Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বড় নোট শুনে ফেরাচ্ছে মেডিক্যালও

গ্রাহকদের হয়রানি কমাতে হাসপাতাল, পেট্রোল পাম্পের মতো জরুরি পরিষেবায় পুরনো নোট নেওয়ার কথা ছিল। নোট-কাণ্ডের হপ্তাখানেক পরে সেই জরুরি পরিষেবাতেই ভোগান্তির নানা ছবি প্রমাণ করছে, তা ছিল কথার কথা মাত্র!

বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে বন্ধ এটিএম। টাকা আসার অপেক্ষায়  দীর্ঘ লাইন। বাতিল টাকায় এমআরআই করা যাবে না শুনে হতাশ। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে বন্ধ এটিএম। টাকা আসার অপেক্ষায় দীর্ঘ লাইন। বাতিল টাকায় এমআরআই করা যাবে না শুনে হতাশ। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪২
Share: Save:

গ্রাহকদের হয়রানি কমাতে হাসপাতাল, পেট্রোল পাম্পের মতো জরুরি পরিষেবায় পুরনো নোট নেওয়ার কথা ছিল। নোট-কাণ্ডের হপ্তাখানেক পরে সেই জরুরি পরিষেবাতেই ভোগান্তির নানা ছবি প্রমাণ করছে, তা ছিল কথার কথা মাত্র!

সরকারি ও বেসরকারি, যৌথ উদ্যোগে পিপিপি মডেলে বাঁকুড়া মেডিক্যালে চালু হয়েছে এমআরআই সেন্টার। মঙ্গলবার সেখানে এসেছিলেন সিমলাপালের বাসিন্দা উমাপতি ষন্নিগ্রহী। সঙ্গে পুরনো পাঁচশ টাকার নোট। ওই সেন্টারের কর্মীরা তাঁকে সাফ জানিয়ে দেন বাতিল হওয়া নোট নেওয়া হবে না! কেন? সেন্টারের কর্মীদের যুক্তি, এটি আধা সরকারি সেন্টার। সেই কারণেই তাঁরা বাতিল নোট নেবেন না।

একই কারণে এ দিন এমআরআই করাতে পারছিলেন না ছাতনার শিশির মল্লও। তাঁর কাছেও ছিল পুরনো নোট। উমাপতিবাবুর কথায়, “খোদ প্রধানমন্ত্রী তো আশ্বাস দিয়েছিলেন সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পুরনো নোট চলবে। তারপরেও কেন সমস্যায় পড়তে হবে?” শিশিরবাবু আবার ওই কর্মীদের শাস্তির দাবি তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দেশটা তো আর মগের মুলুক হয়ে যায়নি!’’

শুধু ওই ডায়গনস্টিক সেন্টারে গিয়েই ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে এমনটা নয়। হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধ দোকানেও বাতিল হওয়া বড় নোটে ওষুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার কেনাকাটার শর্ত রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই দোকানে ওষুধ কিনতে আসা রোগীদের অভিযোগ, ‘‘ন্যূনতম তিনশো টাকার ওষুধ না কিনলে বাতিল নোট নিচ্ছে না দোকান।’’ ওন্দার মুকুন্দপুর এলাকার বাসিন্দা মৈনুদ্দিন মির্জা জানালেন, বাবার জন্যে চিকিৎসক যে ওষুধ লিখে দিয়েছেন তার মোট দামই দু’শো টাকা। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তা হলে ওষুধ কিনব কী করে?’’ একই সমস্যায় সোনামুখীর মানস খাওয়াসও। হাসপাতালের চিকিৎসক তাঁকে ১৬০ টাকার ওষুধ লিখে দিয়েছেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে পারেননি তিনিও।

কেন এ ভাবে রোগীদের ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে?

হাসপাতালের সুপার পঞ্চানন কুণ্ডুর কথায়, “বড় নোট বাতিল হওয়ার ঘোষণার পরেই সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিলাম রোগীদের কাছ থেকে ওই নোট নিয়ে পরিষেবা দিতে হবে। কাউকে ঘুরিয়ে দেওয়া চলবে না।” তিনি জানাচ্ছেন, রোগীদের তরফে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বাতিল হওয়া নোট নেওয়া হচ্ছে না বলে কোনও অভিযোগ জানানো হয়নি। তবে গোটা বিষয়টি নিয়ে তিনি এমআরআই সেন্টার ও ন্যায্য মূল্যের ওষুধ দোকানের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

এই অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের ব্যাঙ্ক থেকে নগদে খুচরো টাকা তোলা ছাড়া গতি নেই। হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনেই দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম রয়েছে। সেই এটিএমগুলি দিনের বেশির ভাগ সময়েই কাজ করছে না। সকাল থেকেই ওই এটিএমগুলির সামনে লম্বা লাইন পড়ছে রোগীর আত্মীয় থেকে হাসপাতালের ডাক্তার, সকলেরই। ব্যাঙ্কের তরফে টাকা ভরে দেওয়ার পরেই হামলে পড়ছেন লাইনে দাঁড়ানো গ্রাহকেরা। এই পরিস্থিতিতে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই খালি হয়ে যাচ্ছে এটিএমের ভাঁড়ার! তারপর আবার দিনভর অপেক্ষার পালা শুরু হচ্ছে।

সোমবার এটিএম খোলে দুপুর একটার পরে। তারপরেই লম্বা লাইন চোখে পড়েছিল। একই অবস্থা ছিল এ দিনও। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ঋক চক্রবর্তী, রেজাউল লতিফেরা সকাল থেকেই এটিএমের সামনে টাকা তোলার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কোনও মতে টাকাও তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, “সকলেই সমস্যায় পড়েছি। এটিএমগুলো দিনভর পরিষেবা দিলে এমন সমস্যা হতো না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE