Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Prisoner

খুনের দায়ে যাবজ্জীবন, বেকসুর মুক্তি হাইকোর্টে

সোমবার তাঁদের বেকসুর ঘোষণা করে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নানুর শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

খুনের দায়ে তিন ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছিল বোলপুর আদালত। ওই তিন জনকে ব্যক্তিকে বেকসুর মুক্তি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবার তাঁদের বেকসুর ঘোষণা করে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চ। ওই তিন জনের আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল জানান, ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিতে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছে, খুনের ঘটনায় দায়ের হওয়া এফআইআরের সঙ্গে মৃতের স্ত্রীর সাক্ষ্যের কোনও মিল নেই।

কল্লোল জানান, ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিকেল তিনটে নাগাদ নানুর থানার পাতিসড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রভাত মেটের (৩৬) মৃতদেহ স্থানীয় একটি দিঘিতে ভাসতে দেখে যায়। তাঁর মাথায় ও শরীরের একাধিক জায়গায় ক্ষত ছিল। প্রভাত স্থানীয় পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজের জব-ওয়ার্কার ছিলেন। বিকেলে প্রভাতের ভাই বেণুকর মাঝি নানুর থানায় উত্তম ধীবর, দিলীপ ধীবর ও জগন্নাথ মেটের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি জানান, ওই দিন ভোর চারটে নাগাদ তাঁর দাদা গোয়ালে গরুকে খাবার দিতে বেরিয়েছিলেন। তার পর থেকে নিখোঁজ হন। বিকেলে দিঘি থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়।

বেণুকর এও দাবি করেন, তিনি অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট। টাকা ফেরত না পেয়ে ওই তিন জন তাঁর দাদাকে আগে মারধরও করেছিলেন। তিন দিন পরে পুলিশ উত্তমদের গ্রেফতার করে। পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের উপর ভিত্তি করে চার্জশিট জমা দেয়। বোলপুর আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে প্রভাতের স্ত্রী জানান, ঘটনার দিন সকাল সাতটায় জগন্নাথ তাঁর স্বামীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। সেই সময় দূরে দাঁড়িয়েছিলেন উত্তম ও দিলীপ। ২০১৬ সালে বোলপুর আদালতে ধৃতদের যাবজ্জীবন সাজা হয়। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আপিল মামলা দায়ের করেন ওই তিন জন।

আপিল মামলার শুনানিতে তাঁদের আইনজীবী জানান, মৃতের স্ত্রী যদি সকাল সাতটায় তাঁর স্বামীকে জগন্নাথের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে দেখেন, তা হলে এফআইআরে বা চার্জশিটে তার উল্লেখ ছিল না কেন। যে ছুরি দিয়ে খুন করে দেহটি জলে ফেলে দেওয়া হয়, সেই অস্ত্র খোলা জায়গায় পড়েছিল। দুই কনস্টেবলের উপস্থিতিতে তদন্তকারী অফিসার তা উদ্ধার করেন। উদ্ধারের সময় অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়নি। অস্ত্র কোথায় রাখা রয়েছে, সেই ব্যাপারে অভিযুক্তদের বয়ানও নথিভুক্ত করা হয়নি। অভিযুক্তদের আইনজীবীর প্রশ্ন ছিল, উত্তমরা টাকা ফেরত না পেয়ে বেণুকরের বদলে প্রভাতকে মারধর করবেন কেন, তার কোনও ব্যাখ্যা তদন্তকারী দেননি।

সরকারি কৌঁসুলি বিনয় পান্ডা আদালতে জানান, পুলিশ পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের উপর ভিত্তি করেই চার্জশিট পেশ করেছিল। নিম্ন আদালতও তার ভিত্তিতে সাজা দেয়।

স্থানীয় সূত্রের খবর, উত্তম জেলে যাওয়ার ৬ মাস পরে তাঁর স্ত্রী রাই স্বামীর শোকে মারা যান। তাঁর তিন নাবালক ছেলে। রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা-মা। দিলীপ ধীবর উত্তমের দাদা। তার স্ত্রী ভাগ্যমনি ও দুই মেয়ে রয়েছেন। অন্য অভিযুক্ত জগবন্ধু মেটের দুই মেয়ে ও এক নাবালক ছেলে। এই জগবন্ধুরই খুড়তুতো ভাই ছিলেন নিহত প্রভাত। এ দিন বিকেল পর্যন্ত তিন জনের বাড়ির লোকেরা বেকসুর মুক্তির খবর জানতেন না। শুনে কেঁদে ফেলেন অনেকেই। উত্তম ও দিলীপের বাবা শিবু ধীবর বলেন, ‘‘এই দিনটার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। ওদের তিন জনকেই ফাঁসানো হয়েছিল। মামলার খরচ চালাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছি। কিন্তু, জানতাম সুবিচার পাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Prisoner Lifer High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE