তালিকা: সিউড়ির একটি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্রে। নিজস্ব চিত্র
ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়— এই চেনা কথাটাই মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রমাণ করে ছেড়েছে রামপুরহাট। নকলের চেষ্টা থেকে হলে গোলমাল, মাধ্যমিকের রামপুরহাটে এমন ছবি অহরহ দেখা যেত। এ নিয়ে এত দিন পুলিশ, প্রশাসনের উপরে ক্ষোভ ছিল এলাকার অনেকের। তাঁরা চাইছিলেন, পুলিশ-প্রশাসন কিছু করে দেখাক। দিনের শেষে ফলাফল বলছে, এ বারের মাধ্যমিক থেকে সেই চেনা প্লট পাল্টাতে শুরু করল। আগামী কাল, মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক। সেখানেও কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকবে বলে জানিয়ে রাখছে পুলিশ, প্রশাসন।
রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও) মিতুনকুমার দে জানান, জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশ মেনে নির্বিঘ্নে মাধ্যমিক পরীক্ষা-পর্ব শেষ করতে একাধিকবার প্রতিটি থানায় বৈঠক করা হয়েছিল। স্পর্শকাতর কেন্দ্রে বিশেষ নজরদারির জন্য ২০০ জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। কিছু হলেই কন্ট্রোল রুমে জানাতে বলা হয়েছিল। তাতেই সাফল্য মিলেছে বলে জানাচ্ছেন এসডিপিও। তাঁর কথায়, ‘‘এ ছাড়াও শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী সর্বোপরি অভিভাবক এবং মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা নিয়ম মেনে পরীক্ষা দিয়ে কাজটা সহজ করে দিয়েছেন।’’ মাধ্যমিক পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা আহ্বায়ক প্রবাল সামন্ত বলেন, ‘‘প্রতিটি পরীক্ষা ভাল ভাবে শেষ হোক, আমরা এটাই চাই। এ বছর শিক্ষকদের নিরলস চেষ্টা থেকে পুলিশ, প্রশাসনের সহযোগিতায় সব নির্বিঘ্নে হয়েছে।’’
বাইরে থেকে টুকলির জোগান দিতে স্কুলভবনের জানালা ও পাইপ বেয়ে উঠছে যুবক। অনেকটা ‘স্পাইডারম্যান’এর মতো। তার পরে নির্দিষ্ট স্থানে টুকলি পৌঁছে চকিতে নেমে পড়া। এ ছবির সাক্ষী থেকেছেন অনেকেই। স্কুলের পাঁচিলের ধারে দাঁড়িয়ে টুকলির জোগান দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে পুকুরের জলে ঝাঁপ দিতেও দেখা দিয়েছে টুকলির জোগানদারদের। নলহাটির থানার একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে স্কুলভবনের পাশের বাঁশবন থেকে কঞ্চিতে করে জানালায় জানালায় টুকলি পৌঁছে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি সেই বিশেষ ধরনের কঞ্চি টুকলির জোগানদাররা এলাকাবাসীর কাছে কিনে নিতেন, এমন অভিযোগও রয়েছে। শিক্ষা দফতর থেকে সেই সেন্টার বাতিল করা হয়েছে বছর দু’য়েক আগেই। বছরখানেক আগে মাড়গ্রাম থানার একটি কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার্থী উত্তরপত্র নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে, এমন অভিযোগও ওঠে। মুরারই থানার একটি কেন্দ্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। বছর দু’য়েক আগে নলহাটি থানার একটি কেন্দ্রে টুকলিতে বাধা দেওয়ার জন্য পরীক্ষার শেষ দিন এক শিক্ষিকাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। রামপুরহাট শহরের একটি স্কুল থেকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাইরেও চলে আসার ঘটনাও ঘটেছে। পরীক্ষা শেষে রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় একাধিক স্কুলে টুকলিতে বাধা দেওয়ার জন্য স্কুলের পাখা, চেয়ার, টেবিল ভাঙচুরও হয়েছে।
এ বার সেই ছবি অনেকটাই পাল্টেছে বলে সব পক্ষের মত। তার জন্য পুলিশ, প্রশাসনের প্রস্তুতিকেই কুর্নিশ করেছেন সকলে। শুরু থেকেই এ বার কোমর বেঁধে নেমেছিল প্রশাসন। এ বছর রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় ৪৯টি পরীক্ষাকেন্দ্রের মধ্যে ১৯টি পরীক্ষাকেন্দ্রকে স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। রামপুরহাট মহকুমাশাসক থেকে পুলিশ, দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা বারবার বৈঠক করেছেন। তারই ফল ফলল— বলছে সব পক্ষই।
এখন নতুন উদ্যোমে পরীক্ষা কেবল উচ্চমাধ্যমিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy