Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পাখির জালে হনু জড়িয়ে ধুন্ধুমার

ভেবেছিলেন কোনও পাখ-পাখালির মৃত্যু হয়েছে। সেই সাতসকালে ছাদের উপর কিচিরমিচির। সেই শব্দে ঘুম ভেঙে হতবাক দুবরাজপুরের চৌধুরী পরিবার! কিন্তু, পাখি কই— এ যে হনুর ছানা!

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ১৩:০০
Share: Save:

ভেবেছিলেন কোনও পাখ-পাখালির মৃত্যু হয়েছে। সেই সাতসকালে ছাদের উপর কিচিরমিচির। সেই শব্দে ঘুম ভেঙে হতবাক দুবরাজপুরের চৌধুরী পরিবার!

কিন্তু, পাখি কই— এ যে হনুর ছানা!

জালে আটকে সারারাত ছটফটিয়ে ক্লান্ত শিশু হনুমানটি। চুপটি করে জালের মাঝে বসে। মিটিমিটি চেয়ে রয়েছে মায়ের দিকে। গোটা ছাদে তাকে ঘিরে এক ডজন বীর হনুমান। ভোরবেলায় ফুল গাছে জল দেওয়ার কথা ভুলে ভয়ে দরজা বন্ধ করে দেন চৌধুরী পরিবারের বড় বৌ মৌসুমীদেবী। তাঁর ডাকেই চিলেকোঠায় হাজির সকলে। খবর ছড়িয়ে পড়ে চৌধুরী পরিবারকে ঘিরে গোটা লালবাজার এলাকাতেই। খবর যায় বনদফতরেও।

ছাদে জাল এল কোথা থেকে?

‘‘ফুলগাছ বাঁচানোর জন্য পাখিদের ঠেকাতে জাল লাগানো হয়েছিল। দরজা খুলে দেখি, সেই জালেই ছোট্ট হনুমান আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়েছে। তাকে ঘিরেই মা হনুমান-সহ পুরো দল। উফ! ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করলেও হনুমানগুলোর উৎকন্ঠা টের পাচ্ছিলাম। দরজা ফাঁক করে দেখি সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড’’, বলছিলেন মৌসুমীদেবী।

মৌসুমীদেবীর কাছে বিষযটি জানার পর পরিবারের বাকি সদস্যরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু এত হনুমানের সামনে ওই শিশু হনুটিকে মুক্ত করার সাহস তাঁরা দেখাননি। মৌসুমীদেবীর দেওর অনিন্দ্যবাবু বাইরে বেরিয়ে খবর দেন স্থানীয় ক্লাবের সদস্যদের, বন দফতরকে। বেলা যত বাড়ে হনুমানের দাপাদাপিতে অতঙ্কিত হয়ে পড়েন পড়শিরা। জানলার ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে সকলের চোখ ছাদের উপর। কাউকে না কামড় দেয়!

তবে বনদফতর আসার আগেই স্থানীয় যুবকেরা দুটি দলে ভাগ হয়ে ছাদে ওঠেন। একদল হনুমান শিশুটিকে ছাড়ানোর জন্য। অন্য দল তাঁদেরকে হনুমানের দলের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে। কাজ হয় তাতেই।

জাল কেটে বাড়িতে হনুমান শিশুটিকে নিয়ে এসে তার গলায় হাত পায়ে আটকে থাকা জালের সুতো কেটে মুক্ত করেন তাঁরা। স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘‘যতক্ষণ এই পর্ব চলছে জানালার বাইরে থেকে সতর্ক নজর রেখেছিল মা হনুমান ও দলের অন্য সদস্যরা। শিশুটিকে ছাড়তেই একলাফে এসে তাকে নিয়ে যায় মা হনুমান। নিশ্চিন্ত হয় দলের অন্য সদস্যরা।’’ উদ্ধারের খবর পেয়ে মাঝপথেই ফেরৎ যান বনকর্মীরা।

শিশু হনুমান মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার পরে হাঁফ ছাড়েন চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘খুব হয়েছে, ভবিষ্যতে গাছ বাঁচাতে আর কখনও ছাদে জাল পাতব না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Monkey Trapped
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE