একসময়ে ঘোড়ায় চেপে ‘ভিক্টোরিয়া ফলস’ দেখতে যেতেন পর্যটকেরা। দার্জিলিং থেকে ২ কিলোমিটার দূরে এই এলাকা থেকে পাহাড়ির ঝোরার ওপরে তৈরি সেতু থেকে ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পর্যটকরা পৌঁছতেন ভিক্টোরিয়া ফলসে। সেই ছবি এখন আর নেই। ছোট গাড়ি ভাড়া পাওয়া এখন সমস্যা নয়। তাই ঘোড়ায় চেপে যাওয়ার বাধ্যবাধকতাও নেই। তবু, পর্যটকদের ভিড় নেই ভিক্টোরিয়া ফলসে।
আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে কংক্রিটের সেতুটির পলেস্তারা খসতে শুরু করে। সেতু জুড়ে দেখা যায় অসংখ্য ফাটলও। নজরদারির অভাবে ঝোরার জলে মিশতে থাকে আবর্জনা। একসময়ের জমজমাট পর্যটন কেন্দ্রটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে বলে অভিযোগ। এখন বর্ষার মরশুম ছাড়া ঝোরায় জলও থাকে না বলে বাসিন্দাদের দাবি। তবে, শতাব্দী পুরোনো পর্যটন কেন্দ্রটিকে ফের প্রাণ ফেরাতে উদ্যোগ শুরু হয়েছে বলে জিটিএ-এর তরফে দাবি করা হয়েছে। শুক্রবার ভিক্টোরিয়া হিলস পরিদর্শনে গিয়েছিলেন জিটিএ-এর চিফ বিমল গুরুঙ্গ। সেতু এবং ঝোরা সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে বলে জিটিএ-এর তরফে জানানো হয়েছে। শুধু সংস্কার নয়, পুরোনো সেতুর পাশে একটি বিকল্পও সেতুও তৈরির পরিকল্পনার কথাও জানানো হয়েছে। জিটিএ-এর পর্যটন বিভাগের নির্বাহী অধিকর্তা সোলম ভূটিয়া বলেন, “ভিক্টোরিয়া ফলস এলাকা সংস্কার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে জন্য কত ব্যয় হবে তার সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। সেতু এবং ঝোরা সংস্কার ছাড়াও এলাকায় সৌন্দর্যায়ণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।”
১৯১২ সালে ভিক্টোরিয়া ঝোরার উপরে একটি কংক্রিটের সেতু তৈরি হয়। দার্জিলিং পুরসভার তৎকালীন বাস্তুতার জর্জ পেট্রিক রবার্টসন সেতু নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন বলে পুরসভার নথি থেকে জানা গিয়েছে। ১১০ ফুট লম্বা এই সেতুটির দু’প্রান্ত ছাড়া মাঝের অংশ কোনও স্তম্ভ নেই। অর্ধবৃত্তার একটি কংক্রিটের কাঠামোর উপর সেতুটি রয়েছে। শুধু পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কারণেই নয়, এলাকার কয়েকটি গ্রামের মধ্যেও যোগাযোগের মাধ্যম সেতুটি। বর্তমানে সেতুর নীচে ঝোরার জলের পরিবর্তে শুধুই জঞ্জাল আর আগাছা ভরে রয়েছে। আগাছায় ঝোরা ঢেকে যাওয়া, সেতু বেহাল হয়ে পড়ায় পর্যটকদের এই এলাকায় খুব একটা দেখা যায় না। জিটিএ সূত্রে জানানো হয়েছে, পুরোনো সেতুটিকে সংস্কার করে পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য তৈরি করা হবে। নতুন আরও একটি সেতু তৈরি করে, সেই সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে বলে পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে।
পুরোনো পর্যটন কেন্দ্রের পুনরুজ্জীবনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। ২০০৪ সালে বাসিন্দাদের নিয়ে এককটি কমিটিও তৈরি হয়। এ দিন জিটিএ-এর চিফের পরিদর্শনের সময় কমিটির সদস্যদের একাংশ নিজেদের দাবি জানান। ভিক্টোরিয়া ফলস প্রোটেকশন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক বিরমান সিংহ বিশ্বকর্মা বলেন, “একশো বছর আগে থেকেই এলাকাটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা বেহাল হয়ে পড়ে। জিটিএ নতুন সেতু তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে। দেখা যাক কী পদক্ষেপ হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy