Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

শিল্পীর উঠোনেই মেলা হয়ে গেল পাঁচমুড়ায়

চার বছরে পা দেওয়া সেই টেরাকোটা মেলা রবিবার শেষ হল তালড্যাংরা থানার পাঁচমুড়াতে। শুক্রবার পাঁচমুড়ার ৮০টি পরিবার তাঁদের উঠোনে সাজিয়ে বসেছিলেন নিজেদের শিল্পের পসরা।

হাতে হাতে: মাটির ঘোড়া তৈরিতে মগ্ন দুই প্রজন্ম। টেরাকোটার গ্রাম পাঁচমুড়ায়। নিজস্ব চিত্র

হাতে হাতে: মাটির ঘোড়া তৈরিতে মগ্ন দুই প্রজন্ম। টেরাকোটার গ্রাম পাঁচমুড়ায়। নিজস্ব চিত্র

শুভ্র মিত্র
পাঁচমুড়া শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:৪০
Share: Save:

শিল্প, শিল্পী আর গ্রাম— একসঙ্গে মানুষের কাছে তুলে ধরাটাই ছিল লক্ষ্য। উপায়? শিল্পীর ঘরের দাওয়ায় মেলা!

চার বছরে পা দেওয়া সেই টেরাকোটা মেলা রবিবার শেষ হল তালড্যাংরা থানার পাঁচমুড়াতে। শুক্রবার পাঁচমুড়ার ৮০টি পরিবার তাঁদের উঠোনে সাজিয়ে বসেছিলেন নিজেদের শিল্পের পসরা। খাদি গ্রামীণ বিকাশ পরিষদের আর্থিক সহায়তায় পাঁচমুড়া মৃৎশিল্পী সমবায় সমিতির পরিচালনায় ও কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে মেলাটি হল।

নাড়ুগোপাল কুম্ভকার, তাপস কুম্ভকার, অরুণ কুম্ভকাররা দাওয়ায় মাটির ঘোড়া আর ঘর সাজানোর হরেক কিসিমের জিনিস গোছাতে গোছাতে বলছিলেন, ‘‘মেলার মরসুমে বিভিন্ন জেলায় পসরা নিয়ে যাই। কিন্তু গ্রামেই মেলা! গ্রাম তো নয়, একেবারে ঘরের দাওয়ায়! এই ব্যাপারটাই অন্য রকমের।’’ অন্য রকমেরই বটে! এক দিকে মাটি ভেঙে, চাকা ঘুরিয়ে তৈরি হচ্ছে মূর্তি। সেখান থেকে তুলে অন্য পাশে রাখা হচ্ছে বিক্রির জন্য। সেই সমস্ত কিনতে দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকেরাও হাজির। পোড়ামাটির একজোড়া ঘোড়া কিনে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন সেটি তৈরির চাক্ষুষ অভিজ্ঞতাও।

রবিবার স্কুল ছুটি। শিল্পী সুশান্ত কুম্ভকারের মেয়ে ফাল্গুনী হাত লাগিয়েছিল ঘোড়া তৈরির কাজে। খুদে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। কিন্তু হাতের কাজ দেখে কে বলবে সেটা! সুশান্ত বলেন, ‘‘শেখার খুব নেশা ওর। একটু একটু করে তালিম দিচ্ছি।’’ বাবা আর মেয়ের কাজ একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন দক্ষিণ কলকাতার গড়ফা থেকে আসা শ্রাবণী বসু। বললেন, ‘‘কলকাতার মিলন মেলা প্রাঙ্গণে যে হস্তশিল্প মেলা হয় সেখানে বাঁকুড়ার এমন পোড়ামাটির ঘোড়া দেখেছি। মুগ্ধ হয়ে সেগুলো দেখলাম। আজ আঁতুর ঘর দেখে গেলাম। কী নিখুঁত ভাবে মাটি প্রাণ পাচ্ছে!’’

সুশান্ত কাজের ফাঁকে বলছিলেন, ‘‘আমাদের একটা প্যাকেজিং কর্মশালা হলে খুব ভাল হয়। ক্রেতারা মাটির জিনিস দূর দূরান্তে নিয়ে যান। একটু এদিক ওদিক হলে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’’ তাঁর মতে, এই প্যাকেজিং-এর দৌলতে এলাকার আরও কয়েক জনের কর্মসংস্থানও হতে পারে। পাশাপাশি, রাস্তাটাও ভাল হওয়া দরকার, দাবি তুলেছেন পাঁচমুড়ার শিল্পীরা। তাঁদের অনেকেই বলছেন, ‘‘বেহাল রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়ে শৌখিন জিনিসের দফারফা হয়ে যায়। আর সেটা হলে ক্রেতা দ্বিতীয় বার কেনার আগে পাঁচ বার ভাবেন। নেওয়ার সমস্যার কথা ভেবে পিছিয়েও যান অনেকে।’’

পাঁচমুড়া মৃৎশিল্পী সমবায় সমিতির সভাপতি ব্রজ কুম্ভকার বলেন, ‘‘বর্তমানে মাটির সমস্যা প্রবল। চার বছর আগে সমিতি আড়াই বিঘা জমি কিনেছিল। ব্যাবহার করতে করতে দশ কাঠা তে নেমেছে সেটা। আরেকটা খুব দরকার।’’ নতুন প্রজন্মকে আধুনিক চিন্তা ভাবনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রশাসন যদি কর্মশালা করে, তাহলেও উপকার হয় বলে তাঁর মত। আয়োজক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য নির্মাল্য রায় বলেন, ‘‘এ রাজ্যের ১০ টি জায়গায় হস্তশিল্প কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে বলে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে শিল্পীদের দক্ষতা বিক্রি, বাজার তৈরি প্রভৃতি করতে এই মেলার আয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Terracotta festival Artists
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE