Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
রক্ষী বা সিসিটিভি নেই, নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন

ভল্ট কেটে টাকা লুঠ পুরুলিয়ার ব্যাঙ্কে

রক্ষী নেই। নেই সিসিটিভি-ও। তার উপরে পিছনের জানলার রড বেঁকিয়ে ভিতরে ঢুকে প্রথমেই সাইরেনের তার কেটে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ফলে, ময়দান একেবারে ফাঁকা! আর ফাঁকা মাঠে গোল করার মতোই ভল্ট কেটে বিনা বাধায় ব্যাঙ্কের টাকা লক্ষাধিক লুঠ করে পালিয়ে গেল দুষ্কৃতী দল।

জানলার এই রড ভেঙেই ব্যাঙ্কের ভিতরে ঢোকে দুষ্কৃতীর।

জানলার এই রড ভেঙেই ব্যাঙ্কের ভিতরে ঢোকে দুষ্কৃতীর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৫ ০০:৪৭
Share: Save:

রক্ষী নেই। নেই সিসিটিভি-ও। তার উপরে পিছনের জানলার রড বেঁকিয়ে ভিতরে ঢুকে প্রথমেই সাইরেনের তার কেটে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ফলে, ময়দান একেবারে ফাঁকা! আর ফাঁকা মাঠে গোল করার মতোই ভল্ট কেটে বিনা বাধায় ব্যাঙ্কের টাকা লক্ষাধিক লুঠ করে পালিয়ে গেল দুষ্কৃতী দল।

শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাঙ্কের বিবেকানন্দ নগর শাখায়। ঘটনার খবর পেয়ে জেলা পুলিশের কর্তারা ব্যাঙ্কে সরেজমিন তদন্তে যান। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনও কেউ ধরা পড়েনি।” ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, ভল্ট থেকে দুষ্কৃতীরা ২২ লক্ষেরও বেশি টাকা লুঠ করেছে। তবে, এই ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, পুরুলিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একটা বড় অংশেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা ঢিলেঢালা।

পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের পাশেই পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ লাগোয়া এই ব্যাঙ্কটির অবস্থান। ব্যাঙ্কের পাশেই এই এলাকার ডাকঘর। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে ওই ব্যাঙ্কের চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মী, যিনি প্রতিদিন ব্যাঙ্ক ঝাড়পোঁছ করেন, তাঁকে ডাকঘরের এক কর্মী জানান, শনিবার রাতে তিনি ব্যাঙ্ক থেকে খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও একবার সাইরেন বাজার শব্দ পেয়েছেন। এ কথা শুনে ওই চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ব্যাঙ্কের দরজা খুলে দেখেন পিছনের দিকের একটি জানলার রড ভাঙা। ব্যাঙ্কের ভল্ট মেঝের উপরে পড়ে রয়েছে। ভল্টের সামনের অংশ অনেকটা কাটা। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার বিক্রম কুমারকে ঘটনাটি জানান। ব্যাঙ্ক লুঠের খবর পেয়েই তিনি এবং ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের রিজিওনাল ম্যানেজার অসিত ঘোষ ব্যাঙ্কে পৌঁছে যান। চলে আসেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য, ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা কী ভাবে ব্যাঙ্কের পিছনের দিকের জানলার রড বেঁকিয়ে ভিতরে ঢুকে দুষ্কৃতীরা ভল্টের দরজা ভেঙে ও ভল্ট কেটে অবাধে লুঠপাট চালিয়েছে, তা খুঁটিয়ে দেখেন।

ভাঙা ভল্ট।

যে বাড়িটিতে ব্যাঙ্ক রয়েছে, সেটি একতলা। ব্যাঙ্কের পিছনের দিক ফাঁকা। সেদিকে ঝোপঝাড় রয়েছে। পাশাপাশি পিছনের দিকটি রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের সীমানাও। বিদ্যাপীঠের ছাত্রাবাস বা আবাসন থেকে এই দিকটি বেশ খানিকটা দূরে। দুষ্কৃতীরা ব্যাঙ্কের পিছনের দিকের জানলার রড বেঁকিয়ে জানালার কপাট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ে। ঢুকেই বাঁ দিকে টাকা তোলা-জমার কাউন্টারের পিছনের দিকে একটি ঘরে ভল্ট রাখা থাকে। ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক জানান, সেই দরজা ভাঙলেই ব্যাঙ্কের সাইরেন বেজে উঠবে। এ দিন অবশ্য পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে সেই সাইরেনের তার কাটা রয়েছে। সাইরেন বেজে উঠতেই দ্রুত তার কেটে ফেলেছিল দুষ্কৃতীরা বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের। ছাদের দেওয়ালে সাইরেনের বিকল্প একটি সংযোগও ছিল। এই সাইরেনটি ভল্টের দরজা ভাঙা হলেই বাজতে শুরু করার কথা। সেই তারটিও আগেই কেটে দিয়েছিল লুঠেরার দল। তদন্তকারীদের অনুমান, ব্যাঙ্কের সাইরেন কোথায় রয়েছে, সে সম্পর্কে দুষ্কৃতীদের আন্দাজ ছিল। হয়তো বা আগাম খবরও ছিল।

ব্যাঙ্কের শাখা ম্যানেজার বিক্রম কুমার বলেন, “খুব অল্প সময়ের জন্য সাইরেনের ওই আওয়াজই বোধহয় শুনেছিলেন ডাকবিভাগের কর্মী। এ দিন সকালে তিনি আমাদের লোককে তা জানান।” এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় ব্যাঙ্কের ভল্ট মেঝেয় শোয়ানো অবস্থায় রয়েছে। গ্যাস কাটার জাতীয় কোনও কিছু দিয়ে ভল্টের সামনের অংশের বেশ খানিকটা কেটে অপারেশন চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। লোহার চাদরের ভল্টটি মেঝেয় খাতা-কাগজ ইত্যাদির উপরে শোওয়ানো ছিল। তদন্তকারী পুলিশ কর্তাদের অনুমান, শব্দ এড়ানোর জন্যই ভল্টটিকে এ ভাবে কাগজপত্রের উপরে ফেলেছিল দুষ্কৃতীরা। ব্যাঙ্কের রিজিওনাল ম্যানেজার বলেন, “ঠিক কত টাকা লুঠ হয়েছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি।” পুলিশ সূত্রের খবর, কিছুদিন আগেই পুলিশ শহর ও শহর লাগোয়া বিভিন্ন ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের নিয়ে একটি বৈঠক করে। সেই বৈঠকে ব্যাঙ্কের নিরাপত্তার প্রশ্নে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে কয়েক দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রস্তাবের মধ্যে ব্যাঙ্কের প্রতিটি শাখায় সিসিটিভি বসানোর বিষয়টিও ছিল। তদন্তকারীরা এ দিন ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের কাছে জানতে চান, সিসিটিভি লাগানো রয়েছে কিনা। আধিকারিকদের মুখ চাওয়াচাওয়ি দেখে তাঁরা বুঝতে পারেন যে, ব্যাঙ্কে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। অসিতবাবু তাঁদের জানান, তাঁরা বিভিন্ন শাখায় সিসিটিভি বসানোর কাজ শুরু করেছেন। ব্যাঙ্কে কেন রক্ষী নেই, তার সদুত্তরও মেলেনি।

ছবি: সুজিত মাহাতো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE