Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
নিজস্ব সংবাদদাতা

‘টাকা নিলে ভুগতে হবে’, দলের নেতা-কর্মীদের সাবধানবাণী অনুব্রতর

এ দিন ব্লকের ১৩৫টি বুথ থেকে কমপক্ষে ১০ জন করে কর্মীকে ডাকা হয়েছিল। তার মধ্যে চার জন মহিলা। বিরোধী শিবিরের অনেকে অনুপস্থিত ছিলেন।

দুবরাজপুরে রোড শোয়ে জেলার নেতাদের সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র

দুবরাজপুরে রোড শোয়ে জেলার নেতাদের সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র

খয়রাশোল
শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯ ০০:০৬
Share: Save:

‘মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রাপ্য পরিষেবা দাও। দুর্নীতি চলবে না। সংগঠন মজবুত করতে কাজের লোকেদের সামনে আন। আমিত্ব ভুলে মিলেমিশে চল’—খয়রাশোলে ঘুরে দাঁড়াতে এমনই উপায় বাতলে দিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। রবিবার খয়রাশোলের সেচ দফতরের মাঠে কর্মিসভা হয়। সেখানেই ঘুরে দাঁড়াতে নানা পরামর্শ দেন। খারাপ ফলের জন্য বকাঝকা করেন। কথা না শুনলে পরিণতি সুবিধার হবে না সেই হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। দিন কয়েক আগে বোলপুরে এই ব্লকের সব স্তরের নেতাকর্মীদের ডেকেও অনুব্রত নানা পরামর্শ দিয়েছিলেন। গত অক্টোবরে তৈরি করা ১৪ জনের কমিটি বাড়িয়ে ২৫ জনের করা হয়েছে। পর্যবেক্ষক সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী।

জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, মেরুকরণ এবং তৃণমূলের যুযুধান দুই গোষ্ঠীর নিত্য লড়াই ও অশান্তির জেরে অতিষ্ঠ খয়রাশোলের মানুষ শাসকদলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ বারের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরই সেটা স্পষ্ট হয়েছিল। গত বিধানসভা নির্বাচনেও যে ব্লক প্রায় ১৯ হাজার লিড দিয়েছিল, সেই খয়রাশোল ব্লকেই ব্লকে পিছিয়ে ১৫৩৬৭ ভোটে। মানুষ তৃণমূলের থেকে কেন মুখ ফিরিয়েছেন, দলের কর্মীদের তা বিশ্লেষণ করে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যাতে সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেই ব্যাপারে জোর দিয়েছেন জেলা সভাপতি।

প্রধানদের প্রতি অনুব্রতর পরামর্শ, ‘‘ব্লকের নেতাদের কেউ কেউ আপনাদের বলছে, জেলার কথা শোনার দরকার নেই, প্রধান তুমি আমার কথা শোন। একটা কথা বলে রাখি, বুথ সভাপতি অঞ্চল সভাপতি বা দলের কোনও কর্মী টাকা নিয়ে সরে যাবে। জেলে যেতে হবে কিন্তু আপনাকেই।’’ অনুব্রতর নিদান, ‘‘লুকিয়ে লুকিয়ে ওসিদের বলে দিন। আমি ব্যবস্থা করে দেব। নিজে কয়েকশো বা কয়েক হাজার টাকা পেয়ে গেলেন, আর দলটাকে ভুলে গেলেন, চলবে না। মানুষ আপনাকে বসিয়েছে পরিষেবা দেওয়ার জন্য।’’ স্পষ্ট নির্দেশ, ‘‘পঞ্চায়েতের প্রধানকে কাজ করতে দিন। পঞ্চায়েত

সমিতিতে গিয়ে আড্ডা বসানোর দরকার নেই।’’ এমন বার্তা শুনে বিজেপির জেলা ভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলছেন, ‘‘থানার ওসিরাই যে শাসকদলের নেতা, সেটা ফের একবার প্রমাণ করলেন অনুব্রত।’’ পুলিশ অবশ্য এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রসঙ্গও তুলেছেন অনুব্রতও। তাঁর কথায়, ‘‘খুন-খারাপি বন্ধ করুন। যে দল বোম মারবে। তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করুক। যে ধারায় মামলা করবে করুক। পুলিশকে কেউ ফোন করবে না।’’ অনুব্রতর হুঁশিয়ারি, ‘‘বুথ প্রেসিডেন্স খারাপ থাকলে পাল্টাও। অঞ্চল প্রেসিডেন্ট কাজ না করলে পাল্টাও। নতুন করে কমিটি কর। একটা বুথের আওতায় চারটে, পাঁচটা পাড়া নিতে হবে। এক একটা পাড়া থেকে ১৫ জন করে লোক নাও। সলিড বুথ কমিটি কর। সন্ধ্যাবেলায় আলোচনা কর। কী অসুবিধা উঠে আসছে দেখ।’’

এ দিন ব্লকের ১৩৫টি বুথ থেকে কমপক্ষে ১০ জন করে কর্মীকে ডাকা হয়েছিল। তার মধ্যে চার জন মহিলা। বিরোধী শিবিরের অনেকে অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে দ্বন্দ্ব থামছে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই গেল। বিজেপি জেলা সভাপতির প্রতিক্রিয়া, ‘‘খয়রাশোলে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। আর কোনও ওষুধেই কাজ করবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Anubrata Mandal Dubrajpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE