Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সমস্যা ছাপিয়ে সাফল্য

আর শেষ পর্যন্ত এনে দিয়েছে সেরার স্বীকৃতি। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের সমীক্ষায় ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে একশো দিনের কাজ কার্যকরী রূপে বাস্তবায়নের নিরিখে দেশের মধ্যে শীর্ষে উঠে এসেছে বাঁকুড়া জেলা। রাজ্যের আরও এক জেলা কোচবিহার রয়েছে ওই তালিকায় বাঁকুড়ার পরেই।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৫১
Share: Save:

শ্রমিকদের পাওনা মজুরি দেওয়া নিয়ে সমস্যা ছিল। যার ফলে জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েতে ঘেরাও, বিক্ষোভ, ডেপুটেশন দেখা গিয়েছে। এমনকি, বিভিন্ন পঞ্চায়েতের মাধ্যমে কাজের জন্য যে সমস্ত জিনিসপত্র কেনা হয়েছিল, তার দামও বকেয়া দীর্ঘ দিন। কিন্তু ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে বাঁকুড়ার একশো দিনের কাজের হিসাব অন্য বছরগুলিকে ছাপিয়ে গিয়েছে। আর শেষ পর্যন্ত এনে দিয়েছে সেরার স্বীকৃতি। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের সমীক্ষায় ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে একশো দিনের কাজ কার্যকরী রূপে বাস্তবায়নের নিরিখে দেশের মধ্যে শীর্ষে উঠে এসেছে বাঁকুড়া জেলা। রাজ্যের আরও এক জেলা কোচবিহার রয়েছে ওই তালিকায় বাঁকুড়ার পরেই।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস শনিবার বলেন, “সদ্য কেন্দ্র থেকে চিঠি দিয়ে আমাদের একশো দিনের কাজের প্রকল্পের পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পকে যথাযথ ভাবে বাস্তবায়িত করার জন্যই বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে।” প্রশাসন সূত্রের খবর, এর আগে একশো দিনের কাজে বাঁকুড়া জেলা পুরস্কৃত হয়েছিল ২০০৭-০৮ এবং ২০১১-১২ অর্থবর্ষে। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের কাজের রেকর্ড বিগত বছরগুলিকেও ছাপিয়ে গিয়েছে বলে দাবি প্রশাসনিক কর্তাদের।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বাঁকুড়া জেলায় ১ কোটি ৫৬ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিটি পরিবার বছরে গড় কাজ পেয়েছিল ৭৫ দিন। তবে শ্রমিকদের মজুরি সময় মতো মেটানো না হওয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয় উপভোক্তাদের মধ্যে। জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েতে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান মানুষজন। ব্লক ও জেলা প্রশাসনের কাছে টাকা মেটানোর দাবিতে স্মারকলিপিও দেন শ্রমিকেরা। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (‌জেলা পরিষদ) শঙ্কর নস্কর বলেন, “ওই বছর মজুরি বাবদ যা বরাদ্দ ছিল, তার চেয়ে বেশি কাজ হয়েছিল জেলায়। তাই বছর শেষের কয়েকটি মাস শ্রমিকদের মজুরি ঠিক ভাবে দেওয়া যাচ্ছিল না। তবে সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।”
ঘটনা হল, একশো দিনের কাজ প্রকল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের বছরভর স্থায়ী উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রক্রিয়া কয়েকবছর আগে থেকেই শুরু করেছিল জেলা প্রশাসন। সেই লক্ষ্যে এই প্রকল্পে কখনও ফলের বাগান তৈরি, কখনও আবার ছাই-ইট তৈরির কারখানা বা পোল্ট্রি শেড গড়ার কাজও হয়েই চলেছে। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে এই সবকে ছাপিয়ে প্রশাসন নজর দেয় জল ধরে রেখে, সেচের কাজে লাগিয়ে জেলায় সেচসেবিত জমির পরিমাণ বাড়ানো, নদী সংস্কার এবং অনুর্বর জমিকে চাষযোগ্য করে তোলার উপরে।
একশো দিনের কাজ প্রকল্পের জেলা আধিকারিক জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস জানান, জেলার উঁচু, মাঝারি ও নিচু জমিতে জল ধরে রাখার লক্ষ্যে ছোট হাপা, ডোবা বা পুকুর খননে জোর দেওয়া হয়। জেলার ১১৮টি পঞ্চায়েতে এমন ৫৫৩টি প্রকল্প গড়ে জল ধরে রাখার কাজ করা হয়েছে। ফলে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার ৩৭,৭৬৬ হেক্টর মিটার জমি সেচের আওতায় এসেছে। জেলার প্রায় ৭৯ কিলোমিটার নদীপথ ও নদীর পাড় সংস্কার করা হয়েছে। এতে নদীর জলধারণ ক্ষমতা বেড়েছে। মাটির তলার জলস্তর ঠিক রাখতেও একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বিভিন্ন জায়গায় জল ধরে রাখার প্রকল্প হয়েছে। ৭৫৬ হেক্টর অনুর্বর জমিতে বৃক্ষরোপণ করে সাধারণ মানুষের নিয়মিত আয় সুনিশ্চিত করা হয়েছে।
জীবনকৃষ্ণবাবু বলেন, “একশো দিনের কাজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নিয়মিত আয় নিশ্চিত করাই কেবল নয়, পরিবেশ রক্ষা, জলসংরক্ষণ সবই করা হচ্ছে এই জেলায়। অন্যদের থেকে একটু আলাদা ভাবেই আমরা একশো দিনের প্রকল্পকে কাজে লাগাতে নিয়মিত পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছি।” রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা বলেন, “প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের মধ্যে সংযোগ করে কাজ করে চলেছেন জেলায়। সমস্ত কাজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণে রয়েছে। এতেই মিলছে সাফল্য।”
যদিও বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র বলেন, “একশো দিনের কাজে অনেক ক্ষেত্রেই প্রশাসন বা পঞ্চায়েতগুলি পক্ষপাত করে থাকে। যে দিন এই ঘটনা একেবারে বন্ধ করা যাবে, সে দিনই আক্ষরিক অর্থে এই জেলা সেরা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE