Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
বোলপুরে ফাটল রেললাইনে

গামছা হাতে যুবকদের দৌড় বাঁচিয়ে দিল ট্রেন

হাতে লাল রঙের গামছা। রেল লাইনের দু’ধারে প্রাণপণে ছুটে চলেছেন তাঁরা। দূর থেকে তা দেখতে পেয়ে এমার্জেন্সি ব্রেক কষে ট্রেন থামালেন চালক।রেল লাইনে ফাটল দেখে সোমবার সকালে এ ভাবেই রেলকে দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচালেন ওই তিন যুবক। বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ লুপলাইনে বোলপুর ও প্রান্তিক স্টেশনের মাঝে আপ লাইনে ওই ফাটলটি ধরা পড়ে।

 এ ভাবেই থামিয়েছি রেল, দেখাচ্ছেন তিন যুবক। সেই ফাটল। নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই থামিয়েছি রেল, দেখাচ্ছেন তিন যুবক। সেই ফাটল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:২৫
Share: Save:

হাতে লাল রঙের গামছা। রেল লাইনের দু’ধারে প্রাণপণে ছুটে চলেছেন তাঁরা। দূর থেকে তা দেখতে পেয়ে এমার্জেন্সি ব্রেক কষে ট্রেন থামালেন চালক।

রেল লাইনে ফাটল দেখে সোমবার সকালে এ ভাবেই রেলকে দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচালেন ওই তিন যুবক। বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ লুপলাইনে বোলপুর ও প্রান্তিক স্টেশনের মাঝে আপ লাইনে ওই ফাটলটি ধরা পড়ে। ব্রেক কষলেও বর্ধমান-বরহরবা প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ইঞ্জিন ও একটি কামরা ওই ফাটল পেরিয়ে গিয়েছিল। তার এক ঘণ্টা পরেই ওই লাইন দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল আপ গণদেবতা এক্সপ্রেসের। ফাটল মেরামত করে মিনিট পনেরো পরে স্বাভাবিক হয় ট্রেন চলাচল।

এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ স্থানীয় সুরশ্রী পল্লি লাগোয়া ওই লাইন পেরোতে গিয়ে ফাটলটি নজরে পড়ে এলাকার যুবক বিষ্ণু তুড়ির। তখন বোলপুর স্টেশন থেকে সবে ছেড়েছে বর্ধমান-বরহরবা প্যাসেঞ্জার। পেশায় রিকশা চালক বছর একুশের বিষ্ণুর কথায়, ‘‘হালেই কানপুর রেল দুর্ঘটনার কথা শুনেছিলাম। তাই বিপদ বুঝে দেরি না করে বন্ধু সুব্রত (বাগদি) আর প্রকাশকে (দাস) ডেকে আনি।’’ সুব্রত ছুটে গিয়ে বাড়ি থেকে লাল গামছা আর রুমাল নিয়ে আসেন। পেশায় রাজমিস্ত্রি বছর ছাব্বিশের সুব্রত বলেন, ‘‘লাইনের ধারে বড় হয়েছি। বহু বার দেখেছি, লাইনে কাজের সময়ে কর্মীরা লাল ঝান্ডা নিয়ে ঘোরেন। তাই লাল কাপড় নিয়ে আসি।’’ পাড়ায় ঘটনার কথা জানিয়েই বোলপুরের দিকে লাইনের দু’ধার দিয়ে গাছের ডাল, লাল গামছা ও রুমাল হাতের উপরে তুলে ছুট লাগান ওই তিন যুবক।

পেশায় কলমিস্ত্রি বছর তিরিশের প্রকাশ বলেন, ‘‘বিদ্যুতে চলা বর্ধমান- বরহরবা রেলপুল পেরোতে না পেরোতে গতি বাড়িয়ে নেয়। ফাটলের আগে সেই ট্রেন থামানোর জন্য আমরা পাথর ভরা লাইনে যতটা দ্রুত সম্ভব আপ্রাণ দৌড়েছি।’’ তাঁদের দেখে চালক ব্রেক কষলেও ইঞ্জিন ও প্রথম কামরা ওই ফাটল পেরোনোর পরে ট্রেনটি থামে।

ঘটনার কথা চাউর হতেই রেল লাইনের ধারে ভিড় জমান সুরশ্রী পল্লির বাসিন্দারা। লাল গামছা দেখেও কেন ফাটলের আগে ট্রেন থামাতে পারলেন না, তা নিয়ে কেউ কেউ চালককে প্রশ্নও করেন। ওই তিন যুবককে ধন্যবাদ জানিয়ে ঘটনার কথা বোলপুর ও প্রান্তিক স্টেশন কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন চালক। স্থানীয় বাসিন্দা সুমনা হাজরা, সুনীতা সাহানিরা বলছেন, ‘‘পাড়ার ওই ছেলেরা যদি ফাটলের কথা না জানাত, কী যে বিপদ ঘটত ভেবেই কুল পাচ্ছি না!’’ প্রাথমিক ভাবে মেরামত করে রেল চলাচল স্বাভাবিক করা হলেও দুপুরে ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় ওই অংশ তুলে ফের নতুন অংশ জুড়ে দেওয়া হয়।

রেল সূত্রের খবর, শীতে তাপমাত্রা একটু বেশি ওঠানামা করায় সাধারণত লাইনে সঙ্কোচন হয়। রেল লাইনের ইস্পাতে তাপমাত্রার পরিবর্তনে প্রতিক্রিয়া হয়। তাপমাত্রার সঙ্গে সঙ্গে রেলের ইস্পাতের মধ্যেও সঙ্কোচন ও প্রসারণ হয়। লাইনের মধ্যে কোনও ভাবে বাতাসের বুদবুদ থেকে গেলে ভাঙন ধরে সেখান থেকেই। এ বার তার উপর দিয়ে দ্রুতগতির ট্রেন গেলে সেই ফাটল থেকে লাইন ভেঙে আলাদা হয়ে যায়। বহু ক্ষেত্রেই এই সূক্ষ্ম চিড় দুর্ঘটনার কারণ হয়। পাঁচ বছর আগে কালকা মেলে দুর্ঘটনার পিছনেও ছিল লাইনে চিড়। প্রাথমিক তদন্তের পরে বোলপুরের স্টেশন ম্যানেজার প্রণবকুমার সিংহ বলেন, “শীতে তাপমাত্রার হেরফেরে ওই ফাটল তৈরি হয়ে থাকতে পারে। তা প্রযুক্তিগত কোনও ত্রুটির ফল নয়।’’ শীতের শুরুতে লাইন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মমাফিক পরীক্ষা করা হয়। রেল লাইনের আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষাও হয়। ওই লাইনের নজরদারিতে কর্তব্যরত কর্মীদের কোনও গাফিলতি রয়েছে কিনা, তা দেখবে রেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

crack train young men
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE