য এসেছে। যেমন, দলেরই একাংশ পুলিশকে জানিয়েছে, বর্তমানে ই-টেন্ডারের মাধ্যমেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের যাবতীয় বরাত দেওয়া হয়। ই-টেন্ডার ব্যবস্থায় ঘরে বসেই কেউ আবেদন করতে পারলেও, দফতরে এসেই ফি জমা করতে হয়। ড্রাফটের মাধ্যমে সেই টাকা জমা করতে হয়। অভিযোগ, তৃণমূলের ছত্রছায়া থাকা ঠিকাদারদের একাংশ ফি জমা দেওয়ার দিন দফতরের বাইরে জড়ো হয়ে থাকে এবং পেশিশক্তির জেরে নিজেদের সিন্ডিকেটের সদস্য ছাড়া কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেয় না। এ ভাবেই বিভিন্ন কাজ সিন্ডিকেটের সদস্যদের হাতে চলে আসে বলে অভিযোগ। সেই কাজের টাকা সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে ভাগ হয়। এই ভাগের প্রক্রিয়া নিয়ে গোলমালের জেরেই শুক্রবার সংঘর্ষের সূত্রপাত বলে অভিযোগ।

সম্প্রতি ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পুরভোটে দলের টিকিট বিলি নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা ছিলই, এই পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেটের বখরা নিয়ে বচসার কারণেই হামলার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। অন্তত সাড়ে ৪ কোটি টাকার কাজের বরাত দেওয়ার পরেও সেই টাকা সিন্ডিকেটের মধ্যে ভাগ হয়নি বলে অভিযোগ। গত বৃহস্পতিবার প্রার্থী পদ নিয়ে দলের বৈঠকে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল হয়, সে সময়েও টাকা ভাগের প্রসঙ্গ ওঠে জানা গিয়েছে। টিকিট হাতছাড়া হওয়ার পরে ভাগের টাকা আদায় করতেই এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ।

শিলিগুড়ি পুলিশের এডিসিপি ভোলানাথ পান্ডে বলেন, “এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’পক্ষের মধ্যে আগে থেকেই গোলমাল ছিল। তদন্ত করে সমস্ত দিক খতিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

শুক্রবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি জংশনের একটি হোটেলে খাওয়ার সময়ে তৃণমূলের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি গোপাল সাহা এবং দলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা নেতা উৎসব দাশগুপ্তের উপর ধারাল অস্ত্র নিয়ে ১০-১২ জনের একটি দল হামলা চালায় বলে অভিযোগ। অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে রাতে প্রধাননগর থানার সামনে অবরোধ করে তৃণমূল কর্মীরা। অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ অশোক কামতি এবং সন্তোষ চৌরাশিয়া নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। দু’জনই শনিবার আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে নিজেদের তৃণমূল সমর্থক বলে দাবি করেছেন।

সন্তোষবাবুর অভিযোগ, তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার নাম করে তাঁদের কাছ থেকে মোটা টাকা দাবি করা করা হয়েছিল। সেই টাকা না দিলে সরকারি কাজের বরাত বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ।

এ দিকে, ধৃত ২ জনকে যখন আদালতে তোলা হয়েছে, সে সময়েই শিলিগুড়ি জার্নালিস্ট ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করেন শুক্রবারের হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত উত্তম কর নামে এক ঠিকাদার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “শুক্রবার বিকেলে তৃণমূলের ওয়ার্ড সভাপতি গোপালবাবু এবং তৃণমূলের এক শ্রমিক নেতা অস্ত্র দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন।”

হামলার অভিযোগে নাম থাকায় সাংবাদিক বৈঠক শেষ করে বের হওয়ার পরেই, পুলিশ উত্তমবাবুকে গ্রেফতার করে। তোলাবাজির প্রতিবাদ করাতেই মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হল বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অন্যদিকে, ৩ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূলের সভাপতি গোপালবাবুর দাবি, “যে সময় আমি টাকা চেয়েছি বলে অভিযোগ করা হয়েছে, সে সময় শিলিগুড়ির বাইরে ছিলাম। আমি ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে যুক্ত নই। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc candidate selection syndicate siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE