Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

কী ভাবে ‘নির্মল গ্রাম’, শিখলেন প্রতিনিধিরা

শৌচাগার বানানো সোজা। কিন্তু, কাউকে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করার বহু দিনের অভ্যাস ছাড়িয়ে ওই শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা ঢের কঠিন। এই কঠিন কাজটাই সহজে করে দেখাল পিছিয়ে পড়া জেলার এক পিছিয়ে পড়া ব্লক— খয়রাশোল। কী ভাবে তা সম্ভব হল, সেটাই বৃহস্পতিবার হাতেকলমে দেখে গেল বিহারের একটি প্রতিনিধি দল।

খয়রাশোল পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রতিনিধিরা। —নিজস্ব চিত্র।

খয়রাশোল পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রতিনিধিরা। —নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০১:২১
Share: Save:

শৌচাগার বানানো সোজা। কিন্তু, কাউকে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করার বহু দিনের অভ্যাস ছাড়িয়ে ওই শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা ঢের কঠিন।

এই কঠিন কাজটাই সহজে করে দেখাল পিছিয়ে পড়া জেলার এক পিছিয়ে পড়া ব্লক— খয়রাশোল। কী ভাবে তা সম্ভব হল, সেটাই বৃহস্পতিবার হাতেকলমে দেখে গেল বিহারের একটি প্রতিনিধি দল। সেই দলের সঙ্গী ছিলেন বিশ্ব ব্যঙ্কের কয়েক জন প্রতিনিধিও। বিহারের প্রতিনিধিদলটিতে ছিলেন রাজ্যের যুগ্ম সচিব, মুখ্য নির্বাহি বাস্তুকার, সাতটি জেলার সমন্বায়ক, এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এবং নির্বাচিত সাত গ্রাম প্রধান-সহ আরও অনেকেই।

কোন পথে এগোলো খয়রাশোল, প্রথমে সেই নিয়ে ব্লকেই একপ্রস্থ আলোচনা। পরে এলাকায় ঘুরে দেখা, কেমন হয়েছে শৌচাগারগুলি। মানুষকে বোঝানোর বিভিন্ন কৌশল— যথা বাউল গান, পুতুলনাচের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি দেখা এবং ফিরে এসে ফের একপ্রস্থ আলোচনা। এই ছিল ওই প্রতিনিধি দলের সারা দিনের কার্যকলাপ। বিকেলের আলোচনায় তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বীরভূমের অতিরিক্ত জেলাশাসক (‌জেলা পরিষদ) বিধান রায়। দিনের শেষে প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা স্পষ্টই জানালেন, খয়রাশোলের সাফল্য তাঁদের অনুপ্রাণিত করেছে।

প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই ‘নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত’ পুরস্কার পাওয়া খয়রাশোল গ্রাম পঞ্চায়েত ঘুরে গিয়েছিলেন বিশ্ব ব্যাঙ্কের দুই প্রতিনিধি। বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরের আধিকারিক, জনপ্রতিনিধি, স্বনির্ভর দলের সদস্য এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোক জন সামিল করে একটি দল হিসাবে কাজ করে তাঁরা যে ভাবে সাফল্য পেয়েছেন, তা উদ্বুদ্ধ করেছিল বিশ্ব ব্যাঙ্কের দুই প্রতিনিধিকে। তখনই তাঁরা সিন্ধান্ত নেন রাজ্যের একমাত্র নির্মল জেলা নদিয়ার পাশাপাশি খয়রাশোলে এনে এখানকার ছবিটা দেখাবেন বিহারের একটি প্রতিনিধি দলকে। সেই দলই এসে ঘুরে দেখলেন খয়রাশোল গ্রাম পঞ্চায়েত।

‘নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত’ হতে পারে এমন ২১টি পঞ্চায়েতকে বেছে নিয়ে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল জেলা প্রশাসন। সেই তালিকাতেই ছিল খয়রাশোল পঞ্চায়েতও। জেলা প্রশাসন সঙ্গে বার্তাও একটি দিয়েছিল। বাড়িতে বাড়িতে শৌচাগার বানানোই একমাত্র লক্ষ্য নয়। মূল লক্ষ্য উন্মুক্ত জায়গায় মলত্যাগ আটকানো। যাতে যত্রতত্র ত্যাগ করা মল জলে মিশে দূষণ না ছড়ায়। এবং মশা মাছি থেকে জীবাণুবাহিত রোগে আক্রান্ত না হন। সেটাকেই মূল মন্ত্র করে এগিয়েছিল খয়রাশোল ব্লকের খয়রাশোল গ্রাম পঞ্চায়েত।

পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, শৌচাগার বানানোর পাশাপাশি তা ব্যবহারের সুবিধা এবং অব্যবহারে কুফল কী কী— দু’টি বিষয় নিয়েই প্রচার চলছে নিরন্তর। কখনও মানব পুতুল নাচের মাধ্যেমে, কখনও বাউল গানের মাধ্যমে, কখনও বা এলাকায় গিয়ে শৌচাগার বিষয়ক সচেতনতা শিবির। থিয়োরির পাশাপাশি এলাকাবাসীর অভ্যাস বদলাতে প্র্যাকটিকালও করছিল ‘টিম খয়রাশোল’। খোলা জায়গায় বা পুকুর পাড়ে কেউ যাতে মলত্যাগ না করেন, সেটা দেখতে পাহারা দেওয়ার কর্মসূচিতে সামিল হয়েছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান ভূপেন্দ্রনাথ ঘোষ, বিডিও তারকনাথ চন্দ্র, যুগ্ম বিডিও অভিষেক মিশ্র, পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী অসীমা ধীবর এবং ব্লক ও পঞ্চায়েতের বিভিন্ন আধিকারিক-কর্মী, মহিলা স্বনির্ভর দলের সদস্যেরাও।

বস্তুত, বিহারের ওই প্রতিনিধি দলকে নিয়ে এ দিনের আলোচনায় উঠে এল সেই দিকগুলিই। সমস্যা এলে সমাধান কোন পথে, তা-ও জানলেন প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা। পরে মুখ্য নির্বাহী বাস্তুকার ডি পি সিংহ বললেন, ‘‘আমাদের রাজ্যেও আমরা শৌচাগার বানিয়েছি, বানাচ্ছি। কিন্তু, অভ্যাস বদলে এঁরা কোন পথে হেঁটেছেন, সেটা জানলাম। নিজের চোখেও দেখলাম। আমরা উপকৃত। তবে, শুধু শেখাই নয়। আমরা মতের আদান-প্রদান করতেও এসেছিলাম।’’ এর ফলে ‘নির্মল বিহার অভিযানে’ আরও শক্তিশালী এবং কার্যকর পদক্ষেপ করা যাবে বলে তাঁর বিশ্বাস।

সব দেখে শুনে প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মধ্যে থাকা পঞ্চায়েত প্রধান (যাঁদের হাতেই মূল দায়িত্ব) রাজেশকুমার তিওয়ারি, পঙ্কজ কুমার এবং সঞ্জয়কুমার সিংহরাও একই রকম উৎসাহিত বলছেন, ‘‘এখন অনেকেই দামি গাড়ি বা ভাল বাড়ি ব্যবহার করেন। অথচ বাড়িতে শৌচাগার বানাননি। অথবা তা ব্যবহার করেন না। খয়রাশোল বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে, সেগুলো আমাদের ওখানেও কাজে লাগবে।’’ বিহারের প্রতিনিধি দলকে খয়রাশোল ঘুরিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন বিশ্ব ব্যাঙ্কের দুই প্রতিনিধি অক্ষয় কাশ্যপ এবং বিভা জেনেরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE