নিহত কর্মীর মায়ের কাছে যুব তৃণমূল সভাপতি। ছবি: সুজিত মাহাতো
নিহত তৃণমূল কর্মীর পুঞ্চার বাড়িতে গিয়ে পরিজনদের সমবেদনা জানালেন যুব তৃণমূল সভাপতি তথা পুরুলিয়ায় দলের পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার দুপুরে পাড়ুই গ্রামে আততায়ীর গুলিতে নিহত পিন্টু সিংহের মা রেণুকা সিংহের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন তিনি। পরিবারটির যাতে স্থায়ী ভাবে আর্থিক সুরাহা হয়, সে ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে যান অভিষেক। পরে তিনি পুঞ্চার কিসানমান্ডিতে দলীয় কর্মীদের নিয়ে একটি ছোট্ট সভা করেন। সেখানে পিন্টুকে খুনের জন্য তিনি বিজেপি ও সিপিএমকে দায়ী বলে অভিযোগ তোলেন।
বুধবার ভোরে বাড়ির উঠোনে আততায়ীর গুলিতে জখম হন বছর আটত্রিশের অবিবাহিত যুবক পিন্টু। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে সেই রাতেই অস্ত্রোপচার করে গুলি বার করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে সেখানেই তিনি মারা যান। ওই ঘটনায় পুলিশ নিহতের পাড়ারই দুই যুবককে গ্রেফতার করেন। মৃত্যুর পরেই শুক্রবার তৃণমূল নেতৃত্ব পিন্টুর খুনের পিছনে বিজেপিকেই দায়ী করেছিল।
এ দিন অবশ্য অভিষেক পুঞ্চায় দাবি করেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড থেকে বিজেপি লোকজন নিয়ে আসছে। তাদের দোসর হয়েছে সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। তারাই খুন করেছে। কেউ যদি ভাবে ছাড়া পাবে তাহলে ভুল। আমি এই বিষয়টি নিয়ে লেগে থাকব। আমরা প্রশাসন ও আদালতের কাছে দাবি করব, হয় দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হোক, না হলে ফাঁসি দিতে হবে।’’ তিনি জানান, ২০১১-তে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে। তারপর দু’বছর পরে পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। কিন্তু, তখন এমন খুনোখুনি হয়নি। তিনি জানান, পিন্টু খুনে জড়িত অভিযোগে যাঁরা গ্রেফতার হয়েছে, তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
অভিষেকের কটাক্ষ, ‘‘এই জেলায় বিজেপি কয়েকটি পঞ্চায়েত পেয়ে ভাবছে, আগামী দিনে যেন তারা বাংলার ক্ষমতায় আসছে। এখানে ওই কালো দিন আর ফিরিয়ে আনতে দেব না। পুরুলিয়াকে আর অশান্ত হতে দেব না। কেউ ছাড় পাবে না। আমি কথা দিচ্ছি, নিজে এই বিষয়টিতে লেগে থাকব।’’ দলের কিছু কর্মী কালো ব্যাজ পরে এসেছিলেন। ব্যাজে লেখা ছিল, ‘পিন্টু সিংহের হত্যাকারীদের শাস্তি চাই। বিজেপি ও সিপিএমের ষড়যন্ত্র।’
এই প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের পরে বলরামপুরে অস্বাভাবিক মৃত্যু হওয়া দুই বিজেপি কর্মীর নামও টেনেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘যে কোনও হত্যাই বেদনাদায়ক, দুঃখজনক। সে ত্রিলোচন মাহাতোই হোক, দুলাল কুমার হোক, বা পিন্টু সিংহ হোক। আমরা চাই সকল দোষীর সাজা হোক।’’
এ দিন দুপুর তিনটের পরে অভিষেক পাড়ুই গ্রামে যান। তিনি বাড়িতে ঢুকে পিন্টুর দাদা বাবলু সিংহ ও মা রেণুকাদেবীর সঙ্গে কথা বলেন। কোন দিক দিয়ে আততায়ীরা এসেছিল, তারপর কী হয়েছিল, সব জানতে চান। পরে বাবলু বলেন, ‘‘অভিষেক আমাদের জানিয়েছেন, তিনি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের পাশে রয়েছেন। তিনি আর্থিক সাহায্য করে গিয়েছেন। স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।’’
অভিষেকের সঙ্গে এ দিন সেখানে ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, কিছু বিধায়ক প্রমুখ।
জেলা বিজেপি সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘অভিষেক বলছেন জেলাকে অশান্ত হতে দেবেন না। কিন্তু, তিনিই বিজেপির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাঁর দলের কর্মীদের তাতিয়ে ফের এই জেলাকে অশান্ত করছেন। রাজনীতি করার জন্যই তিনি এখন আমাদের কর্মী দুলাল কুমার ও ত্রিলোচন মাহাতোর নাম নিয়েছেন। তাঁদের পরিবারগুলির প্রতি সত্যিকারের সমবেদনা থাকলে তিনি বলরামপুরে গিয়ে দেখা করতেন।’’
এসএসকেএম-এ পিন্টুর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে অবহেলা করা হয়েছে অভিযোগ তুলে এ দিন সকালে পাড়ুই গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ পুলিশকে আটকে দেন। তাঁরা দাবি করেন, তখনই সবাই উদ্যোগী হলে পিন্টু আরও ভাল চিকিৎসা পেতেন। পরে পুঞ্চার বাসিন্দা তথা জেলা সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও পুলিশ তাঁদের বোঝানোর পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy