Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শ্রীনিকেতনে মাঘমেলা, বিশেষ আকর্ষণ প্রদর্শনী

মাঘমেলাতে বিভিন্ন গ্রামের মানুষ নিয়ে আসেন তাঁদের উৎপাদিত আনাজ। সেগুলি স্থান পায় প্রদর্শনীতে। যাঁরা আনাজ দেন এবং যাঁরা দেখতে আসেন, দু’পক্ষেরই প্রদর্শনী নিয়ে উত্তেজনার শেষ থাকে না। মেলায় বিশাল লাউ দেখে অবাক হন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিবের (উচ্চশিক্ষা) হাতেও তুলে নেন তিনি।

পরখ: মাঘমেলায় বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব আর সুব্রহ্মণ্যম। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

পরখ: মাঘমেলায় বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব আর সুব্রহ্মণ্যম। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪১
Share: Save:

৯৭তম শ্রীনিকেতন বার্ষিক উৎসবের সূচনা হল বুধবার। বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য মেনে ফ্রেস্কো প্রাঙ্গণে বুধবার সকালে বার্ষিক উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। শ্রীনিকেতন বার্ষিক উৎসব স্থানীয়দের কাছে শ্রীনিকেতন মেলা বা মাঘমেলা হিসেবে পরিচিত। এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ হল প্রদর্শনী। এ বছর এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব (উচ্চশিক্ষা) আর সুব্রহ্মণ্যম। ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সহ অন্য আধিকারিক, অধ্যাপক, কর্মী ও পড়ুয়ারা। স্টল বিতরণ ও ভাড়া সংগ্রহ তত্ত্বাবধায়ক অতনুকুমার সিংহ জানান, ছোট-বড় মিলে এ বছরের মাঘমেলায় প্রায় ১২৫টি স্টল রয়েছে।

মাঘমেলাতে বিভিন্ন গ্রামের মানুষ নিয়ে আসেন তাঁদের উৎপাদিত আনাজ। সেগুলি স্থান পায় প্রদর্শনীতে। যাঁরা আনাজ দেন এবং যাঁরা দেখতে আসেন, দু’পক্ষেরই প্রদর্শনী নিয়ে উত্তেজনার শেষ থাকে না। মেলায় বিশাল লাউ দেখে অবাক হন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিবের (উচ্চশিক্ষা) হাতেও তুলে নেন তিনি। হাসিমুখে ছবিও তোলেন। কুমোরদের মাটির ফুলের টব বানানো দেখেও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য বিশ্বভারতীর কাজ করার বিষয়টিও প্রশংসিত হয়েছে। আর সুব্রহ্মণ্যম বলেন, ‘‘আমরা চাই প্রতিটি সংস্থা গ্রাম নিয়ে কাজ করুক। বিশ্বভারতী সেই কাজ করছে। ১০৬টি গ্রাম নিয়ে বিশ্বভারতী কাজ করে চলেছে। এটা ভাল বিষয়।’’

২০১৮ সালের ২৫ মে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসে বিশ্বভারতীর আচার্য তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশ্বভারতীর অধীনে থাকা ৫০টি গ্রাম নিয়ে কাজ করার প্রশংসা করেছিলেন। বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিশ্বভারতীর অধীনে আরও গ্রাম এনে সংখ্যাটা ১০০ থেকে ২০০ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও ৫৬টি গ্রাম দত্তক নেয় বিশ্বভারতী। জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগ এই গ্রামগুলির দেখভাল করছে। এই বিভাগের পড়ুয়া অভিজিৎ মেটে, বুদ্ধদেব বিশ্বাসদের কথায়, ‘‘আমরাও বিভিন্ন ভাবে অনুপ্রাণিত হচ্ছি। গ্রাম নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে বাড়ছে আমাদের মধ্যে।’’

এ দিন দুপুরে জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগের আয়োজনে ‘ব্রতী ও যুব সমাবেশ’ হয় শ্রীনিকেতন খেলার মাঠে। প্রতি বছর বার্ষিক উৎসব উদ্বোধনের দিনেই এই সমাবেশ হয়। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা যায়, ১৯২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই গ্রামোন্নয়ন পরিকল্পনার একটি অঙ্গ হিসেবেই ব্রতী সংগঠন গড়ে উঠেছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনুভব করেছিলেন শিশুদের মাধ্যমে যে কাজের সূচনা হয়, তা সহজেই সর্বসাধারণ গ্রাহ্য হয়। এই উদ্দেশ্য সামনে রেখেই তৈরি হয় ‘ব্রতীদল’। ছোটবেলা থেকে গ্রামের ছেলেমেয়েদের দেহ-মন এমন ভাবে গড়ে তোলা হত, যাতে ভবিষ্যতে তারা সমাজসেবার দায়িত্ব নিতে পারে। ব্রতীদল সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘আশ্রমে ব্রতীবালক সম্প্রদায় গড়া হয়েছে। নিকটবর্তী পাড়ায় ব্রতী সম্প্রদায় স্থাপন করে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে চারিদিকের পাড়ায় কাজ আমাদের ভাল করে চালাতে হবে। এই ব্রতীকৃত্য শিক্ষা আমাদের অন্য কোনও শিক্ষার চেয়ে কম গুরুতর নয়।’

জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান সুজিতকুমার পাল ও কর্মী শুভেন্দুকুমার গুহ জানান, এ বছর বিশ্বভারতীর দত্তক নেওয়া ১৫টি গ্রামের ১৯টি ব্রতীদলের ৩৮০ জন বালক-বালিকা এবং ৩৮ জন ব্রতী কর্মী চূড়ান্ত পর্যায়ে যোগ দেন। পাঁচ দিনের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরও হয়। ব্রতীদল বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন শরীরচর্চা, মানসচর্চা, সমাজসেবা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পাতা সংগ্রহ, দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশ, হস্তশিল্পের কাজ করে থাকে। এর উপরে ভিত্তি করে পুরস্কারও দেওয়া হয়।

এ দিন খালি হাতের ব্যায়াম, ধীর ব্যায়াম, পতাকা ড্রিল, ভঙ্গীগীতি সহ একাধিক ক্রীড়ার প্রদর্শন করে ব্রতী বালক ও বালিকারা। রায়বেঁশে ও জিমন্যাস্টিক্সও প্রদর্শিত হয়।

প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ব্রতীন্দ্রমোহন সেন, সভাপতি ছিলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। ব্রতী কর্মীদেরও স্মারক প্রদান করা হয়। শ্রীনিকেতন বার্ষিক উৎসবের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ আজও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shantiniketan Sriniketan Utsav Exhibition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE