Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শস্যবিমায় আরও পৌনে দু’লক্ষ চাষি

সভাপতি জানান, গত বছর শস্যবিমার আওতায় ছিল প্রায় সাড়ে উনিশ হাজার পরিবার। এ বার এক লক্ষ ৬৯ হাজার ৭২২টি পরিবারকে শস্যবিমার আওতায় আনা গিয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

চলতি বছরে আমন মরসুমে গোড়ার দিকে বৃষ্টি না হওয়ায় মার খেয়েছে চাষ। তবে গতবারের থেকে এ বার শস্যবিমার আওতায় আরও অনেক চাষিকে আনা গিয়েছে বলে দাবি করছেন প্রশাসন।

জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, ‘‘পুরুলিয়ায় কৃষিজীবি পরিবারের বেশির ভাগই আমন চাষের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু সময়ে বৃষ্টি কম হওয়ায় এ বছর চাষ মার খেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গ্রামে গ্রামে শিবির করে প্রচুর মানুষকে শস্যবিমার আওতায় আনা হয়েছে।’’

সভাপতি জানান, গত বছর শস্যবিমার আওতায় ছিল প্রায় সাড়ে উনিশ হাজার পরিবার। এ বার এক লক্ষ ৬৯ হাজার ৭২২টি পরিবারকে শস্যবিমার আওতায় আনা গিয়েছে। তাদের মধ্যে সাড়ে ছয় হাজারের কিছু বেশি নাম পোর্টালে আপলোড হওয়া বাকি রয়েছে। সূত্রের খবর, পুরুলিয়া জেলায় কৃষক পরিবারের সংখ্যা তিন লক্ষের বেশি। তাদের মধ্যে যেমন ভাগচাষি রয়েছে, তেমনই রয়েছে শস্যবিমার আওতায় আসতে অনিচ্ছুক পরিবারও।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিকে বৃষ্টিপাতের ঘাটতির কারণে মূলত উঁচু বা বাইদ জমির ফলন মার খেয়েছে। প্রাথমিক হিসেবে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর ধান জমির ক্ষতি হয়েছে।

অন্তর্ভুক্তির নিয়মকানুন

• জমি নিজের নামে থাকতে হবে। না হলে উত্তরাধিকার সূত্রে জমি চাষ করছেন, এই মর্মে পঞ্চায়েত প্রধানের শংসাপত্র প্রয়োজন।
• যার জমির পরিমাণ যেমন, সেই অনুযায়ী বিমার প্রিমিয়াম দেবে সরকার।
• আমন ধান পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ হেক্টর প্রতি ৬০ হাজার টাকা।
• পরিসংখ্যান দফতরের রিপোর্টের উপরে নির্ভর করবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কি না।
• প্রতি মরসুমে আলাদা বিমা করাতে হয়।
• ব্লক কৃষি দফতরে গিয়ে বিমা করানো যায়। কবে থেকে, তা নোটিস দিয়ে জানানো হয়। বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘‘এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন ব্লক থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যাচ্ছে, চাষ শুরু করার পরে জল না পেয়ে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির চারা ধান মারা গিয়েছে। আগামী রবি মরসুমে ওই জমি কী ভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

অক্টোবরের শেষ থেকে রবি মরসুমের চাষ শুরু হওয়ার কথা। আশিসবাবু জানান, ফাঁকা পড়ে থাকা জমিতে এই চাষ অন্তত মাস খানেক এগিয়ে আনা যায় কি না, তা ভাবা হচ্ছে। তেমন হলে সর্ষের চাষও করা যেতে পারে। দফতর সূত্রের খবর, যে জেলাগুলিতে বৃষ্টির অভাবে চাষ মার খেয়েছে, সেখানে সামনের রবি মরসুমে কী চাষ করা যেতে পারে, তা নিয়ে চলতি সপ্তাহে নবান্নে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে।

কৃষি দফতর জানাচ্ছে, মূলত জুন থেকে অগস্টের বৃষ্টির উপরেই জেলার আমন চাষ নির্ভর করে। কিন্তু জুনে বৃষ্টির ঘাটতি ছিল ৪৮ শতাংশ। জুলাইয়ে ঘাটতি ৪০ শতাংশ। অগস্টের গোড়ায় বৃষ্টি তেমন না হলেও পরের দিকে স্বস্তি দিয়ে বৃষ্টি বাড়ে।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, যত দিন যাচ্ছে, আবহাওয়ার চরিত্র বদলানোয় ততই ঝুঁকিবহুল হয়ে পড়ছে চাষবাস। বৃষ্টিও খামখেয়ালি হয়ে পড়েছে। এক ব্লকে বৃষ্টি মোটের উপরে ভাল হলেও, দেখা যাচ্ছে পাশের ব্লকে ঘাটতি অনেক। তাই আবহাওয়া নিয়ে ধন্দে কৃষি-কর্তারাও।

তবে এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে প্রযুক্তির প্রয়োগ। এমনটাই মনে করছে কৃষি দফতর। জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তার কথায়, ‘‘আমরা বিভিন্ন ব্লকের চাষিদের কম জল-নির্ভর ‘সুধা’ ও ‘শ্রী’ পদ্ধতিতে চাষে উৎসাহিত করছি। এখন চাষিরা ধানের গুচ্ছচারা বোনেন না। তাতে মাটিতে ভাল ভাবে শিকড় ছড়াতে পারে। জলের প্রয়োজনীয়তাও এতে কম হয়।’’

তিনি জানান, এ বার এমনও দেখা গিয়েছে, ৫০ দিন বয়সের চারা বোনার পরেও তা বেঁচেছে। তবে ফলন কতটা পাওয়া যাবে, তা আরও কিছু দিন পরে বোঝা যাবে। আপাতত তাই আশা আর আশঙ্কার দোলাচলে দিন কাটছে জেলার চাষিদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmers Crop Insurance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE