Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তিতলি পারল না, ধান কী করে বাঁচবে? 

ঝালদার মাঠারি গ্রামের বাসিন্দা গণপতি মাহাতো ও আড়শার তুম্বা-ঝালদার বাসিন্দা বিভূতি মাহাতোর বাস অযোধ্যাপাহাড়ের দু’পাশে। কেউ কাউকে চেনেন না।

ধুঁকছে:  পুরুলিয়া ১ ব্লকের রায়বাঘিনী গ্রামে। ছবি: সুজিত মাহাতো

ধুঁকছে: পুরুলিয়া ১ ব্লকের রায়বাঘিনী গ্রামে। ছবি: সুজিত মাহাতো

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৫
Share: Save:

ঝালদার মাঠারি গ্রামের বাসিন্দা গণপতি মাহাতো ও আড়শার তুম্বা-ঝালদার বাসিন্দা বিভূতি মাহাতোর বাস অযোধ্যাপাহাড়ের দু’পাশে। কেউ কাউকে চেনেন না। কিন্তু, দু’জনেরই চিন্তা এখন একটাই— ‘‘সামনে বাঁদনা পরব। জলের অভাবে ধানগাছ জ্বলে গিয়েছে। তাই মন ভাল নেই। কী করে পরব হবে?’’

শুধু তাঁরাই নয়। এই এক চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছে পুরুলিয়া জেলার অধিকাংশ ধানচাষিকে। কারণ, জলের অভাবে এ বার অর্ধেকের বেশি চাষ শেষ হয়ে গিয়েছে। বান্দোয়ান থেকে বাঘমুণ্ডি, হুড়া থেকে পাড়া—সর্বত্রই আক্ষেপ, ‘‘রোয়ার আগে বৃষ্টি আশা জাগালেও ধানে থোড় আসার সময়েই টানা অনাবৃষ্টি সব শেষ করে দিল। চোখের সামনে শুকিয়ে গেল বাইদ (উঁচু জমি) ও কানালি (সমতল জমি) জমির ধান।

পুরুলিয়া জেলা কৃষি দফতরও সমান উদ্বেগে। তাঁরা জানাচ্ছেন, পুজোর মুখে ঘুর্ণিঝড় তিতলি আশা জাগিয়েছিল। মনে হয়েছিল, তিতলিই বুঝি প্রাণ বাঁচাবে ধানের। কিন্তু, সে সময় জেলায় গড়ে ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি মেলে। কৃষি-কর্তারা জানাচ্ছেন, বহাল ও কানালি জমির একাংশে ওই বৃষ্টি কিছুটা সুবিধা দিলেও বাকি ক্ষেত্রে কোনও লাভ হয়নি।

জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘জেলার অধিকাংশ জমিই বাইদ বা উঁচুজমি। সেখানে জলের সমস্যা রয়েই গিয়েছে।’’ পুরুলিয়া জেলার কমবেশি ৩ লক্ষ ২৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে অর্ধেকটাই বাইদ বা উঁচু জমি। আশিসবাবুর কথায়, ‘‘জেলার মোট কৃষিজমির অর্ধেকটাই জলাভাবে ভুগছে। তাই সমস্যাটা গুরুতর।’’

ঝালদা ১ ব্লকের মাঠারি-খামার গ্রাম পঞ্চায়েতের মাঠারি গ্রামের বাসিন্দা গণপতি মাহাতোর কথায়, ‘‘তিতলি আসছে শুনে বৃষ্টির আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু, পৃষ্টি পেলাম ছিটেফোঁটা। তাতে আর কী লাভ! অন্যবার যা ধান হয়, এ বার তার সিকি ভাগও মিলবে কি না, সংশয়ে।’’ তিনি জানান, ১৩ জনের পরিবার। চিকিৎসা থেকে অনুষ্ঠান— সবই তাঁদের ধান চাষের আয়েই চলে। কী ভাবে বছর কাটাবেন তিনি ভেবে পাচ্ছেন না।

আড়শার তুম্বা-ঝালদা গ্রামের নীলকমল মাহাতো বা হুড়া ব্লকের খৈরি-পিহীড়া গ্রামের অশ্বিনী মাহাতো, কাশীপুরের কালীদহ গ্রামের বাবলি মাহাতোর মুখেও এক কথা। তাঁরা বলছেন, ‘‘সামনের বছরের খাওয়াপরাই যেখানে অনিশ্চিত, সেখানে বাঁদনা পরব নিয়ে আর কোনও আনন্দ আমাদের নেই।’’

শুরুটা অবশ্য এমন ছিল না। জেলা কৃষি দফতর জানাচ্ছে, এ বারে প্রাক বর্ষা মরসুমে বৃষ্টি ভালই হয়েছিল। অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে রোয়ার কাজও শেষ করে ফেলেছিলেন চাষিরা। তারপরে গড়ে অন্তত ৬০ মিলিমিটার করে কয়েকটা বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বৃষ্টির অভাব দেখা দিল তারপরেই। অগস্টে ৭৫ মিলিমিটার ও সেপ্টেম্বরে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে এ বারে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেলার কোন ব্লকের ধান চাষের কী অবস্থা, সে সম্পর্কে কৃষি দফতরের কাছ থেকে রিপোর্ট চাইব। শুধু ব্লক ধরেই নয়, প্রতি ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরেরও রিপোর্ট চাইব।’’

আশিসবাবু জানাচ্ছেন, কোন ব্লকের কোন পঞ্চায়েতে কী রকম ফলন হয়েছে, এ বার তার হিসেব হবে। শেষ পাঁচ বছরের ফলনের হিসেবও নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েতের যে কোনও চারটি মৌজার ধান কাটা হবে। এ বারের ফলনের সঙ্গে বিগত পাঁচ বছরের গড় ফলনের হিসাব মিলিয়ে দেখা হবে। তারপরেই বলা যাবে এ বারে ফলনের কী হাল।

ক্ষতির ধাক্কা বেশ কিছুটা সামাল দিতে পারত শস্য বিমা। চাষিদের কি সেই বিমার আওতায় আনতে পেরেছে কৃষি দফতর? (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water Shortage Purulia Rice cultivation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE