হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃতের স্ত্রী ও পুত্র। ছবি: সন্দীপ পাল।
বিচারাধীন বন্দির অস্বাভাবিক মৃত্যু হল জলপাইগুড়ি হাসপাতালের বন্দি সেলে। নরোত্তম গায়েন (৪৮) নামে ওই বন্দিকে মঙ্গলবার সকালে শৌচাগারে কাপড়ের ফাঁসে ঝুলতে দেখা যায়। তিনি বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, চিকিত্সার গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে নরোত্তমের। মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হতে পারেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। নরোত্তমবাবু গজলডোবার মিলনপল্লির বাসিন্দা ছিলেন।
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকার বলেন, “প্রাথমিকভাবে ওই বন্দি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে খবর পেয়েছি। পুলিশকে ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।” জেলা পুলিশের ডিএসপি প্রভাত চক্রবর্তী বলেন, “প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, তিনি কম্বলের চারপাশের কাপড় ছিড়ে দড়ি পাকিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শৌচাগারের ঘুলঘুলিতে ঝুলে পড়েন। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”
খবর পেয়ে দুপুরে হাসপাতালে যান মৃতের স্ত্রী ভারতীদেবী। তিনি বলেন, “উনি আত্মহত্যা করতে পারেন না। ওঁর চিকিত্সা ঠিকমত করা হয়নি। চিকিত্সার গাফিলতিতে মারা গিয়েছেন। আমি সুবিচার চেয়ে মানবাধিকার কমিশনের কাছে যাব।”
চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সুপার পার্থ দে বলেন, ‘‘গাফিলতির প্রশ্ন নেই। পেটে ও বুকে ব্যাথা নিয়ে ওই বন্দিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, তাঁর কিডনিতে পাথর রয়েছে। অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। সার্জেন ছাড়াও অন্য চিকিত্সকরা তাঁকে নিয়মিত দেখেছেন।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বধূ নির্যাতন এবং অপহরণের অভিযোগে গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর ভক্তিনগর থানার পুলিশ নরোত্তম গায়েনকে গ্রেফতার করে। ২০ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ছিলেন। ৮ জানুয়ারি তাঁর বুকে ব্যথা শুরু হলে তাঁকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মঙ্গলবার সকাল আটটা নাগাদ ওই বন্দি শৌচাগারে যান। আধঘণ্টা পরে দু’জন নার্স ওষুধ দিতে এসে তাঁকে না পেয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সেলের বাইরে প্রহরারত তিন পুলিশ কর্মীকে জানিয়ে চলে যান। এক পুলিশকর্মী শৌচাগারের কাছে গিয়ে বন্দিকে কয়েকবার ডেকে সাড়া না পেয়ে অন্যদের ডেকে আনেন। দরজা ভেঙে দেহটি উদ্ধার হয়।
বন্দির স্ত্রীর দাবি, সোমবার হাসপাতালে স্বামীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। তখন চিকিত্সা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর আরও দাবি, “কম্বলের কাপড় ছিড়ে দড়ি পাকালে পুলিশকর্মীরা কেন সেটা দেখলেন না? চিকিত্সার গাফিলতিকে আড়াল করার জন্য আত্মহত্যার যুক্তি সাজানো হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy