Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মিলবে ভাতা, সঙ্গে শুভেচ্ছা

শাসকদলের একাংশ ‘প্রভাব’ খাটানোয় বহু আবেদনকারী বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছিল।

বাঘমুণ্ডির একটি অনুষ্ঠানে প্রাপকদের হাতে ভাতার কাগজ তুলে দিচ্ছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক। নিজস্ব চিত্র

বাঘমুণ্ডির একটি অনুষ্ঠানে প্রাপকদের হাতে ভাতার কাগজ তুলে দিচ্ছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:২৩
Share: Save:

দীর্ঘ অপেক্ষার পরে মিলবে সরকারি ভাতা। উপরি পাওনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠানো শুভেচ্ছাপত্র।

শাসকদলের একাংশ ‘প্রভাব’ খাটানোয় বহু আবেদনকারী বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছিল। নবান্নের হস্তক্ষেপে সমস্যা মিটেছে বলে দাবি প্রশাসনের। ফাইলবন্দি আবেদনপত্রগুলি খতিয়ে দেখে ভাতা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের দাবি। ভাতার সঙ্গে আবেদনকারীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি চিঠিও পাচ্ছেন। সেখানে লেখা রয়েছে, ‘আপনি ভাতার জন্য আবেদন করে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছেন। আপনার ভাতার আবেদনপত্রটি রাজ্য সরকার সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করেছে’।

মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছেন, ‘দিদিকে বলো’য় ফোন করে কয়েক হাজার উপভোক্তারা অভিযোগ জানিয়েছিলেন, আবেদন করেও তাঁরা সরকারি ভাতা পাননি। তদন্তে জানা যায়, শাসকদলের নিচুতলার একাংশের আপত্তিতে নড়ছে না ‘ফাইল’। প্রশাসন সূত্রের খবর, আবেদনকারীরা ভাতা বা বাড়ি তৈরির কিস্তির টাকা পাচ্ছেন না শুনে গত ডিসেম্বরে প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষোভপ্রকাশ করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এরপরেই জট কাটতে শুরু করে।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, গত নভেম্বরে নবান্ন থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ভাতা দেওয়ার কত আবেদনের নিষ্পত্তি হয়নি। নবান্নকে জানানো হয়, সংখ্যাটা ২০,২৯২। এর পরে আবেদনকারীদের নামের তালিকা ধরে তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্তে জানা যায়, আবেদনকারীদের মধ্যে যাঁরা বিরোধী দলের ঘনিষ্ঠ, তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য বিডিও-দের উপরে চাপ দিচ্ছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ। যার ফলে, ভাতা প্রদানের বিষযটি আটকে রয়েছে।

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, গত ডিসেম্বরে জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ওই বিষয়ে খোঁজখবর করেন। ভাতা দেওয়ার প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে জেনে রীতিমতো অসন্তষ্ট হন তিনি। এর পরেই বিডিও-এবং পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের বৈঠকে ডেকে জেলাশাসক রাহুল মজুমদার জানিয়ে দেন, যে তালিকা পাঠানো হয়েছিল, তা থেকে একটি নামও বাদ দেওয়া যাবে না। কোনও নাম বাদ গেলে তার কারণ বাখ্যা করে রিপোর্ট পাঠাতে হবে বিডিও-দের। উপযুক্ত কারণ ছাড়া, কারও নাম তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলা হলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে শাস্তির মুখেও পড়তে হতে পারে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়। এর পরেই জট কাটতে শুরু করে। সূত্রের খবর, যে ব্লকগুলিতে শাসকদলের নেতাদের একাংশের তরফে আবেদনকারীদের কারও-কারও নাম বাদ দেওয়ার জন্য চাপ আসছিল, তাঁদেরও বার্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

জেলাশাসক জানান, ২০ হাজারের কিছু বেশি আবেদন জমা ছিল প্রশাসনের কাছে। ইতিমধ্যেই ১৬,৫৮১ জন আবেদনকারীর আবেদন মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে। তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভাতা পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাকি আবেদনপত্রগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রীর সই করা চিঠিও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে প্রাপকদের কাছে।

এ দিকে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই সুর চড়িয়েছে বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এতেই প্রমাণ হয়, সরকারি কাজে শাসদলের লোকজন হস্তক্ষেপ করে বলে আমরা যে অভিযোগ করি, তা সত্য’’। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর প্রতিক্রিয়া, ‘‘অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাদের দলের কেউ সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করেন না। মুখ্যমন্ত্রী চান, সরকারি সুবিধা নিচুতলার মানুষের কাছে পৌঁছে যাক। সেই লক্ষ্যেই কাজ করেন আমাদেল দলের জন প্রতিনিধিরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Subsidy Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE