খটখটে: এক সময়ে শহরের এই মাঠেরই নামডাক ছিল। এখন চেহারা এমনটাই। নিজস্ব চিত্র
ছুটির দুপুরে জুনিয়র ফুটবলের ফাইনাল। উদ্বোধন করবেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। বলে একটা কিক করলেন মন্ত্রী। বল গেল, আর গেল জুতোর ডগার চামড়ার বেশ কিছুটা। পুরুলিয়া শহরে মানভূম ক্রীড়া সংস্থার মাঠ যেন জানান দিল, প্রতিযোগিতাটা ফুটবলের হলেও খেলাটা একটা পর্যায়ে প্রায় হার্ডল দৌড়ের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াবে।
শহরের এই মাঠটির বেহাল দশা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। অনূর্ধ্ব ১৭ আন্তঃজেলা ফুটবল ফাইনালে সেটা আর একবার বিব্রত করল জেলাকে। ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল নদিয়া আর মালদহ। দ্বিতীয়ার্ধের ম্যাচ শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই নদিয়ার এক ফুটবলার হেড করতে গিয়ে আছাড় খান মাঠে। অমনি হাঁটুর পাশে কেটে গিয়ে ঝরঝর করে রক্ত পড়তে শুরু করে। দু’একটা জায়গায় সবুজ ছোপ রয়েছে। ঘাস নেই বললেই চলে। কেন এমনটা হবে, প্রশ্ন তুলছেন শহরের বাসিন্দারা। এক সময়ে এই মাঠে খেলাধুলো ছাড়াও নানা কিছু হতো। এখন না বসে যাত্রার আসর, না পড়ে সার্কাসের তাঁবু। সদ্য বর্ষা শেষ হয়েছে। খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের প্রশ্ন, তার পরেও মাঠের হাল এ রকম কেন?
অথচ, এই মাঠেরই একদিন বেশ খ্যাতি ছিল। গত শীতে আইএফএ পরিচালিত ক্লাব কাপ ফুটবলের একাধিক ম্যাচ হয়েছে এখানে। মোহনবাগান-সহ বাংলার একাধিক নামী দল এখানে খেলে গিয়েছে, তা-ও বেশি দিন হয়নি। হয়েছে সুব্রত কাপের খেলা। সেই সুবাদে খেলোয়াড়দের কাছে পরিচিতিও মিলেছে। কিন্তু এমনটা চললে আর কতদিন বড় খেলা আসবে এই মাঠে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন শহরের ক্রীড়াপ্রেমীরা।
জুনিয়র ফুটবলের ফাইনালে মাঠে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি তথা জাতীয় দলের প্রাক্তন গোলরক্ষক তনুময় বসু। মাঠ দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘এই মাঠে ভাল ফুটবল হয় না। ভাল দল তো এই মাঠে খেলবেই না। মাঠে ঘাস নেই। শক্ত জমি বলে বাউন্সও অসমান।’’
প্রতিযোগিতার রানার্স দল নদিয়ার কোচ দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, ‘‘বৃষ্টি হয়েছিল বলে কোনও রকমে খেলেছি। কিন্তু এত শক্ত মাঠ যে খেলোয়াড় পড়ে গেলেই রক্তারক্তি হয়ে যাচ্ছে।’’ হাওড়া দলের কোচ দেবায়ন রায় বলেন, ‘‘ঘাস নেই, উপর থেকে বালি ফেলা রয়েছে। কী আর বলব!’’
রবিবার ফাইনাল খেলা দেখতে দেখতে মন্ত্রী খেদ করছিলেন, ‘‘পাসিং ফুটবল কোথায়? ওয়ান টাচ ফুটবল দেখতেই তো ভাল লাগে।’’ পাশে থাকা এক ক্রীড়ারসিক উত্তর দেন, ‘‘মাঠটার অবস্থা দেখেছেন? একেবারে ন্যাড়া। এতে কী আর ওই সমস্ত হয়!’’
কী করণীয়? তনুময় বসু জানাচ্ছেন, মাঠের পুরো ভোল বদলে ফেলা দরকার। উপরের শক্ত মাটি তুলে দিতে হবে নরম মাটি। পুরুলিয়ার উপ-পুরপ্রধান বৈদ্যনাথ মণ্ডল এই ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘‘মাঠটা যে নতুন করে তৈরি করতে হবে সে বিষয়ে আমরাও একমত। অভি়জ্ঞতা রয়েছে, এ রকমের কোনও সংস্থাকেই দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।’’
মানভূম ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অর্দ্ধেন্দু ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সংস্থাকে দু’কোটি টাকা দিয়েছেন। সেটা দিয়ে আগে মাঠটাই তৈরি করা হবে।’’
কবে? প্রশ্ন করছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy