Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কার্ড হবে ডিজ়িটাল, দীর্ঘ লাইন 

এলাকায় ঘুরে দেখা গিয়েছে, অনেকেই দাবি করছেন রেশনের প্রয়োজন না থাকলেও এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) নিয়ে আতঙ্কেই এখন ডিজ়িটাল রেশন কার্ড করাতে কেউ কেউ লাইন দিচ্ছেন।

অপেক্ষা: পুরুলিয়া পুরভবনে ভিড়। ছবি: সুজিত মাহাতো

অপেক্ষা: পুরুলিয়া পুরভবনে ভিড়। ছবি: সুজিত মাহাতো

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩৪
Share: Save:

কেউ শিশু কোলে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কেউ আবার দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও ফর্ম জমা করতে না পেরে বাড়ি ফিরে গেলেন। ডিজ়িটাল রেশন কার্ড নিয়ে বুধবার এই ধরনের টুকরো টুকরো ভোগান্তির ছবি দেখা গেল দুই জেলা জুড়ে। ডিজ়িটাল রেশন কার্ডের ফর্ম জমা দিতে ব্লকের খাদ্য দফতরের অফিস ও পুরসভাগুলিতে প্রতিদিনই লম্বা লাইন পড়ছে বাসিন্দাদের। বস্তুত ব্লকের খাদ্য দফতর বা পুরসভাগুলিতে প্রয়োজনের চাইতে কাউন্টার কম খোলার কারণেই হয়রানির মধ্যে পড়তে হচ্ছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।

এলাকায় ঘুরে দেখা গিয়েছে, অনেকেই দাবি করছেন রেশনের প্রয়োজন না থাকলেও এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) নিয়ে আতঙ্কেই এখন ডিজ়িটাল রেশন কার্ড করাতে কেউ কেউ লাইন দিচ্ছেন। তাঁদের মতে, ‘‘এ রাজ্যে এনআরসি হলে কে জানে, কী কী নথি লাগে! যদি ডিজ়িটাল রেশন কার্ড চেয়ে বসে? তাই করিয়ে রাখা।’’ যদিও বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, ‘‘ডিজ়িটাল রেশন কার্ডের সঙ্গে এনআরসি-র কোনও সম্পর্ক নেই। এ নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যাঁরা রেশনের সামগ্রী পাওয়ার যোগ্য, তাঁরাই শুধু আবেদন করুন।’’

আবার অসমের এনআরসি-র পরে রেশন কার্ডের নামের বানানের ভুল সংশোধন করে নেওয়াটা জরুরি বলে মনে করছেন অনেকে। স্কুল শিক্ষক পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা তসমবীর আহমেদ বলেন, ‘‘অসমে এনআরসিতে লক্ষ লক্ষ লোকের নাম বাদ গিয়েছে শুনছি। এ রাজ্যেও এনআরসি হবে বলে অনেকে বলছেন। তাই আগেভাগেই রেশন কার্ডের নামের বানানের ভুলটা শুধরে নেওয়ার জন্য স্কুলে ছুটি নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি।”

যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে খাদ্য মন্ত্রী জ্যোর্তিপ্রিয় মল্লিক বারবার জানাচ্ছেন, এর সঙ্গে এনআরসি-র কোনও সম্পর্ক নেই। এনআরসি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকারও। পুরুলিয়ার জেলা খাদ্য নিয়ামক শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাঁরা রেশন থেকে খাদ্যপণ্য পাওয়ার যোগ্য, তাঁরা ডিজ়িটাল কার্ড তৈরির জন্য আবেদন করতে পারেন।’’

জানা গিয়েছে, ওই শিবিরে নতুন করে কার্ডের আবেদনকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে হাতে থাকা রেশন কার্ডে নাম সংশোধনের হিড়িক! গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে মহকুমা ও ব্লক খাদ্য দফতর ও পুরসভায় শুরু হয়েছে ওই শিবির। চলবে শুক্রবার পর্যন্ত।

বাঁকুড়া পুরসভা সূত্রে খবর, জমা পড়া আবেদনের মধ্যে ৭০ শতাংশই নাম সংশোধনের। বিষ্ণুপুর মহকুমা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জমা পড়া আবেদনের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই নাম সংশোধনের। নাম সংশোধনের সংখ্যা এত বেশি কেন? শিবিরে উপস্থিত খাদ্য দফতরের কর্মীদের একটা বড় অংশই জানাচ্ছেন, এর পিছনে কাজ করছে এনআরসি-ভীতি।

ওন্দার পুনিশোলের সুরত আলি মল্লিক বলেন, “ডিজ়িটাল রেশন কার্ড হাতে থাকলেও পরিবারের বহু সদস্যের নাম ভুল রয়েছে। দুম করে এনআরসি এই রাজ্যে চালু হলে সমস্যায় পড়ব বলে আশঙ্কা করছি। তাই নাম সংশোধনের জন্য প্রতিদিন সকালে ওন্দা ব্লক অফিসে ছুটে যাচ্ছি। অথচ যা ভিড়, তাতে কোনও দিনই আবেদন জানানোর সুযোগ পাচ্ছি না।” তিনি জানাচ্ছেন, এলাকার অনেকেই তাঁর মতো ব্লক অফিসে ছুটছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia Bankura Ration Card Digitization NRC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE