অভিযান চালিয়ে এই শিশুদের উদ্ধার করেছে চাইল্ডলাইন ও শ্রমদফতর। — নিজস্ব চিত্র।
মহকুমা প্রশাসনিক ভবনের নাকের ডগায় একটি চায়ের দোকান ওদের দিয়ে কাজ করাচ্ছিল। সোমবার বোলপুর শহরে যৌথ অভিযান চালিয়ে ওই দুই শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করল ‘চাইল্ড লাইন’ এবং শ্রম দফতরের প্রতিনিধিরা। একই দিনে স্থানীয় জামবুনি এলাকার একটি মুরগির দোকান থেকে আরও এক শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে অভিযুক্ত দুই দোকানদারকে সতর্ক করেছে প্রশাসন। তবে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ঠিক কী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে বিষয়েও আলোচনা করছে সংশ্লিষ্ট দফতর। ইতিমধ্যেই পরিবারের কাছে খবর পাঠিয়ে ওই তিন শিশুকে বীরভূম চাইল্ড লাইনের শান্তিনিকেতনের একটি হোমে রাখা হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার শিশু কল্যাণ কমিটির বৈঠকে আলোচনার পরে উদ্ধার হওয়া শিশুদের পঠনপাঠন এবং পুনর্বাসন নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। জেলা চাইল্ড লাইনের কাউন্সিলার মাধব সেনগুপ্ত বলেন, “ওই ঘটনায় বোলপুর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিয়ম মোতাবেক শ্রম দফতর শিশুদের চাইল্ড লাইনের হেফাজতে তুলে দিয়েছে। তাদের হোমে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার শিশু কল্যাণ সমিতির বৈঠকে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, ‘বীরভূম চাইল্ড লাইনে’র কাছে খবর ছিল, শহরের বেশ কিছু দোকানে শিশু শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয়েছে। সেই মতো চাইল্ড লাইন বোলপুরের সহ-শ্রম কমিশনার দফতরে যোগাযোগ করে। এ দিন দুপুরে তারা যৌথ অভিযানে নামে। প্রথমেই প্রতিনিধিরা বোলপুরের মহকুমা প্রশাসনিক দফতরের পাশে রাস্তার উপের থাকা একটি চায়ের দোকানে হানা দেন। বোলপুরের সহ-শ্রম কমিশনার তুহিনশুভ্র মজুমদার বলেন, “ওই দোকান থেকে বছর বারোর দুই শিশু মঙ্গল দাস এবং রাকেশ দাস কে উদ্ধার করা হয়। তাদের বাড়ি ভুবনডাঙায়। এর পরেই লাগোয়া একটি মুরগির দোকান থেকে বাসা পাড়ার আকাশ শেখ নামে এগারো বছরের এক শিশুকেও উদ্ধার করা হয়।’’ উদ্ধার হওয়া শিশুদের মধ্যে কেউ প্রাথমিকের গণ্ডি পার করেনি, কেউ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে গিয়েছে। কারও পারিবারিক কারণে অথবা কেউ আর্থিক কারণে দোকানের কাজে যোগ দিয়েছে বলে জানিয়েছে। তুহিনবাবুও জানান, আজ মঙ্গলবার শিশু কল্যাণ সমিতির বৈঠক আছে। ওই বৈঠকে উদ্ধার হওয়া শিশুদের পুনর্বাসন-সহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হবে। অভিযুক্ত দোকানদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা করা হবে।
শ্রম দফতর এবং চাইল্ড লাইন সূত্রের খবর, জেলার মধ্যে বোলপুর, রামপুরহাট এবং সদর শহর সিউড়ির একাধিক হাট, বাজারে শিশু শ্রমিকদের নানা কাজে লাগানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শিশুশ্রম বিরোধী আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর সাজা এবং জরিমানার বিষয়টি প্রচার করে এলাকায় জন সচেতনতা গড়ে তোলা এবং মানুষদের নিয়ে আলোচনা করার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে শ্রম দফতরের। তার আগে বিশেষ অভিযানে নেমে শিশুদের উদ্ধারের কাজে নেমেছে দফতর। এমনিতে, শিশু শ্রমিকদের নিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে, আলাদা ভাবে দু’ বছর কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে কারাদণ্ড এবং জরিমানা উভয়েরই শাস্তি বিধান রয়েছে। আর্থিক জরিমানার টাকা শিশু শ্রমিক পুনর্বাসন তহবিলে জমা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy