Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বালুচরী হাটের ক্রেতা টানতে বিজ্ঞাপনের টক্কর

পর্যটকদের কাছে তাঁত শিল্পীদের পৌঁছে দিতেই বিষ্ণুপুরের গ্রামীণ হাটে দু’দিনের বালুচরী হাট বসিয়েছিল প্রশাসন। বাইরে ফেস্টুন টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল— ‘সরাসরি শিল্পীদের কাছে আসল বালুচরী যদি চান, তা হলে সময় নষ্ট না করে গ্রামীণ হাটে ঢুকে পড়ুন’।

বিকিকিনি: বিষ্ণুপুরের গ্রামীণ হাটে। নিজস্ব চিত্র

বিকিকিনি: বিষ্ণুপুরের গ্রামীণ হাটে। নিজস্ব চিত্র

শুভ্র মিত্র
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৮ ০১:২০
Share: Save:

মন্দির নগরী ঘুরতে এসে ক’জনই বা অলিতে গলিতে ঘুরে ঘুরে তাঁতিদের কাছ থেকে বালুচরী বা স্বর্ণচরী কেনেন? তাই পর্যটকদের কাছে তাঁত শিল্পীদের পৌঁছে দিতেই বিষ্ণুপুরের গ্রামীণ হাটে দু’দিনের বালুচরী হাট বসিয়েছিল প্রশাসন। বাইরে ফেস্টুন টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল— ‘সরাসরি শিল্পীদের কাছে আসল বালুচরী যদি চান, তা হলে সময় নষ্ট না করে গ্রামীণ হাটে ঢুকে পড়ুন’। তা দেখেই গ্রামীণ হাটের দরজার মুখেই বিদ্যুতের খুঁটিতে পড়ে যায় পোস্টার— ‘চলে আসুন মেগা শোরুম বালুচরীর। আর একটু এগিয়ে ডান দিকে’।

বিজ্ঞাপনের এই টক্কর নজরে আসতেই মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল তড়িঘড়ি কর্মীদের ডেকে সাদা কাগজ সাঁটিয়ে দিলেন ওই বালুচরী বিপণির বিজ্ঞাপনে। তবে কি সরাসরি বাজার দখলের প্রতিযোগিতায় নামল জেলা প্রশাসন? বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘কোনও প্রতিযোগিতা নয়। সবাই মিলে শিল্প আর শিল্পীকে বাঁচিয়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে। আমরা শুধু বিষ্ণুপুরের বালুচরী শিল্পীদের ডাক দিয়ে কারিগরের হাটে নিয়ে এসেছি। ক্রেতাদেরও এক ছাদের নীচে বালুচরী ও স্বর্ণচরীর বিপুল সম্ভার দেখার সুযোগ করে দিয়েছি। বেচাকেনার মধ্যে সরকার নাক গলাচ্ছে না।’’

শুক্রবার আর শনিবার বালুচরী শিল্পীদের উপস্থিতিও ছিল ভালই। পঞ্চাশ জনের উপর শিল্পী তাঁদের বালুচরী এবং স্বর্ণচরী শাড়ি নিয়ে হাটে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে সঞ্জীব দাস, স্বপন দাস, লোকনাথ লক্ষণ, রাধেশ্যাম লক্ষণরা কেউ আট, কেউ বা ১০টা বিভিন্ন মানের শাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। নীল-সাদা কাপড়ে মোড়া টেবিলে সার সার শাড়ি রেখে তাঁরা অপেক্ষায় ছিলেন।

কলকাতা থেকে আসা বিপণি সংস্থাগুলিকে প্রতিনিধিরা ঘুরে ঘুরে দেখে কিনছিলেন। গরমকাল সত্ত্বেও কিছু পর্যটকও এসেছিলেন। তাঁরাও শাড়ি দেখছিলেন। কলকাতার বেকবাগান থেকে সন্দীপন বসু শাড়ি দেখার ফাঁকে বলেন, ‘‘শুনলাম প্রচুর বালুচরী শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। তাই চলে এলাম। এক ছাদের তলায় এত শিল্পীর বৈচিত্রপূর্ণ বালুচরীর বিপুল সম্ভার কোনও দোকানে পাব না।’’

শুধুই বালুচরীর হাট। কিন্তু শহরে প্রচার কোথায়? প্রশ্ন তুলছেন পর্যটকদের অনেকেই। তাঁদের কারও কারও আক্ষেপ, ‘‘বিষ্ণুপুর স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে রিকশাওয়ালাদের বালুচরীর হাট যাব বলতেই তাঁরা যেন আকাশ থেকে পড়ছেন। জায়গাটা কোথায় তা বোঝাতে কালঘাম ছুটে যাওয়ার জোগাড়। অথচ শহরের রাস্তার ধারে ধারে এমন কোনও বিদ্যুতের খুঁটি নেই, যেখানে শাড়ির দোকানের বিজ্ঞাপন নেই। তবে বালুচরীর বিপুল সম্ভার দেখে মন ভরে গেল।’’

বালুচরী শাড়িতে নতুনত্ব নিয়ে এসে রাজ্য সরকারের স্বীকৃতি পাওয়া শিল্পী অমিতাভ পালও হাটে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অনেকেই বাজারজাত করার কৌশল ঠিকঠাক রপ্ত করতে পারিনি। আমার শাড়িই কেন কিনতে হবে, অন্যদের তুলনায় আমার শাড়ির বৈশিষ্ট্য কোথায় আলাদা, কেনই বা এত দাম, তা অনেক সময়েই ক্রেতাদের ঠিক মতো বুঝিয়ে উঠতে পারছি না আমরা। ফলে অনেক সময় সেরা শাড়ি বাজারের মুখ দেখতে পায় না।’’

তাঁর আর্জি, বাজার তৈরির জন্য নিয়মিত হাট বসানোর সঙ্গে সঙ্গে ‘মার্কেটিং স্কিল’ তৈরির জন্য মহকুমা প্রশাসন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে সত্যি সত্যিই বালুচরী এক দিন প্রাণ ফিরে পাবে।

হাটে পসরা নিয়ে আসা প্রবীণ থেকে নবীন শিল্পী সকলের একটাই ইচ্ছে— আবার ফিরে আসুক তাঁতি পাড়ার ব্যস্ততা। মাকু টানার খটা খট শব্দে ভরে উঠুক বিষ্ণুপুরের অলিগলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Exhibition Bengal Tant Bishnupur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE