Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নির্বাচনী তথ্য পেতে জঙ্গলে বসছে ৪৮টি মোবাইল টাওয়ার

শাসকদল দাবি করছেন, জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা আর নেই। জঙ্গলমহল এখন হাসছে। কিন্তু যদি কিছু ঘটে যায়, এই দুর্ভাবনায় এখনও ওই সব এলাকায় নির্বাচন পরিচালনা করা প্রশাসনের কাছে সমান চ্যালেঞ্জই রয়ে গিয়েছে।

সমীর দত্ত
বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০২:৩৯
Share: Save:

শাসকদল দাবি করছেন, জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা আর নেই। জঙ্গলমহল এখন হাসছে। কিন্তু যদি কিছু ঘটে যায়, এই দুর্ভাবনায় এখনও ওই সব এলাকায় নির্বাচন পরিচালনা করা প্রশাসনের কাছে সমান চ্যালেঞ্জই রয়ে গিয়েছে। তাই নির্বাচন সুষ্ঠ ভাবে পরিচালনা করতে পুরুলিয়ার মাওবাদী প্রভাবিত বলে চিহ্নিত ন’টি থানা এলাকায় মোবাইল ফোনের সংযোগ ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে ৪৮টি বিটিএস (টাওয়ার) বসানো হচ্ছে। তার মধ্যে বেশ কয়েকটির সংযোগ সরাসরি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে হওয়ার কথা। প্রশাসন সূত্রে খবর, নির্বাচনী তথ্য পেতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই সব ক’টি টাওয়ার বসানো এবং সংযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন এলেই ওই সব থানা এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বজায় রাখা জেলা প্রশাসনের কর্তাদের বরাবর মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠে। বছরের অন্য সময় যে ভাবেই চলুক, নির্বাচনের সময় অতি দ্রুত তথ্য আদান প্রদান করতে হয়। জেলার অন্য অংশে দ্রুত তথ্য লেনদেন হয়ে থাকলেও প্রশাসনিক কর্তাদের অভিজ্ঞতা, জঙ্গলমহলের বেশ কিছু অংশ থেকে তথ্য পেতে বেশ দেরি হয়। তার কারণ ওই এলাকায় অনেকখানি অংশে মোবাইলের নেটওয়ার্ক ঠিকমতো নেই। পাহাড়-জঙ্গলে নেটওয়ার্কের সমস্যা হয়। ফলে ওই এলাকার তথ্য জেলা প্রশাসন বা নির্বাতন কমিশনের কাছে যেতে এবং সেখান থেকে কোনও নির্দেশ জঙ্গলমহলের ওই সব এলাকার আধিকারিকদের কাছে সময়ে পৌঁছানো মুশকিল হয়ে পড়ে।

পুরুলিয়া জেলা টেলিকমের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘বান্দোয়ান, বরাবাজার, বোরো, বলরামপুর, আড়শা, বাঘমুণ্ডি, জয়পুর, ঝালদা ও কোটশিলা এই ন’টি থানা মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা বলে চিহ্নিত রয়েছে। এই থানা এলাকার কিছু কিছু এলাকা উঁচু পাহাড় ও জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। সমতল এলাকায় আকাশ পথে বাধা না থাকায় টাওয়ারের সিগন্যাল অনেকদূর যেতে পারে। কিন্তু এই সব এলাকায় সিগন্যাল বেশি দূর যেতে পারে না। তাই আরও বেশি মোবাইল টাওয়ারের প্রয়োজন। বান্দোয়ানের বিডিও অমলেন্দু সমাদ্দার বলেন, ‘‘বান্দোয়ান ব্লক এলাকার বেশ কিছু অংশে ফোনের সিগন্যাল পাওয়া যায় না। ওই সব এলাকাকে আমরা ‘শ্যাডো জোন’ বলে থাকি। ওই সব জায়গায় নতুন টাওয়ার বসানো হয়ে গেলে আশা করি নির্বাচনের সময় তথ্য আদান প্রদানে কোনও সমস্যা হবে না।’’

বান্দোয়ানের উদলবনি, মধুবন, গঙ্গামান্না, মা কপালি, কুচিয়া, গুড়পানা প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা, তাঁদের এলাকার বেশ কিছু অংশে বিএসএনএলের নেটওয়ার্ক নেই। কোথাও কখনও সখনও সিগন্যাল এলেও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। কিছুক্ষণ কথা বলার পর হঠাৎ সংযোগ কেটে যায়। আবার পাশেই ঝাড়খণ্ড সীমানা থাকায় সেখানকার মোবাইল সংযোগ ঢুকে পড়ায় রোমিং বাবদ বাড়তি খরচ হয়ে যায়। ওই সব এলাকায় বেসরকারি কিছু মোবাইল সংস্থা টাওয়ার বসালেও অভিযোগ সেগুলিও ঠিকঠাক কাজ করে না। বান্দোয়ানের ওসি রানা ভগত বলেন, ‘‘বেশিরভাগ দিন এলাকায় ফোনের সংযোগ থাকে না। বেশ সমস্যা হয়। এই টাওয়ারগুলো চালু হয়ে গেলে আশা করছি সমস্যা হবে না।’’

একইরকম সমস্যা রয়েছে বোরো থানার বাঁকুড়া জেলা সীমানা লাগোয়া এলাকায়। কালাপাতি এলাকায় দূর্বল সিগন্যাল থাকায় ফোন সংযোগ মেলে না। বরাবাজারের রায়ডি, বেড়াদা, ঘাটবেড়া-কেরোয়া এবং পাহাড় লাগোয়া এলাকার গ্রামগুলিতেও সিগন্যালের একই সমস্যা রয়েছে। জেলা টেলিকম দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কোন কোন এলাকায় সিগন্যাল মেলে না আমরা তার সমীক্ষা করেছি। যেখানে টাওয়ার বসালে বেশিদূর সিগন্যাল যেতে পারে, এমন বেশ কয়েকটি জায়গা আমরা বাছাই করেছি।’’ বিএসএনএলের জেলা টেলিকম আধিকারিক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরুলিয়া জেলায় মাও প্রভাবিত ন’টি থানা এলাকায় ৪৮টি টাওয়ার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি টাওয়ার তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। একটি সংস্থা টাওয়ার বসানোর কাজ করছে। ১২টি টাওয়ার সরাসরি স্যাটেলাইটে মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে।

এতদিন তাহলে নির্বাচনী তথ্য আদান প্রদানের কাজ কী ভাবে হত?

মাওবাদী প্রভাবিত ব্লকের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কোন কোন বুথ থেকে সরাসরি ব্লকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না আমরা আগেই সেগুলির তালিকা তৈরি করে নিতাম। ওই সব এলাকা আলাদা ভাবে চিহ্নিত করে ওই এলাকার বুথের তথ্য আদান প্রদানের জন্য স্পেশ্যাল ম্যাসেঞ্জার বা মোটরবাইকের ব্যবস্থা রাখা হতো। প্রিসাইডিং অফিসার আমাদের নিয়োজিত স্পেশ্যাল ম্যাসেঞ্জারকে তথ্য দিতেন। যেখান থেকে মোবাইলের সংযোগ মেলে সেই বুথ বা সেক্টর অফিসে গিয়ে স্পেশ্যাল ম্যাসেঞ্জার তথ্য দিতেন। সেখান থেকে আমরা তথ্য সংগ্রহ করতাম।’’ মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার আধিকারিকদের একাংশ বলছেন, নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কাজ শুরু হলেও প্রশাসনিক এবং বাসিন্দাদের দৈনন্দিন কাজেও মোবাইল ব্যবস্থার উন্নতি কাজে লাগবে। অর্থনৈতিক বিকাশেও সহায়ক হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mobile phone tower election election commission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE