Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চাকরি নয়, তবুও থামছে না বিক্ষোভ

স্থায়ী কাজ নয়। নিয়োগও করা হচ্ছে না। ১০০ দিনের অন্যান্য কাজের মতোই পুরুলিয়ার বিভিন্ন স্কুল, পঞ্চায়েত ভবন, থানা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রভৃতি জায়গায় কিছুদিনের জন্য কিছু লোককে কাজে লাগানো হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৭ ০২:০২
Share: Save:

স্থায়ী কাজ নয়। নিয়োগও করা হচ্ছে না। ১০০ দিনের অন্যান্য কাজের মতোই পুরুলিয়ার বিভিন্ন স্কুল, পঞ্চায়েত ভবন, থানা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রভৃতি জায়গায় কিছুদিনের জন্য কিছু লোককে কাজে লাগানো হচ্ছে। ‘কনভারজেন্স অ্যাকটিভিটি অব এমজিএনআরইজিএ ইন প্রাইমারি স্কুল অ্যান্ড আদার্স গর্ভনমেন্ট ইন্সস্টিটিউশন’ নামের কর্মসূচি ঘিরে জেলা জুড়ে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় প্রশাসন জানিয়ে দিল, কাউকে ওই কাজে মোটেই নিয়োগ করা হচ্ছে না। ১০০ দিনের অন্যান্য কাজের সঙ্গে এর কোনও পার্থক্যও নেই। যদিও বুধবারও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই কাজের দাবিতে বিক্ষোভ থেকে শিক্ষকদের স্কুলে কয়েক ঘণ্টা তালা বন্ধ করে রাখার ঘটনাও ঘটেছে।

তিন বছর আগে এই কাজের নির্দেশ দিলেও জেলা প্রশাসন তা না করায় ক্ষোভে প্রশাসনিক বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেই মঙ্গলবার থেকে প্রশাসন ২২৬৭ স্কুল, ১৫৪২ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, ৬২০ জুনিয়র হাইস্কুল, ৪৩৭ এসএসকে ও এমএসকে, ৯৮টি পঞ্চায়েত, ১২৯টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ২০টি ব্লক, ২২টি থানা এবং আরও কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান-সহ মোট ৫৫৯৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার লোককে কাজে লাগানো হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, তাঁরা সবাই ১০০ দিনের জবকার্ডধারী।

কিন্তু স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে বিরোধী দলের কিছু লোকজন বিভিন্ন জায়গায় মঙ্গলবার থেকেই গোলমাল পাকাচ্ছে বলে অভিযোগ। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অরিন্দম দত্ত বলেন, ‘‘এই কাজকে ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কারণেই বিক্ষোভ দেখা দিচ্ছে। ওই কাজ টানা ১৪ দিন চলবে। কোনও স্কুলের জমি বেশি থাকলে, সেখানে কয়েকদিন বেশি চলতে পারে।’’ তিনি জানান, ৩০ জুন হুল দিবসে বিভিন্ন স্কুল ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। গাছ বসানোর জন্য মাটিতে গর্ত খুঁড়তে লোক লাগানো হচ্ছে। গাছ লাগানো হয়ে গেলে, তাঁরাই গাছের লালন পালন করবেন। তখনও ১৪ দিন করেই কাজ দেওয়া হবে। এ ভাবে ৯০ দিন পর্যন্ত কাজ দেওয়া হবে।’’ জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘একশো দিনের এই কাজে প্রকল্পের কাজের বিধি মোতাবেক জবকার্ডধারীরাই শুধু কাজ পাচ্ছেন। আমরা এই বিষয়টি মানুষজনকে বোঝাব।’’

যদিও বিক্ষোভ এ দিনও অব্যাহত ছিল।

ঝালদা ২ ব্লকের চিরুহাতু, বাসুদেবপুর, পুরুলিয়া ১ ব্লকের রামনগর, পুরুলিয়া ২ ব্লকের বোঙাবাড়ি, চয়নপুর, গোলামারা, গোলকুণ্ডা, জয়পুরের জোড়িটাঁড়-সহ বেশ কয়েকটি প্রাথমিক স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পুরুলিয়া ১ ব্লকের সোনাইজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পুরুলিয়া ২ ব্লকের ভাঙড়া গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুরুলিয়া ১ ব্লক অফিসেও বিক্ষোভ হয়। বেশিরভাগ জায়গাতেই স্বনির্ভর দলের মহিলারাই বিক্ষোভ দেখান।

চিরুহাতু প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সুবীরকুমার সরকার, বাসুদেবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জয়দেব মাহাতোর অভিযোগ, ‘‘এলাকার মহিলারা তাঁদের কাজ দেওয়ার দাবি তুলে সকালে আমাদের স্কুলের ভিতরে তালা বন্ধ করে দেয়। দুপুর প্রায় ১টা নাগাদ পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন এসে তালা খুলে আমাদের মুক্ত করেন।’’ পুরুলিয়া ২ ব্লকের বোঙাবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সীতা মণ্ডল সিংহ জানান, স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় তাঁরা বাইরেই বসে থাকেন।

সোনাইজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে রামনগর, সোনাইজুড়ি, চাকদা, বালিগাড়া-সহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে মহিলারা এসে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘টাকা নিয়ে এই কাজ পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা-মৌতোড় পঞ্চায়েতে স্বনির্ভর দলের সঙ্গে বিক্ষোভে সামিল হয় বিজেপি,সিপিএম এমনকী তৃণমূলের কিছু মহিলা সমর্থকও। রঘুনাথপুর ২ ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখান জোরাডি গ্রামের শতাধিক মহিলা। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের শাঁকা পঞ্চায়েতে বিজেপির নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়েছে।

জেলা পরিষদের বিরোধী সদস্য কংগ্রেসের উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, ‘‘একশো দিনের কাজে ঝাঁট দেওয়ানোর কাজ করা যায় কী?’’ বিজেপিরও বক্তব্য, ‘‘এই প্রকল্পে তৃণমূল নিজেদের লোকজনকেই ঢোকাচ্ছে। তাই দিকে দিকে মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ছেন।’’

পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘কোনও ভাবে রটে গিয়েছে এই কাজ মানে চাকরি। এটা কোনও ভাবেই তা নয়। সবাইকে বোঝানো হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

100 days of work Agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE