Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

শিল্প কোথায়, প্রশ্ন নিয়ে পথে

শিল্পের দাবি ফের উঠছে পুরুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে। শিল্পায়নের দাবিতে সিঙ্গুর থেকে শালবনি পর্যন্ত পদযাত্রা করে রাজ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তায় হাটছে বামেরা। বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে রঘুনাথপুরে ঘুরে দাঁড়াতে সেই শিল্পায়নকেই হাতিয়ার করতে চাইছে জেলা সিপিএম।

জনমত তৈরিতে সিপিএমের মিছিল।—নিজস্ব চিত্র

জনমত তৈরিতে সিপিএমের মিছিল।—নিজস্ব চিত্র

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:০৪
Share: Save:

শিল্পের দাবি ফের উঠছে পুরুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে।

শিল্পায়নের দাবিতে সিঙ্গুর থেকে শালবনি পর্যন্ত পদযাত্রা করে রাজ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তায় হাটছে বামেরা। বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে রঘুনাথপুরে ঘুরে দাঁড়াতে সেই শিল্পায়নকেই হাতিয়ার করতে চাইছে জেলা সিপিএম। বৃহস্পতিবার শিল্প চেয়ে সাঁওতালডিহি থেকে রঘুনাথপুর পর্যন্ত সাইকেল মিছিল করেছিল সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফ। শুক্রবার বিকেলে রঘুনাথপুর বিধানসভা এলাকার তিনটে ব্লকের কর্মীদের নিয়ে রঘুনাথপুর শহরে একই দাবিতে পথে নামল সিপিএম। কর্মসূচিতে উপস্থিত দলের রাজ্য কমিটির সদস্য প্রদীপ রায়ের অভিযোগ, ‘‘রঘুনাথপুর মহকুমায় বাম আমলেই শিল্পায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু, গত পাঁচ বছরে ওই প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করা দূর, বরং পিছিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। এলাকায় প্রকৃত শিল্পায়ন করতে একমাত্র বামেরাই পারে—জাঠা থেকে এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে।”

বাম শাসনে সিঙ্গুর, শালবনির সমসাময়িক সময়েই পুরুলিয়ায় শিল্পের মুখ রঘুনাথপুরে শুরু হয়েছিল শিল্প গড়ার প্রক্রিয়া। রঘুনাথপুর ১ ও নিতুড়িয়া ব্লক জুড়ে ভারী শিল্প গড়ার কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল। ২০০৭-২০০৮ সালে এই দুই ব্লকের সীমানায় এক দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প শুরু করে। অন্য দিকে রঘুনাথপুর ১ ও ২ ব্লকের একাংশে ইস্পাত, সিমেন্ট, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরিতে এগিয়ে এসেছিল তিনটি বেসরকারি শিল্পগোষ্ঠী। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডি পঞ্চায়েত এলাকায় রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ করে দিয়েছিল জয় বালাজি গোষ্ঠী ও শ্যাম স্টিলকে। দু’টি প্রকল্পেরই শিলান্যাস করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা-মৌতোড় পঞ্চায়েত এলাকায় কারখানা গড়তে জমি দেওয়া হয়েছিল আধুনিক গোষ্ঠীকে।

বাস্তবে জমি পেয়ে কিছুটা অংশে সীমানা প্রাচীর দেওয়া ও জমির একাংশ সমতল করা ছাড়া আর কিছু করেনি জয় বালাজি। শ্যাম স্টিল জমি ফেরতের কথা জানিয়েছে রাজ্য সরকারকে। জমি হাতে পেলেও আধুনিক গোষ্ঠী কারখানা নির্মাণের কোনও কাজ শুরুই করেনি। শিবরাত্রির সলতে হিসাবে রয়েছে ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ কারখানা। তবে, বিভিন্ন সময়ে জমি জট-সহ নানা সমস্যায় আটকে ওই প্রকল্পের কাজও চলছে ধীরগতিতে। সব মিলিয়ে আসানসোল শিল্পাঞ্চলের কাছে থাকা রঘুনাথপুরে শিল্পায়নের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও তা শেষ অবধি বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ, সেই সময় শিল্পায়নকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন এলাকার মানুষ। শিল্পায়ন ঠিকমতো হলে রঘুনাথপুরের অর্থনীতির চেহারাই বদলে যেত। তা না হওয়ায় পূর্বতন বাম-সরকারের প্রতি যেমন ক্ষোভ রয়েছে এলাকার মানুষের, তেমনই বর্তমান তৃণমূল সরকারও এখানে শিল্পের জন্য কিছুই করেনি বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। এমনকী, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বড় অংশও সে কথা একান্ত আলাপচারিতায় অস্বীকার করতে পারেন না।

আরও একটি বিধনসভা নির্বাচনের আগে শিল্পায়নের দাবিকে হাতিয়ার করে হারানো জমি ফেরত পেতে চাইছে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। সিঙ্গুরে গিয়ে শিল্পায়ন নিয়ে নির্দিষ্ট বার্তা দিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই সূত্র ধরেই রঘুনাথপুরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে শিল্প সম্ভবনাকে নষ্ট করার অভিযোগ তুলে হারানো জনসমর্থন ফিরিয়ে আনতে মাঠে নেমেছে স্থানীয় সিপিএম। দল সূত্রের খবর,এ দিন সকালে রঘুনাথপুর বিধানসভা এলাকার নিতুড়িয়া ও সাঁতুড়িতে ওই দাবিতে সাইকেল মিছিল হয়েছে। পরে রঘুনাথপুর শহরে হয়েছে কেন্দ্রীয় মিছিল। সিপিএমের দাবি, দলের প্রায় পাঁচশোর কর্মী সামিল হয়েছিলেন মিছিলে। বিকেলে শহরের মিনি প্লাজা এলাকায় সভাও করে সিপিএম। সেখানে স্লোগান ওঠে, ‘‘শিল্প চাই কাজ চাই-নতুন বাংলা গড়তে চাই’।

রঘুনাথপুর এলাকায় শিল্পই যে তাদের ভোট প্রচারের কেন্দ্রে থাকবে, এ দিন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলের নেতারা। প্রদীপবাবু নিজের বক্তব্যে রঘুনাথপুর শিল্প-বন্ধ্যা হয়ে পড়ার পিছনে তৃণমূলকে বিঁধেছেন। তাঁর দাবি, বাম আমলের শেষের দিকে এখানে শিল্পায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলি এগিয়ে এসেছিল বিনিয়োগ করতে। কিন্তু, সেই ধারাবাহিকতা পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে রাজ্যে পালাবদলের পরে। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘বাম আমলে রঘুনাথপুর এলাকায় অন্তত তিন হাজার একর জমি বিনা বাধায় অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। ডিভিসি এবং বেসরকারি সংস্থার কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে প্রতি সপ্তাহে প্রশাসনিক স্তরে মনিটারিং সভা হত। কিন্তু, আজ সংস্থাগুলি কেন তাদের প্রকল্প রূপায়ণে উদ্যোগী হচ্ছে না, তা নিয়ে কোনও হেলদোলই নেই তৃণমূল সরকারের। নিজেদের ভ্রান্ত শিল্পনীতির জন্যই যে রঘুনাথপুরে শিল্পের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে শাসকদল পুরোপুরি ব্যর্থ।’’

শিল্পায়ন নিয়ে সিপিএমের অভিযোগকে অবশ্য পাত্তা দিতে নারাজ স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রঘুনাথপুরে কিছু ভুলভাল সংস্থাকে ডেকে এনেছিল সিপিএম। তারা শিল্প গড়ার চেয়ে বেশি অগ্রহী ছিল স্বল্পমূল্যে জমি পেতে। জমি পাওয়ার পরে স্বভাবতই তারা কারখানা গড়েনি। তাই রঘুনাথপুরে শিল্প না হওয়ার দায় পুরোপুরি সিপিএমের উপরেই বর্তায়।”

এ কথা শুনে এক সিপিএম নেতার কটাক্ষ, ‘‘রঘুনাথপুরে যে শিল্প হয়নি, সে কথাটা অন্তত মেনে নিলেন বিধায়ক নিজেই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE