Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বাসস্ট্যান্ডে মৃত্যু লোহা কুড়োতে গিয়ে

সোমবার বিষ্ণুপুর পুরসভা ভারী যন্ত্র দিয়ে রাবিশ ফেলার কাজ করছিল। সেখান থেকে লোহার টুকরো কুড়িয়ে নিতে অনেকে জড়ো হয়েছিলেন।

এখানেই: রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে দুর্ঘটনাস্থল। নিজস্ব চিত্র

এখানেই: রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে দুর্ঘটনাস্থল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২১
Share: Save:

পাঁচ মাস আগে বিয়ে হয়েছিল। বিষ্ণুপুরের রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে ছিল দোকান। সেই আয়েই কোনও মতে সংসার চলত। সংস্কারের জন্য সেই দোকান ভাঙা পড়েছে রবিবার। সোমবার বিষ্ণুপুরের যুবক উল্কা দাস বাউড়ি (২৩) গিয়েছিলেন বাসস্ট্যান্ডে জমতে থাকা রাবিশ থেকে বাতিল লোহালক্কড় কুড়িয়ে আনতে। হঠাৎ একটি দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হল তাঁর। ঘটনায় জখম হয়েছেন আরও দু’জন।

রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড সংস্কারের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছিল রবিবার। দ্বিতীয় দিনেই এই দুর্ঘটনা ঘটায় তা বন্ধ রাখা হয়েছে। কেন ওই জায়গা ঘিরে রেখে কাজ করা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শহরের বাসিন্দাদের একাংশ।

সোমবার বিষ্ণুপুর পুরসভা ভারী যন্ত্র দিয়ে রাবিশ ফেলার কাজ করছিল। সেখান থেকে লোহার টুকরো কুড়িয়ে নিতে অনেকে জড়ো হয়েছিলেন। সকাল থেকেই ঝিরঝির করে বৃষ্টি হচ্ছিল। তারই মধ্যে বেলা ১১টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা জানান, একটি দোকানঘর ভাঙার সময়ে দেওয়াল চাপা পড়েন তিন জন। আহত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, উল্কা দাস বাউড়ি (২৩) নামে জখম এক যুবককে মৃত অবস্থাতেই নিয়ে আসা হয়েছে। আহত কিশোর রাজেশ বাউড়ি এবং যুবক ডালিম খাদিমকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়।

উল্কা দাস বাউড়ি।

উল্কা এবং রাজেশের বাড়ি বিষ্ণুপুর শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের দর্জিগোড়া পাড়ায়। ডালিম বিষ্ণুপুর থানার বেলিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা। এ দিন দুপুরে উল্কার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, পড়শিরা ভিড় করেছিলেন। পাঁচ মাস আগে বিয়ে হয়েছিল ওই যুবকের। এ দিন স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকে পাথর হয়ে ছিলেন উল্কার স্ত্রী বেহুলা বাউড়ি। ঘনঘন সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন মা আল্পনা বাউড়ি। উল্কার বাবা রবি বাউড়ি বলেন, ‘‘ছোট্ট মণিহারি দোকান ছিল। বাপ-বেটায় মিলে চালাতাম। সেটা যাওয়ার পরে তুর্কির মাঠে অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ডেও একটা দোকান পাতার তোড়জোড় করছিলাম। ছেলেটা কেন যে গেল লোহা কুড়োতে!’’ এলাকার বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলছেন, কাজ চলাকালীন প্রশাসন কেন ওই জায়গা ঘিরে রাখার বন্দোবস্ত করল না?

এই ঘটনার পরে বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়ও বলছেন, ‘‘জায়গাটা না ঘিরে কাজ করা ঠিক হয়নি। আসলে এমনটা হবে আমরা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। এখন কাজ বন্ধ থাকবে। প্রশাসন নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্ত বন্দোবস্ত করলে ফের শুরু হবে।’’ এ দিন তিনি উল্কার বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিজনদের সমবেদনা জানিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, পুরসভা জানালে আগেই নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হতো। এর পরে পুলিশ এবং সিভিক ভল্যান্টিয়ার মোতায়েন করা হবে ওই এলাকায়। কাজের সময়ে যাতে কেউ কাছাকাছি না যেতে পারেন সেই ব্যবস্থাও করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Busstand Death Rasikganj Bus stand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE