ঘোষণা: সাংবাদিক বৈঠকে সবুজকলি সেন। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
‘ডিজিটাইজেশন’-এর কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ হলেও বাকি কাজ মাঝ পথেই বন্ধ হয়ে যায়। আবার সেই কাজ শুরু হতে চলেছে বিশ্বভারতীতে। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন। ছিলেন কালচারাল ইনফরমেটিক্সের ডিরেক্টর প্রতাপানন্দ ঝা।
গত মাসেই নয়াদিল্লিতে ইন্দিরা গাঁধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্টস (আইজিএনসিএ) এবং বিশ্বভারতীর মউ স্বাক্ষরিত হয়। উপস্থিত ছিলেন সবুজকলি সেন, আইজিএনসিএ-এর সদস্য সেক্রেটারি সচ্চিদানন্দ যোশী, কালচারাল ইনফরমেটিক্সের ডিরেক্টর প্রতাপানন্দ ঝা, ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব সৌগত চট্টোপাধ্যায়। তখনই জানা গিয়েছিল, লিপিকা এবং রবীন্দ্রভবনে যে সমস্ত পাণ্ডুলিপি রয়েছে, সেগুলিকে এক সঙ্গে করে বিশ্বভারতীতে ‘পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ কেন্দ্র’ করার উদ্দেশ্য রয়েছে।
এ ছাড়াও মউয়ের চুক্তি অনুযায়ী, জৈব-অজৈব এবং কম্পোজিট সামগ্রী যেমন কাগজ-কাপড়, পাম পাতা, বার্চ ছাল, চামড়া, ধাতু ইত্যাদির উপর লেখা বিভিন্ন পাণ্ডুলিপিগুলির সংরক্ষণের জন্য যৌথ ভাবে বিশ্বভারতী এবং আইজিএনসিএ কাজ করার কথা জানিয়েছিল। তখনই আইজিএনসিএ থেকে পরিদর্শক দলের বিশ্বভারতীতে আসার কথা জানানো হয়েছিল। তাঁরাই সম্প্রতি বিশ্বভারতীতে এসে পৌঁছেছেন। আইজিএনসিএ রবীন্দ্রভবনের সমগ্র অডিয়ো-ভিজ্যুয়াল আর্কাইভের ডিজিটালাইজেশন করতে সম্মত হয়েছে এবং ন্যাশনাল কালচারাল অডিয়োভিজ্যুয়াল আর্কাইভসের (এনসিএএ) মাধ্যমে সেই সংগ্রহের গণতন্ত্রীকরণ করার ভাবনা নিয়েছে। একই সঙ্গে রবীন্দ্রভবনের সংরক্ষণে থাকা বিভিন্ন সময়ের সম্পত্তি বিষয়ক কাগজপত্রগুলিও ডিজিটাইজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইজিএনসিএ। এই বিষয় নিয়েই বিস্তারিত জানানো হয় শুক্রবারের সাংবাদিক বৈঠকে।
ডিজিটাইজেশন-এর পুরো কাজ হবে সরকারি ব্যয়ে। তবে খরচ কত হবে সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব হয়নি। রবীন্দ্রভবন, কলাভবন, সঙ্গীতভবনে থাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের যে সমস্ত অডিয়ো-ভিজ্যুয়াল, ছবি সংরক্ষিত আছে সব কিছুরই ডিজিটাইজেশন হবে। সঙ্গীতভবনে বিশিষ্ট শিল্পীদের প্রায় ২ হাজার ২০০টি রেকর্ডকেও ডিজিটাইজড করার পরিকল্পনা রয়েছে। সব কিছুর ডকুমেন্টেশনের কাজ মাস ছয়েকের মধ্যে হয়ে গেলেও সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশনের কাজ শেষ হতে বছরখানেক লাগবে বলেই মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
ইতিমধ্যেই বিশ্বভারতীর লিপিকা প্রেক্ষাগৃহের পাশে থাকা পাণ্ডুলিপি বিভাগের প্রায় ৮ হাজার ৭০০টি পাণ্ডুলিপির ডকুমেন্টেশন হয়ে গিয়েছে। বাকি প্রায় ৯ হাজার ৩০০টি পাণ্ডুলিপির ডকুমেন্টেশন হবে বলে জানা গিয়েছে। ২০০৩ সালে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রকের উদ্যোগে সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছিল। বিশ্বভারতীতে মন্ত্রকের অধীনে ২০১৫ সালে ডিজিটাইজেশনের কাজ শুরু হলেও মাঝ পথে বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে কালচারাল ইনফরমেটিক্সের ডিরেক্টর প্রতাপানন্দ ঝাঁ জানান, কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়াটাও জরুরি। কিন্তু, মাঝের কয়েক বছর বিশ্বভারতী সে রকম আগ্রহ দেখায়নি। সে কারণে ডিজিটাইজেশনের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
গত ছ’মাসে বিশ্বভারতীর আগ্রহ দেখেই আবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু হচ্ছে। জানা গিয়েছে, ডিজিটাইজেশনের পরে পুরো বিষয়টি অনলাইন হবে। ইনস্টিটিউটের অনুমতি নিয়ে গবেষকরা কাজ করতে পারবেন। এ ছাড়াও সাধারণ মানুষও সংরক্ষিত বিষয়গুলি দেখতে পারবেন। তবে ডকুমেন্টেশন-এর অসৎ ব্যবহার যাতে না হয়, সে দিকেও নজর থাকবে। প্রতাপানন্দ ঝা বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীর সংগৃহীত প্রত্যেকটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। এ গুলির সংরক্ষণ ও ডিজিটালাইজেশনের প্রয়োজন রয়েছে।’’ সবুজকলি সেনের কথায়, ‘‘সব কিছুর সংরক্ষণ হয়ে গেলে তা থেকে কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ—সকলেই উপকৃত হবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy