Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মজুরি মেলেনি ৮ মাস, অবস্থান ঠিকা শ্রমিকদের

আট মাস যাবত মজুরি বকেয়া রয়েছে। কোল ওয়াশারি কর্তৃপক্ষর কাছে মজুরি মেটানোর আর্জি জানিয়েও সমস্যার সুরাহা হয়নি। বকেয়া আদায়ে এ বার অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিক্ষোভ অবস্থান শুরু করলেন সাঁওতালডিহির ভোজুডি কোল ওয়াশারির ঠিকা শ্রমিকদের একাংশ। বুধবার সকাল থেকে ওয়াশারির মূল প্রবেশ পথের পাশে ছাউনি খাটিয়ে সিটু প্রভাবিত ঠিকাদার শ্রমিক সংগঠনের সদস্যেরা অবস্থান শুরু করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁওতালডিহি শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:২৯
Share: Save:

আট মাস যাবত মজুরি বকেয়া রয়েছে। কোল ওয়াশারি কর্তৃপক্ষর কাছে মজুরি মেটানোর আর্জি জানিয়েও সমস্যার সুরাহা হয়নি। বকেয়া আদায়ে এ বার অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিক্ষোভ অবস্থান শুরু করলেন সাঁওতালডিহির ভোজুডি কোল ওয়াশারির ঠিকা শ্রমিকদের একাংশ। বুধবার সকাল থেকে ওয়াশারির মূল প্রবেশ পথের পাশে ছাউনি খাটিয়ে সিটু প্রভাবিত ঠিকাদার শ্রমিক সংগঠনের সদস্যেরা অবস্থান শুরু করেছেন। সংগঠনের সম্পাদক তথা ঠিকা শ্রমিক দীপক মাহাতোর দাবি, ওয়াশারি কর্তৃপক্ষ বকেয়া মজুরি না দেওয়ার ব্যবস্থা করা পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান চালিয়ে যাবেন।

ঝাড়খন্ড সীমানায় পুরুলিয়ার সাঁওতালডিহি থানা এলাকায় বিসিসিএলের ভোজুডি কোল ওয়াশারিতে (কয়লা পরিশোধন কেন্দ্র) ১৩৯ জন ঠিকা শ্রমিক গত জানুয়ারি মাস থেকে মজুরি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। এই শ্রমিকেরা ঠিকাদারের আওতায় কাজ করলেও এঁদের কাজের প্রকৃতি স্থায়ী ধরনের। অর্থ্যাৎ, কাজের বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদারের বদল হলেও শ্রমিকদের ছাঁটাই হয় না। এই সংখ্যক শ্রমিকদের একাংশ আবার সরাসরি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত। ওয়াশারির মধ্যে কয়লা পরিশোধন প্রক্রিয়া, যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন এই ঠিকা শ্রমিকদের একাংশ। সিটুর দাবি, ওই ১৩৯ জনের মধ্যে তাঁদের সমর্থক প্রায় ৫০ জন শ্রমিক বিক্ষোভ-অবস্থানে সামিল হয়েছেন।

ঘটনা হল, এত মাস মজুরি বকেয়া থাকায় শ্রমিকদের পরিবারগুলি আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। কোল ওয়াশারির পাঁচ কিলোমিটারে মধ্যে থাকা আগুইট্যাড়, ইছড়, কামরগোড়া, উপরডি, সাঁওতালডিহি বস্তির বাসিন্দা এই শ্রমিকেরা বলেন, ‘‘গত বছরের শেষ দিকে একই ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছিল। আন্দোলন শুরু করায় ডিসেম্বর মাসে দুই মাসের বকেয়া মজুরি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার পর আবার চলতি জানুয়ারি থেকে অগস্ট অবধি মজুরি মেলেনি।” সংগঠনের সম্পাদক দীপকবাবু জানান, দুই দশক ধরে ওয়াশারিতে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করছেন তাঁরা। দৈনিক মজুরি মেলে ৩২০ টাকা। মাসে ২৬ দিন কাজ করার পরে প্রতি মাসের শেষ দিকে বা পরের মাসের প্রথম দিকে মজুরি দেওয়াটাই বিধি। তাঁর কথায়, ‘‘আট মাস মজুরি না মেলায় শ্রমিকদের পরিবারগুলি চরম সঙ্কটে। উপার্জনের অন্য কোনও সংস্থান না থাকায় সংসার চালানোই অসম্ভব হয়ে উঠেছে তাঁদের পক্ষে।’’

এ দিন সকালে অবস্থানে এসেছিলেন সিটুর জেলা সভাপতি নিখিল মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, ওয়াশারির এই শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি বাসুদেব আচারিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশারি কর্তৃপক্ষর সঙ্গে আলাপ আলোচনায় বকেয়া মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীতায় বাধ্য হয়েই অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবস্থান শুরু করেছেন শ্রমিকেরা। নিখিলবাবু বলেন, ‘‘বকেয়া মজুরি মেটানোর দাবি জানালেই ওয়াশারি কর্তৃপক্ষ পদ্ধতিগত সমস্যার কথা তুলছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারদের নিজেদের সমস্যার জন্য বিসিসিএলের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় শ্রমিকেরা আট মাস ধরে মজুরি পাবেন না, এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।”

ভোজুডি কোল ওয়াশারিতে ঠিকা শ্রমিকদের মধ্যে সিটু ছাড়া এসইউসি-র শ্রমিক সংগঠন এআইইউটিইউসি-র সংগঠন রয়েছে। এখনও তারা সিটুর সঙ্গে আন্দোলনে সামিল হয়নি। বরং এ দিন এআইইউটিইউসি-র সমর্থক শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছেন। এসইউসি-র শ্রমিক সংগঠনের নেতা দিলীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা আপাতত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দাবি আদায়ের পথেই হাঁটছি। তা ছাড়া, সিটু যেভাবে হঠাৎ করে অন্দোলন শুরু করে দিয়েছে, সেই পদ্ধতি নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে।”

কোল ওয়াশারির প্রজেক্ট ম্যানেজার বিভাসচন্দ্র ঝা বলেন, ‘‘ঠিকা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি মেটানোর ক্ষেত্রে তহবিলের ঘাটতির পাশাপাশি পদ্ধতিগত কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

allegation worker sallary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE