Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ইদে মস্তানি সুলতানের

বাবা-মায়ের সঙ্গে সিউড়িতে ইদের বাজার করতে এসে শনিবার সারাটা দিন ঘুরতে ঘুরতে কেবল মস্তানির কথা ভাবছিল দিলরুবা। বাবা-মায়ের সঙ্গে সিউড়িতে ইদের বাজার করতে এসে শনিবার সারাটা দিন ঘুরতে ঘুরতে কেবল মস্তানির কথা ভাবছিল দিলরুবা।

ইদের দিন নজর টানতে ভিড় চুড়ির দোকানেও। রামপুরহাটে তোলা নিজস্ব চিত্র।

ইদের দিন নজর টানতে ভিড় চুড়ির দোকানেও। রামপুরহাটে তোলা নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ০০:৫১
Share: Save:

বাবা-মায়ের সঙ্গে সিউড়িতে ইদের বাজার করতে এসে শনিবার সারাটা দিন ঘুরতে ঘুরতে কেবল মস্তানির কথা ভাবছিল দিলরুবা।

হাওয়া কেটে কেটে চোখের সামনে ভাসছিল যেন ঘোড়ার চড়ে যুদ্ধের দৃশ্যগুলো। মনে পড়ছিল দিপীকা পাড়ুকোনের ডায়লগ, ‘কিসকি তলবার পর সির রাখু ইয়ে বাতা দো...!’

কখনও হাঁটতে হাঁটতে মেঘ-রোদের ভিতর ‘যোধা হুঁ!’

শেষ পর্যন্ত ‘মস্তানি’কে পেয়েই গেল দিলরুবা। মসজিদ মোড়েই একটা ছোট্ট দোকানে ‘মস্তানি!’ দরদস্তুর করে নিজের জন্য লেহেঙ্গা-জ্যাকেট। বোনের জন্য চুড়িদার-ওড়না! আর নিউ মার্কেটে হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি!

কেবল দিলরুবা নয়, নলহাটির শামিমা, বোলপুরের দর্জিপাড়ার রোকেয়া সবার চোখ এ বার দীপিকা-প্রিয়ঙ্কার পোশাকের দিকে। ইদের বাজারে এ বার ওটাই হিট পোশাক। তবে বাজিরাও-এর সঙ্গে এ বার পাল্লা দিচ্ছে ‘সুলতান।’ ইদের দিনই সলমন-অনুষ্কা-রণদীপের ছবিটি মুক্তি পাবে। কিন্তু তার আগেই বাজারে চলে এসেছে ‘সুলতান’-এর পোশাক। মেয়েদের জন্য লং-সালোয়ার, দোপাট্টায় চিকনের কাজ। বাজারে নতুন এমন সব পোশাক থেকে ডিজাইনার জুতো, সুগন্ধি আতর থেকে টুপি, চুড়ি থেকে নানা প্রসাধনী— শনিবার বিকেল থেকেই জমজমাট জেলার ইদের বাজার। হাতে যে মাত্র তিনটে দিন!

কিন্তু সেই ভরা বাজারই মাটি করে দিল রবিবারের দিনভর বৃষ্টি। একদিকে বৃষ্টিতে বাজারের লাভ-ক্ষতির খবর, অন্যদিকে অনলাইন শপিং নিয়ে উঠে এল হরেক কথা।

সিউড়িতে বিকিকিনি। —নিজস্ব চিত্র

‘‘বৃষ্টি বেশ ক্ষতি করে দিল। এখন তো অনলাইন শপিংয়ের হাতছানি। অন্তত ১০-১৫ শতাংশ নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়ে কেনা কাটা সারছে অনলাইনে। তবে ফিটিংস নিয়ে সমস্যা বা অন্যান্য কিছু কারণে এখনও অনেকেই দোকানে বা শোরুমে এসে কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন। বর্তমান প্রজন্মের রুচি অনুসারে নিজেদের আপডেট না করলে বা উপযুক্ত পোশাকের স্টক না রাখলে ভবিষ্যতে সমস্যা হবে,’’—বলছিলেন রামপুরহাটের পোশাক ব্যবসায়ী মেম টাপরিয়া ও দুবরাজপুরের শামিম নওয়াজরা। নলহাটি, রামপুরহাট, সিউড়ি, দুবরাজপুর এবং বোলপুরের ব্যবসায়ীদের মতে, আয়োজনে কমতি নেই এ বারও। তবে এ দিনের বৃষ্টিতে এই শেষ রবিবারের বাজারেরই বেশ খানিকটা তাল কাটল।

বৃষ্টির কথা বলতে বলতেই সিউড়ির যুবক শাহরুখ মহম্মদ বলছিলেন তিনি অনলাইনেই এ বার কেনাকাটার অর্ধেকটা সেরেছেন। ‘‘দোকানের ভিড় এড়িয়ে ঘরে বসে পছন্দ মতো পোশাক পেয়েছি। তবে পরিবারের সঙ্গে দোকানেও গিয়েছি।’’ অনলাইন নয়, দোকানে গিয়েই বাজার সেরেছেন দুবরাজপুরের বধূ শবনম বিবি। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে দুর্গাপুরে পড়ে। ওর আর নিজের জন্য মলেই গিয়েছিলাম। নিজের জন্য হ্যাণ্ডলুম শাড়ি ও কুর্তি, ছেলের জন্য সুতির শার্ট ও জিন্স নিয়েছি।’’

কেউ কেউ এ বারের ইদের কেনাকাটি নিয়ে বলতে গিয়ে বলছিলেন অনলাইন শপিংয়ের সুবিধা-অসুবিধা। বোলপুরের যুবক আমন আলি যেমন বললেন, ‘‘হতে পারে আপনি যা ছবিতে দেখেছেন তার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। ফিটিংস নিয়েও সমস্যা হতে পারে। সব ব্রাণ্ডের মাপ এক হয় না।’’ একই মত সিউড়ির রুকশা পারভিনেরও। অনলাইন শপিংয়ে ভরসা না করে দোকানে গিয়েই নিজের জন্য ‘বাজিরাও মস্তানি’ ও ‘সুলতান’-এর পোশাক পেয়ে গিয়েছেন তিনি সিউড়ি বাজারেই।

সুতির ছাপা শাড়ি থেকে জনপ্রিয় সিরিয়ালের ডিজাইনার শাড়ি, বেনারসি, কাঞ্জিভরম, তাঁতশিল্ক বা ঢাকাই জামদানি— চাহিদা এ বারও তুঙ্গে। পুরুষদের জন্য ন্যারো জিন্স, টি-শার্ট এবং সুতির শার্ট জনপ্রিয় এ বারও। দুবরাজপুরে বস্ত্র ব্যবসায়ী দিলীপ দত্ত, সিউড়ি রেজেশ সিদ্দিকি বা মারিয়ম বিবি, সাঁইথিয়ার আব্দুল সালেক মণ্ডল, নলহাটির কাপড় বিক্রেতা খোকন শর্মারা জানান, অনলাইন শপিং থাকুক। কিন্তু, গ্রাম বাংলায় সিনেমা, টিভি সিরিয়াল দেখে মানুষের মধ্যে কোথাও রেডিমেড পোশাকের ব্যাপারে একটা ঐক্যমত্য তৈরি হয়ে যায়। সেটাই বাজারে ঘোরে। দুর্গা পুজোতেও সেটাই থেকে যায়।

তবে সবই নির্ভর করে আকাশের মতিগতির উপর!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Eid shoppers markets
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE