প্রতীকী চিত্র।
বকেয়া না-মিটলেও আলোচনায় বরফ গলল। ফের পরিষেবা দিতে রাজি হলেন নিশ্চয়যান চালকেরা। দু’দিন বন্ধ থাকার পরে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই পরিষেবা দেওয়ার আশ্বাস মিলেছে।
আট মাস ধরে বকেয়া টাকা না মেলায় মঙ্গলবার থেকে জেলা জুড়ে নিশ্চয়যান পরিষেবা বন্ধ রেখেছিল অ্যাম্বুল্যান্স অপারেটর ইউনিয়নের বীরভূম শাখা। তার জেরে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছিলেন সন্তানসম্ভবা মহিলা, প্রসূতি ও এক বছর পর্যন্ত অসুস্থ শিশু ও তাদের পরিবার।
পরিস্থিতি সামাল দিতে উদ্যোগী হন বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) হিমাদ্রি আড়ি। বৃহস্পতিবার নিশ্চয়যান চালক ও মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। সেখানেই নিশ্চয়যান চালকদের কাছে আর্জি জানান, সাধারণ মানুষের কথা ভেবে পরিষেবা শুরু করুন। বকেয়া নিশ্চয়ই মিলবে। সিএমওএইচ বলছেন, ‘‘অনেক টাকা বকেয়া ওঁদের। জোর করার বিষয় নয়। তবে খুব শীঘ্রই বকেয়া পেয়ে যাবেন ওঁরা। রোগীদের স্বার্থে তাই পরিষেবা সচল রাখার জন্য বলেছি। কথা বলিয়ে দিয়েছি স্বাস্থ্যভবনের সঙ্গেও।’’ তার পরেই পরিষেবা দিতে রাজি হয়ে যায় নিশ্চয়যান অ্যাম্বুল্যান্স অপারেটর ইউনিয়নের বীরভূম শাখা।
অ্যাম্বুল্যান্স অপারেটর ইউনিয়নের বীরভূম শাখার সম্পাদক তথা সিউড়ি জেলা হাসপাতালের নিশ্চয়যান চালক নূর আবসার বলছেন, ‘‘সিএমওএইচের কথা মেনে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে পরিষেবা দেওয়ার মিলিত সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলার ওই স্বাস্থ্যকর্তা মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন, টাকার অভাবে নিশ্চয়যানে তেল ভরাতে যাতে সমস্যা না হয়, সে ব্যাপারে পেট্রোল পাম্পগুলিকে তিনি অনুরোধ করবেন।’’
মাতৃ-মৃত্যু ও শিশু-মৃত্যুর হার কমাতে হাসপাতালে প্রসব নিশ্চিত করায় জোর দিয়েছে সরকার। তার অঙ্গ হিসেবে অন্তঃসত্ত্বা, প্রসূতি ও এক বছর পর্যন্ত শিশুদের বিনামূল্যে সরকরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ও আসার খরচ বহন করে সরকার। অন্তঃসত্ত্বা, প্রসূতি ও এক বছর পর্যন্ত শিশুদের জন্য ভাউচার থাকলেই হাসপাতাল এবং হাসপাতাল থেকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে থাকেন নিশ্চয়যান (অ্যাম্বুল্যান্স) চালকেরা। পরে সেই ভাউচারের দেখিয়ে টাকা পেতেন। ২০১১ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে এই পরিষেবা চালু। কিন্তু, গত আট মাস ধরে সেই টাকা বকেয়া রেখেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর, এমনই দাবি নিশ্চয়যান চালকদের।
তাঁদের সংযোজন, এ ছাড়া তেলের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে ৮ টাকা প্রতি কিলোমিটার ভাড়ায় রোগী নিয়ে আসা-যাওয়ায় লোকসান হচ্ছিল। স্বাস্থ্য দফতরে হত্যে দিয়ে পড়ে থেকেও টাকা আদায় করতে পারেননি তাঁরা। গাড়ি সারানো বা তেল কেনার পয়সা না থাকায় নিতান্ত নিরুপায় হয়েই পরিষেবা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন অ্যাম্বুল্যান্স অপারেটর ইউনিয়নের বীরভূম শাখার সদস্যরা। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, একই পরিষেবা দিতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর গত বছর চুক্তিবদ্ধ নতুন ১০২ অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালু করেছে। কিন্তু, নিশ্চয়যানের সংখ্যার নিরিখে তুলনা করলে সেই সংখ্যা অনেক কম।
যেখানে গোটা বীরভূম স্বাস্থ্য জেলায় ১১৯টি নিশ্চয়যান রয়েছে, সেখানে ১০২ অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা মাত্র ৪৫টি। নিশ্চয়যান বন্ধ থাকায় শুধু ১০২ দিয়ে আসন্ন প্রসবা, অসুস্থ শিশুদের হাসপাতালে পৌঁছতে চূড়ান্ত সমস্যা হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অনেকে আসতেই পারছিলেন না হাসপাতালে। গাঁটের কড়ি খরচ করে কিছু শিশু বা গর্ভবতী মহিলাদের হাসপাতালে নিয়ে আসছিলেন কিছু পরিবার। কোনও ১০২ পরিষেবা না থাকায় দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালে সমস্যা মেটাতে পঞ্চায়েত ও পুরসভা থেকে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল ব্লক প্রশাসনকে। আপাতত সমস্যা মিটল জেনে স্বস্তিতে সব পক্ষই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy