পাহাড়ের বিদ্যুত্ বিল নিয়ে বিদ্যুত্ বণ্টন কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকে কোনও সমাধানসূত্র না মিললে পাহাড়ে ৭২ ঘন্টা সাধারণ ধর্মঘট হবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। সোমবার দুপুরে দার্জিলিং থেকে ৩২ কিলোমিটার দূর গ্লেনর্বান এলাকায় ফের গ্রামীণ বিদ্যুত্ প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মোর্চা সভাপতি গুরুঙ্গ ওই হুমকি দেন। ঘটনাচক্রে সেই সময়েই দার্জিলিঙের জেলাশাসকের দফতরে বিদ্যুত্ বণ্টন কোম্পানির চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগমের সঙ্গে জিটিএ সদস্যদের বৈঠক হয়। বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করে আপাতত বন্ধ থেকে পিছিয়ে এল মোর্চা।
দীর্ঘ দিনের বকেয়া ছাড়াও ত্রুটিযুক্ত মিটারের জন্য বেশি বিল আসছে বলে সোমবার থেকে বণ্টন কোম্পানির দফতরগুলিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের কথা বলেছিল মোর্চা। ধর্মঘটে ভাল সাড়া না মেলায় তাও বিকেলের পর তাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। অফিসগুলিতে ৯০ শতাংশ হাজিরা ছাড়াও গ্রাহকদের বিলও জমা দিতে দেখা গিয়েছে। এ দিনের বৈঠকের পর দুই পক্ষই বৈঠক সন্তোষজনক হয়েছে বলে জানান। কিছুক্ষণের মধ্যেই তা মোর্চা সভাপতিকেও জানানো হয়।
জিটিএ সদস্য তথা মোর্চার সহকারি সম্পাদক জ্যোতিকুমার রাই বলেন, “বণ্টন কোম্পানির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক ভাল হয়েছে। জিটিএ চিফকে সব জানানো হয়েছে।” বৈঠকের পর আরেক জিটিএ সদস্য তথা মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি জানান, পাহাড়ের আন্দোলনের সময় যে বকেয়া বিল রয়েছে, তা নিয়ে এ দিন আলোচনা হয়নি। তা রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। পাহাড়ের জলবিদ্যুত্ প্রকল্পগুলিতে জিটিএ-র অংশীদারি রয়েছে। তা নিয়ে আলোচনার সময়েই বকেয়া বিল নিয়ে কথা হবে।
তিনি জানান, এ দিন ২০১১ সালের অগস্ট থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি অবধি সময়সামীর বিল নিয়ে বন্টন কোম্পানির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। বেশি বিলের সমস্যাগুলি আশা করছি, মিটে যাবে। প্রতিটি সংযোগ ধরে ধরে অভিযোগের বিষয়বস্তু দেখা হবে। লেট সারচার্জ ছাড় দেওয়া ছাড়াও যাঁদের মিটার খারাপ থাকায় আগে ঠিকঠাক বিল হয়নি। স্পট বিলিং চালু হতেই পুরানো বিল দেখানো শুরু হয়েছে। এতে বহু গ্রাহকের বিরাট অঙ্কের বিল সামনে এসেছে। সেই গ্রাহকদের এবার পাঁচ বছরে ৬০টি কিস্তিতে টাকা দেওয়ার সুযোগও থাকছে। আর আমরা এদিন বন্টন কোম্পানির দফতরগুলিতে খুব কড়াভাবে ধর্মঘট করিনি। আমরা এই বৈঠকে কী হয়, তা দেখে এগোতে চাইছিলাম।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন শুরুর পর থেকে মোর্চা সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। ২০১১ অবধি তা চলে। সেখানে বিভিন্ন কর, বিদ্যুত্ বিল, টেলিফোন বিল দেওয়া বন্ধ করা হয়। পাহাড়ের তিন মহকুমা মিলিয়ে সেই সময় বিদ্যুত্ বিলের পরিমাণ প্রায় ৮০ কোটি টাকা।
বিদ্যুত্ বণ্টন কোম্পানির চেয়ারম্যান বলেন, “সঠিক গ্রাহক পরিষেবা আমাদের প্রথম শর্ত। গ্রাহকদের যাতে সমস্যা না পোহাতে হয় তা দেখা হবে। প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিস্তিতে বকেয়া মেটানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সঠিক বিল যাতে আসে তা দেখতে অফিসারদের বলা হয়েছে।”
এরই মধ্যে বন্টন কোম্পানির স্পট বিলিং-এর কাজে নিযুক্ত কর্মীদের বেতন বাড়ানোর দাবিও তুলেছে মোর্চা। গত শনিবার থেকে ওই কর্মীরা ধর্মঘট শুরু করেছেন। এদিন নিগমের চেয়ারম্যান বলেছেন, “দ্রুত বৈঠকে বসে বিষয়টি দেখা হবে।” তবে ওই কর্মীদের ধর্মঘট প্রত্যাহার নিয়ে অবশ্য মোর্চার তরফে এদিন কিছুই জানানো হয়নি।
এদিন গ্লেনবার্নে বিমল গুরুঙ্গ বলেছেন, “পাহাড়ের জলবিদ্যুত্ প্রকল্প থেকে আমাদের যে টাকার অংশ পাওয়ার কথা, তা থেকেই সরকার বকেয়া টাকা কেটে নিতে পারে।” গুরুঙ্গ ওই এলাকায় ১৫ টি গ্রামের রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুত্ যোজনার শিলান্যাস করতে গিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy