Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
খুশি পড়ুয়াদের একাংশ

শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত শিক্ষকের জামিন মঞ্জুর

স্কুলের একটি সূত্রে দাবি, সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর শ্লীলতাহানিতে প্রধান শিক্ষকের জড়িত থাকার অভিযোগ ঘিরে কার্যত দু’টি শিবিরে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন অভিভাবক, পড়ুয়ারা।

উচ্ছ্বসিত: প্রধান শিক্ষকের জামিনের খবরে উল্লাস ছাত্রীদের। শুক্রবার রামপুরহাটে। নিজস্ব চিত্র

উচ্ছ্বসিত: প্রধান শিক্ষকের জামিনের খবরে উল্লাস ছাত্রীদের। শুক্রবার রামপুরহাটে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০৩
Share: Save:

নিঃশর্তে জামিন পেলেন ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ধৃত নলহাটি থানার বাণীওড় অশ্বিনীকুমার হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক। গত রবিবার ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা করেছিল। শুক্রবার সকালে তাঁকে রামপুরহাটের অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতের পক্সো বিশেষ আদালতের বিচারক অভিজিৎ সোমের এজলাসে হাজির করানো হয়। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ প্রধান শিক্ষককে জামিনের নির্দেশ দেন বিচারক।

অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে হওয়া লিখিত অভিযোগের সঙ্গে অভিযোগকারিণীর আদালতে জবানবন্দির কোনও মিল ছিল না। সর্বোপরি অভিযোগকারিণী মেডিক্যাল পরীক্ষাও করাতে চায়নি। অভিষেকবাবু জানান, মামলা চলাকালীন এই সমস্ত বিষয় বিচার বিবেচনা করেছেন বিচারক।

স্কুলের একটি সূত্রে দাবি, সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর শ্লীলতাহানিতে প্রধান শিক্ষকের জড়িত থাকার অভিযোগ ঘিরে কার্যত দু’টি শিবিরে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন অভিভাবক, পড়ুয়ারা। একটি অংশের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর থেকে লিখিত অভিযোগে পুলিশ প্রধান শিক্ষককে পকসো আইনে গ্রেফতার করে। এরই প্রতিবাদে পথে নামেন অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের অন্য একটি শিবির। তাঁদের দাবি, প্রধান শিক্ষক স্কুলে শিক্ষিক-শিক্ষিকাদের হাজিরার ব্যাপারে নিয়মানুবর্তিতা চালু করায় কঠোর ছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছিলেন। সে কারণেই কিছু লোক তাঁকে ফাঁসিয়েছেন বলে অভিযোগ ওই শিবিরের। গত শনি ও বুধবার স্কুলের গেটে তালাও ঝুলিয়ে দেয় প্রতিবাদী পড়ুয়ারা। সব মিলিয়ে স্কুলে অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পড়াশোনা বিঘ্নি হচ্ছিল। প্রধান শিক্ষকের জামিন মঞ্জুরের ঘটনায় স্কুলের পরিবেশ স্বাভাবিক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।

শুক্রবার সকাল থেকেই বাণীওড় এবং লাগোয়া গোবিন্দপুর, ভোলা, বসন্ত, সংকেতপুর, সুলতানপুর, মধুপুর, পুষড়, বাহাদুরপুরের মতো গ্রাম থেকে ওই হাইস্কুলের সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেনির জনা চল্লিশেক ছাত্রছাত্রী রামপুরহাট আদালত চত্বরে প্রধান শিক্ষককে দেখতে হাজির হয়েছিল। প্রধান শিক্ষককে জেল হেফাজত থেকে পকসো বিশেষ আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁকে প্রণামও করে পড়ুয়ারা। আদালত চত্বরে রায়দান পর্যন্ত অপেক্ষা করে শিক্ষকের জামিনের নির্দেশ শুনে বাড়ি ফেরে ছাত্রছাত্রীরা। তাদের কথায়, ‘‘সাদা যে সাদা এবং কালো যে কালো, আমরা তা প্রমাণ করে ছাড়লাম!’’

জামিনের নির্দেশ শোনার পরে আদালতের পুলিশ লকআপে প্রধান শিক্ষককে বলতে শোনা যায়, ‘‘সত্যের জয় হবে জানতাম। এর জন্য বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের এখনও ভরসা আছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কারও অভিযোগ থাকলে আরও অনেক পথ ছিল। কিন্তু তা না করে মিথ্যা অভিযোগ করানো হল ভেবেই খারাপ লাগছে। তবে আগামী দিনে আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এর যাতে কোনও প্রভাব না পড়ে, সেই চেষ্টা করব।’’ এ দিন আদালত চত্বরে উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষকের ভাই-সহ আত্মীয়পরিজন এবং বাণীওড় ও আশপাশ গ্রামের অনেক অভিভাবকও। তাঁরা বলছেন, ‘‘আদালতের রায়ে সুবিচার পেলেন প্রধান শিক্ষক।’’ মামলার সরকারী আইনজীবী প্রবাল বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু বলেন, ‘‘পকসো আইন অনুযায়ী সরকারী আইনজীবী হিসাবে আমি কোনও মন্তব্য করতে পারি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher Accused Molestation Bail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE