Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
হুড়া, ঝালদার পরে রঘুনাথপুর কলেজে এবিভিপি-র সাফল্য

সক্রিয় প্রশাসন, খুশি গেরুয়া শিবির

কলেজ নির্বাচন ঘিরে অভূতপূর্ব পুলিশি নিরাপত্তা দেখল রঘুনাথপুর। রাজ্যের অন্যত্র অনেক কলেজ নির্বাচন ঘিরেই সংঘর্ষ বেধেছে। হয়েছে গুলি-বোমার লড়াইও। পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর কিন্তু সে দিক থেকে ব্যতিক্রম।

পড়ুয়াদের পরিচয়পত্র খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে তবেই কলেজে ভোট দিতে ঢুকতে দিচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা। রঘুনাথপুর কলেজে।—নিজস্ব চিত্র

পড়ুয়াদের পরিচয়পত্র খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে তবেই কলেজে ভোট দিতে ঢুকতে দিচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা। রঘুনাথপুর কলেজে।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৩
Share: Save:

কলেজ নির্বাচন ঘিরে অভূতপূর্ব পুলিশি নিরাপত্তা দেখল রঘুনাথপুর। রাজ্যের অন্যত্র অনেক কলেজ নির্বাচন ঘিরেই সংঘর্ষ বেধেছে। হয়েছে গুলি-বোমার লড়াইও। পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর কিন্তু সে দিক থেকে ব্যতিক্রম। মঙ্গলবার রঘুনাথপুর কলেজ নির্বাচনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এবিভিপি-র মুখে অভিযোগ তো দূর অস্ত, বরং শোনা গিয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের নিরপেক্ষতার কথাই।

ফল ঘোষণার পরে এ দিন বিকেলে ‘সাফল্যের মিছিল’ শেষে রঘুনাথপুর থানায় টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে তাদের এক নেতাকে মারধরের অভিযোগ দায়ের করে বিজেপি। যদিও এবিভিপি এবং বিজেপি কর্মীদের মাইকে ঘোষণা করে বলতে শোনা গিয়েছে, “রঘুনাথপুর কলেজে সুষ্ঠভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে শুধুমাত্র পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকার জন্য।”

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কলেজ নির্বাচন ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘটে যাওয়া অশান্তির কথা মাথায় রেখেই রঘুনাথপুরে সুষ্ঠ নির্বাচন করানোটা কার্যত চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছিল প্রশাসন। তার শুরুটা হয়েছিল মনোনয়নপত্র তোলার প্রথম দিন থেকেই। সেই সময়ে টিএমসিপি এবং এবিভিপি সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটলেও পুলিশের হস্তক্ষেপে বাড়াবাড়ি হয়নি। কিন্তু, ভোট ঘিরে অশান্তির সম্ভবনা পুরো মাত্রাতেই ছিল। এ দিন নির্বাচনের সময় দেখা গেল, কলেজ জুড়ে রয়েছে ব্যাপক পুলিশি ব্যবস্থা। অশান্তি এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছিল র্যাফ-সহ প্রচুর পুলিশকর্মী। এ দিন রঘুনাথপুরে তিনশোরও পুলিশকর্মী মোতায়েন ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। আনা হয়েছিল জল কামানও।

এ দিন বেলা এগারোটা নাগাদ নির্বাচন শুরুর সময়ে কলেজে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে উপস্থিত রয়েছেন রঘুনাথপুরের এসডিপিও পিনাকী দত্ত, মহকুমা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অজয় সেনগুপ্ত। বাইরে বাহিনী নিয়ে রয়েছেন কাশীপুর, আদ্রা, নিতুড়িয়া ও রঘুনাথপুর থানার চার ওসি এবং রঘুনাথপুরের সিআই সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাঁওতালডিহির আইসি ত্রিগুণা রায়। ভোট চলাকালীন কয়েক বার কলেজে ঘুরে গিয়েছেন রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মিনাও। ঘটনা হল, বিগত বছরগুলিতে নির্বাচনের দিন কলেজ চত্বরে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করলেও ধারা অমান্য করে ছাত্র সংগঠনগুলির সদস্যদের জড়ো হওয়া আটকাতে সেই অর্থে কার্যকরী ভূমিকা নিতে দেখা যেত না পুলিশকর্মীদের।

এ বার কিন্তু চোখে পড়েছে ভিন্ন ছবি। কিছু বহিরাগত কলেজ গেটের সামনে জড়ো হলেই তাদের সরিয়ে দিচ্ছিল পুলিশ। নির্বাচনের ফল গণনার সময় কলেজের সামনে টিএমসিপি-র সমর্থকেরা ভিড় করলেও পুলিশকর্মীরা তাঁদের বারবারই সরিয়ে দিয়েছেন। এমনকী, পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের দলের নেতাদের কাছে অভিযোগ করতেও শোনা গেছে।

জেলার অন্যতম বড় কলেজ রঘুনাথপুরের গুরুত্ব শুধু ছাত্র সংসদের নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরাবরই এর প্রভাব পড়ে পুরসভা নির্বাচনে। কারণ, রঘুনাথপুর শহরের বেশিরভাগ ছাত্রই এই কলেজের পড়ুয়া। রঘুনাথপুরে পুরভোটও এ বছর। তাই আসন্ন ভোটের দিকে তাকিয়েই এই কলেজের ছাত্র সংসদ দখল ধরে রাখতে আসরে নেমেছিল তৃণমূল। সক্রিয় হয়েছিলেন বিজেপি-র স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও। দু’পক্ষের মরিয়া ভাবের ছবিটা এ দিন স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। ভোট চলাকালীন প্রায় পুরো সময়টাই রঘুনাথপুর শহরে জেলা পরিষদের সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতাদের নিয়ে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি। বাসস্ট্যান্ডের সামনে শিবির করে বসেছিলেন বিজেপি-র শহরের নেতা কর্মী থেকে শুরু করে জেলার একাধিক নেতাও।

দু’তরফে উত্তেজনাও ছিল তুঙ্গে। কিন্তু, সকাল থেকে দুপুর অবধি পর্যন্ত দুই দলের শিবিরের মধ্যে কার্যত ‘দেওয়াল’ তুলে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকায় বড় কোনও অশান্তি বাধেনি। কলেজের গেটে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে ছাত্রছাত্রীদের আই-কার্ড পরীক্ষা করে তবেই কলেজের ভিতরে ঢুকতে দিয়েছে পুলিশ। কার্ড না থাকলে সরাসরি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে, বহিরাগত কেউ কলেজে ঢুকে গোলমাল পাকাতে পারেনি। ভোট গণনার সময় বিজেপি-র এক কর্মীর উপরে টিএমসিপি সমর্থকেরা চড়াও হলেও লাঠি উঁচিয়ে পুলিশ সরিয়ে দিয়েছে সবাইকে। সমর কর্মকার নামের বিজেপি-র জেলা কমিটির ওই সদস্য অবশ্য এ দিন সন্ধ্যায় রঘুনাথপুর থানায় টিএমসিপির কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেও প্রকাশ্যে তাঁকে পুলিশের সমালোচনা করতে শোনা যায়নি।

বিজেপি-র রঘুনাথপুর শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর কর বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলেছিলাম পুলিশ-প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করলে রঘুনাথপুর কলেজে আমাদের ফল অন্য রকম হবে। রঘুনাথপুরে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা যে রাজ্যের অন্যান্য জেলার তুলনায় আলাদা, সেটা অস্বীকার করা যাচ্ছে না।” এবিভিপি-র রাজ্য সহ-সম্পাদক সুরজিৎ লাই বলেন, “বাঁকুড়ায় যদি পুলিশ রঘুনাথপুরের মতো দলতন্ত্রের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে পারতো, তা হলে ওই জেলার সমস্ত কলেজে প্রার্থী দিতে পারতাম আমরা।”

অশান্তির আশঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত রঘুনাথপুরে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হওয়ার কৃতিত্ব অবশ্য রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলিকেই দিচ্ছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী। তাঁর মন্তব্য, “এই ঘটনা সমস্ত রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের সাফল্য। পুলিশ-প্রশাসন শুধু নিজেদের দায়িত্ব পালন করে অনুঘটকের কাজ করেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

college vote raghunathpur college abvp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE