চার হাত এক হল। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি
ফেসবুক, হোয়্যাটস অ্যাপে রোমান হরফে বাংলাই ছিল দু’জনের ‘কথাবার্তার’ একমাত্র উপায়। কথা বলা বা শোনার জন্য মোবাইল
ফোন যে কাজে লাগে না তাঁদের! কিন্তু, মনের ভাষা বুঝতে সমস্যা হয়নি দু’জনের। সেই ভাষাই মিলিয়ে দিল তাঁদের।
একে অন্যের ছবিতে দিতেন একের পর এক ‘লাইক’। ফেসবুকের আলাপ যে প্রেমে বদলেছে, তা টের পেয়ে দেরি করেননি কেউ। ঠিক করেন, ঘর বাঁধবেন। দুই পরিবারও চেয়েছিল চার হাত এক হোক। মঙ্গলবার বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন ছত্তীসগঢ়ের বিলাসপুরের শুভেন্দুচন্দ্র সাহা আর বীরভূমের আমোদপুর লাগোয়া ঈশ্বরপুরের তুলসী শর্মা। হাজার কিলোমিটার দূরে থাকলেও দু’জনের মিল এক জায়গায়। বছর উনত্রিশের শুভেন্দু আর তাঁর চেয়ে বছর তিনেকের ছোট তুলসী— দু’জনেই জন্ম থেকে মূক-বধির।
মাস সাতেক আগে ফেসবুকে আলাপ হয় শুভেন্দু, তুলসীর। বিলাসপুরে মা-বাবা, ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন শুভেন্দু। বিএ পাশ করে মুদিখানা খোলেন তিনি। তাঁর ভাই অভেন্দুচন্দ্র সাহা স্থানীয় একটি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন তুলসী। তিন ভাই-বোন। দিদি দূর্বার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তুলসী মেজ। ভাই অজয় বাবা গুরুপদবাবুর সঙ্গে ঝালাই কারখানা সামলান। মাস চারেক আগে নিজেদের বাড়িতে নিজেদের ইচ্ছার কথা জানান শুভেন্দু, তুলসী। আলাপ-পরিচয় শুরু হয় দুই পরিবারের। জুলাইয়ে মা-বাবার সঙ্গে আমোদপুরে আসেন শুভেন্দু। এর পরে তুলসীর পরিজনেরা যান বিলাসপুরে। ওই তরুণীর জামাইবাবু প্রশান্ত শীল, শুভেন্দুর ভাই অভেন্দু জানান, সব কথা জেনে দু’জনের বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়।
মঙ্গলবার আমোদপুরের একটি অনুষ্ঠান ভবনে হয়ে গেল বিয়ে। ছিলেন শুভেন্দুর বাবা সুভাষচন্দ্র সাহা। কন্যা সম্প্রদানের পরে গুরুপদবাবু বলেন, ‘‘যখনই বুঝলাম ওরা একে অন্যকে সত্যিই ভালবাসে, তখন আর বিয়ে নিয়ে দু’বার ভাবিনি। মূক-বধির হলেও তাতে দু’জনের সম্পর্কে কোনও অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না।’’ সমস্যা যে হয় না, তা পর্দায় দেখিয়েছিলেন জয়া ভাদু়ড়ি আর সঞ্জীব কুমার। ‘কোশিশ’ ছবিতে। সেই ছবি জানিয়েছিল, মনের টানের কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কিছুই নয়। বিয়েতে ভিড় জমে দুই পরিবারের আত্মীয়, বন্ধু, পড়শিদের। তপন হাজরা, পারিজাত শীল, সুব্রত দে-র মতো নিমন্ত্রিতরা বলেন, ‘‘এমন শুভ অনুষ্ঠানে সামিল হতে পেরে খুব খুশি হয়েছি।’’ যাঁদের নিয়ে এত আয়োজন তাঁরা কী বললেন? শুভেন্দু, তুলসীর চোখের ভাষাই বলে দিচ্ছিল, এই দিনের জন্যই তাঁরা অপেক্ষায় ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy