Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

তদন্তে ফাঁক, মত আইনজীবীর

আইনজাবীদের একাংশ মনে করাচ্ছেন, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে অমিত-খুনে অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা শেখ আলিম-সহ চার্জশিটে থাকা ৩৬ জনকে ‘নিরপরাধ’ বলে দাবি করে তাঁদের নাম ওই মামলা থেকে বাদ দেওয়ার আর্জি আদালতে জানান জেলা আদালতের প্রাক্তন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

উচ্ছ্বসিত: বেকসুর খালাসের রায় ঘোষণার পরে। সোমবার সিউড়ি আদালত চত্বরে। নিজস্ব চিত্র

উচ্ছ্বসিত: বেকসুর খালাসের রায় ঘোষণার পরে। সোমবার সিউড়ি আদালত চত্বরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৩
Share: Save:

পুলিশের তদন্ত নিয়ে সমালোচনা করেছে আদালত। বিচারক মন্তব্য করেছেন, অনেকটাই দায়সারা ভাবে এগিয়েছে দুবরাজপুর থানার এসআই অমিত চক্রবর্তী খুনের মামলা। সোমবার ওই অভিযুক্তেরা বেকসুর খালাস পেয়ে যাওয়ার পরে বীরভূম জেলা আদালতের আইনজাবীদের একাংশও মানছেন, অমিত হত্যা-মামলা যে পথে এগিয়েছে, তাতে অভিযুক্তেরা শাস্তি পাবেন বলে কখনও মনে হয়নি।

কেন তাঁরা এমন কথা বলছেন?

আইনজাবীদের একাংশ মনে করাচ্ছেন, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে অমিত-খুনে অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা শেখ আলিম-সহ চার্জশিটে থাকা ৩৬ জনকে ‘নিরপরাধ’ বলে দাবি করে তাঁদের নাম ওই মামলা থেকে বাদ দেওয়ার আর্জি আদালতে জানান জেলা আদালতের প্রাক্তন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর দাবি ছিল, তিনি নিজে তদন্ত করে দেখে তাঁদের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত না থাকার প্রমাণ পেয়েছেন। ওই আর্জির কথা জানাজানি হতেই প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন রণজিৎবাবু। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, শাসকদলের লোকেদের মদত করতেই পুলিশ হত্যার মতো ঘটনায় জড়িতদের ‘ছাড়’ দেওয়ানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। সমালোচনার মুখে মামলার শুনানির দিন নিজের অবস্থান বদলে আগের আবেদনটি তুলে নেন।

কিন্তু, ওই ঘটনার পরে পরেই নিহত অমিতের স্ত্রী পুতুল চক্রবর্তী সরকার রণজিৎবাবুর বদলি চেয়ে আবেদন জানান জেলাশাসকের কাছে। পরে মামলা থেকে সরেও দাঁড়ান পিপি। ওই মামলায় তাঁর জায়গায় আসেন তপন গোস্বামী। মামলার শেষ দিন পর্যন্ত তিনিই সরকারি আইনজীবী ছিলেন।

এ দিন তপনবাবু জানান, মোট ২০ জন সাক্ষীর মধ্যে এক চিকিৎসক ও গাড়ির চালক বাদ দিয়ে বাকি সকলেই পুলিশকর্মী ছিলেন। তবে কারও সাক্ষ্য থেকেই অভিযুক্তদের খুনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ দিতে পারেননি।

জেলা আদালতের অনেক আইনজীবী বলছেন, প্রমাণ না মেলার অন্যতম প্রধান কারণ পুলিশের সাক্ষ্য। তাঁদের দাবি, সঠিক ভাবে মামলাই সাজায়নি পুলিশ। দ্বিতীয়ত, অভিযোগকারী, তদন্তকারী অফিসার, গাড়ির চালক থেকে দুবরাজপুর থানার তৎকালীন পুলিশকর্মীদের যাঁরাই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকে ঘটনার বিবরণ দিলেও অভিযুক্তদের চিনতে অস্বীকার করেছেন। প্রত্যেকের দাবি ছিল, রাতের অন্ধকারে অভিযুক্তদের তাঁরা চিনতে পারেননি। এক আইনজীবীর প্রশ্ন, ‘‘সাক্ষীরা যদি অভিযুক্তদের চিনতেই না পারেন, তা হলে সাজা হবে কী করে?’’

আদালতে যখন এমন সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব চলছে, তখন পুতুলদেবীর বলেছিলেন, ‘‘যাঁদের সামনে ঘটনা ঘটল, যাঁরা অভিযুক্তদের গ্রেফতার করলেন, তাঁরাই যদি চিনতে না পারেন তাহলে আর কে চিনবেন! মামলার ভবিষ্যৎ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।’’ এ দিন রায় জানার পরে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই মামলা যে ভাবে এগিয়েছে, এর থেকে বেশি কিছু আশা করিনি।’’ বর্তমান পাবলিক প্রসিকিউটর মলয় মুখোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, পুলিশের তদন্তে ফাঁকফোঁকর ছিল বলেই আদালত অভিযুক্তদের মুক্তি দিয়েছে।

তবে এ দিন বেকসুর খালাস পেয়ে পুলিশকেই দুষেছেন সদ্য মুক্তিপ্রাপ্তেরা। শেখ আলিম বলছেন, ‘‘সত্যের জয় হয়েছে। পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। তাই কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি।’’ প্রৌঢ় শেখ লালু, শেখ মুস্তফারা দাবি করেন, ‘‘পুলিশ আমাদের ফাঁসিয়েছিল। তাই এ ভাবে চার বছর জেল খাটতে হল।’’

চুঁচুড়ার বাড়িতে বসে অমিতের পিসতুতো বোন শর্মিষ্ঠা বলেন, ‘‘দাদার খুনের ঘটনার পরে আরও কয়েক জন পুলিশ আধিকারিক কর্তব্য পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। সব ঘটনার মামলা চলছে। দাদাকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু, যাদের ধরা হল, তারা ছাড়াও পেয়ে গেল। পুরো মামলা নিয়ে রহস্য থেকে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Investigation ASI Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE