Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ভাষা দিবসে বেড়া মুছে দেয় আবেগ

দেশভাগের পরে কাঁটাতারের বেড়া পড়েছে দুই বাংলার মাঝে। কিন্তু তাতে ম্লান হয়ে যায়নি পুরনো স্মৃতি, ভাষা-সংস্কৃতির ঐক্য। নিজের ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ ফেব্রুয়ারির স্মৃতি ভোলেনি বালুরঘাট।

অনুপরতন মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০৪
Share: Save:

দেশভাগের পরে কাঁটাতারের বেড়া পড়েছে দুই বাংলার মাঝে। কিন্তু তাতে ম্লান হয়ে যায়নি পুরনো স্মৃতি, ভাষা-সংস্কৃতির ঐক্য। নিজের ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ ফেব্রুয়ারির স্মৃতি ভোলেনি বালুরঘাট।

শহরের মানুষের শোভাযাত্রায় এখনও মুখরিত হয় আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের ভোর। হিলি সীমান্তে চেক পোস্টের জিরো পয়েন্টের মাটিতে প্রতি বারের মতো এ বারেও হবে নানা অনুষ্ঠান।

প্রতি বছরই এই দিনটিতে ভোর থেকে রাস্তায় নেমে পড়েন শহরের নবীন থেকে প্রবীণ সকলেই। কবি, সাহিত্যিক থেকে সংস্কৃতি কর্মী সকলেই থাকেন। শহর লাগোয়া হিলি সীমান্তও মুখর হয়ে ওঠে।

তাই মাতৃভাষা দিবসের দিনে ২১ ফেব্রুয়ারি পুরনো স্মৃতি, আবেগের টানে একজোট হতে তৈরি হচ্ছেন এপার-ওপার, দুই বাংলার মানুষ।

বালুরঘাট শহরে মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন কমিটির উদ্যোগে প্রভাতফেরি দিয়ে শুরু হচ্ছে দিনটি। সকাল ৮টায় দক্ষিণ দিনাজপুরের তিওড়ের উজ্জীবন সোসাইটি ও বাংলাদেশের হাকিমপুরের সংস্থা ‘সাপ্তাহিত আলোকিত সীমান্ত’-র উদ্যোগে হিলি আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের জিরো পয়েন্টে অনুষ্ঠিত হবে ভাষা দিবস। আয়োজক সংস্থার তরফে সংস্কৃতি-কর্মী সূরজ দাস বলেন, “শহিদ মিনারের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমালায় শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আলোচনাসভা, কবিতাপাঠ, আবৃত্তি, দেশাত্মবোধক গান। সব শেষে নৃত্য পরিবেশনা।”

গানে স্লোগানে দিনটিকে পালন করতে উদ্যোগী হচ্ছে বামপন্থী সংগঠনগুলিও। বিকেলে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রেস ক্লাবে কবিতা পাঠ ও আলোচনার মাধ্যমে দিনটিকে স্মরণ করবেন শহরের বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকেরা। সন্ধ্যায় সঙ্গীত শিল্পী শ্যামলী চক্রবর্তীর তান সরগম। বাংলাদেশ থেকে আলোচনাচক্রে যোগ দেবেন রবীন্দ্র গবেষক আখতারুদ্দিন মানিক, জেলা জজ আতিদুর রহমান, গায়ক বাসুদেব ঘোষ, তাপস দত্ত।

২০০০ সালে বালুরঘাটে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কমিটির উদ্যোগে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি উদ্যাপনের সূচনা হয়। সে সময়ে কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন কবি দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। ২০০২ সালে এই উপলক্ষে একটি কবিতা স্মরণিকা প্রকাশ হয়েছিল। তাতে লিখেছিলেন দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মৃণাল চক্রবর্তী, সুনীল খাঁ, পীযূষ ভট্টাচার্য, সঞ্জয় দত্ত প্রমুখ। সুনীলবাবু ও সঞ্জয়বাবু প্রয়াত হয়েছেন। তবে প্রবীণ সাহিত্যিক নির্মলেন্দু তালুকদার, দীপঙ্করবাবুদের ওই যাত্রা অব্যাহত। আজও বাংলাভাষার দাবিতে ফেলে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য পড়ুয়াদের সেই রক্তক্ষয়ী আন্দোলনকে স্মরণ করে এ দিন পদযাত্রার প্রথম সারিতে হাঁটবেন তাঁরা।

২১ ফেব্রুয়ারির কথা উঠলেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন শহরের তুহিনশুভ্র মণ্ডল, সূরজ দাসেদের মতো একঝাঁক তরুণ। তাঁদের কথায়, “ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্য রয়েছে বলেই ইউনেস্কো এই দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে’র স্বীকৃতি দিয়েছিল। আমাদের শিকড় এখনও বাংলাদেশে। আমাদের পূর্বপুরুষের চরণধুলি মাখা ওদেশের পথ ঘাট। তাই তো বাংলাদেশের স্বাধীনতার মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে সামিল হয়েছিলেন এ পারের মানুষ। হিলি সীমান্তের ফুটবল মাঠের শহিদ বেদি ওই স্মৃতি আজও জ্বলজ্বল করে আছে।”

অনুষ্ঠান যে শুধু এ পার বাংলার সীমানায় আটকে থাকবে, তা নয়। বাংলাদেশের মাটিতেও হাঁটবেন বালুরঘাটের মানুষ। বাংলাদেশের পদযাত্রায় গিয়ে হাঁটেন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছে ১৪৪ ধারা অমান্যের অজুহাতে পুলিশের গুলিতে নিহত বরকত, রফিক, সালাম, জবাবর, শফিক, শফিউরদের মতো ভাষা শহিদদের স্মৃতিতে পথে নামবে বালুরঘাট, এটাই যেন বার্তা বাসিন্দাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE