Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ধর্না চত্বরে রোগী দেখলেন জুনিয়রেরা

মেডিসিন, শিশুরোগ, স্নায়ুরোগ, দন্ত, নাক-কান-গলা, শল্য, স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি প্রভৃতি বিভাগের ডাক্তারেরা ছিলেন। রোগীদের জায়গা করে দিতে ধর্নামঞ্চ থেকে আন্দোলনকারীদের অনেকে এ দিন একপাশে সরে যান। রোগীদের জন্য টেবিলে জলের বোতলও রাখা ছিল।

মুখোমুখি: হাসপাতাল চত্বরে রোগী দেখছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

মুখোমুখি: হাসপাতাল চত্বরে রোগী দেখছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

নিজস্ব প্রতিবেদন
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৯ ০০:৪৩
Share: Save:

আন্দোলনের অনড় অবস্থান থেকে নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিত সোমবার সকালেই দেখিয়েছিলেন বাঁকুড়া মেডিক্যালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। এ দিন সকালে ধর্না মঞ্চে টেবিল পেতে সিনিয়র ডাক্তারদের নিয়ে তাঁরা রোগী দেখলেন। নবান্নে বৈঠকের পরে রাতে ধর্না প্রত্যাহার করার কথা তাঁরা ঘোষণা করলেন। জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে জানানো হয়, যত শীঘ্র সম্ভব তাঁরা কাজে যোগ দিচ্ছেন। মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান ও সুপার গৌতমনারায়ণ সরকার বলেন, ‘‘জুনিয়র ডাক্তারেরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নবান্নে বৈঠকের পরে খুশি। আশা করি খুব শীঘ্রই তাঁরা কাজে যোগ দেবেন।’’

এনআরএস-কাণ্ডের জেরে মঙ্গলবার বিকেল থেকে অবস্থানে বসেন বাঁকুড়া মেডিক্যালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। আউটডোর অধিকাংশ দিনই বন্ধ থাকে। ইন্ডোর পরিষেবা পুরোপুরি সিনিয়র ডাক্তারদের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তাঁদের মধ্যে ২১ জন আবার গণইস্তফা দেন। ইন্ডোর চালু থাকলেও সেখানকার পরিষেবার হাল কার্যত বেহাল হয়ে পড়ে বলে রোগীর পরিজনদের অভিযোগ।

এই অবস্থায় রবিবার আন্দোলনকারীরা জানিয়েছিলেন, রোগীদের স্বার্থে সোমবার তাঁরা ধর্না মঞ্চেই সম্প্রসারিত জরুরি পরিষেবা দেবেন। আন্দোলনকারীদের তরফে এক ডাক্তার এ দিন বলেন, ‘‘এখানে আউটডোর পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে না। জরুরি বিভাগের চাপ কমাতে তাঁরা রোগীদের পরীক্ষা করছে।’’ সেখানে এ দিন প্রায় ১০টি টেবিলে এক হাজার রোগীকে দেখা হয় বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান।

এ দিন সেখানে মেডিসিন, শিশুরোগ, স্নায়ুরোগ, দন্ত, নাক-কান-গলা, শল্য, স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি প্রভৃতি বিভাগের ডাক্তারেরা ছিলেন। রোগীদের জায়গা করে দিতে ধর্নামঞ্চ থেকে আন্দোলনকারীদের অনেকে এ দিন একপাশে সরে যান। রোগীদের জন্য টেবিলে জলের বোতলও রাখা ছিল।

প্রায় এক সপ্তাহ ঘুরে যাওয়ার পরে এ দিন ডাক্তারদের দেখা পেয়ে খুশি রোগীরাও। সোনামুখীর শ্যামনগরের বৈশাখি মুর্মু বলেন, ‘‘পেট ব্যথার চিকিৎসা করাচ্ছি। ডাক্তারের কথা মতো পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে এসে ক’দিন ধরে ফিরে যাচ্ছিলাম। এ দিন ডাক্তার দেখাতে পেরে শান্তি পেলাম। গত কয়েকদিন ডাক্তারবাবুরা এ ভাবে রোগী দেখলেও আমাদের ভুগতে হত না।’’

গলসি থানার শাসপুর থেকে দাঁতের সংক্রমণের সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন ভগবতী সাহা। তিনি বলেন, ‘‘দাঁতের ব্যথায় পাঁচ-ছ’দিন ধরে কাবু। হাসপাতালে দু’দিন এসে ফেরত গিয়েছি। এ দিনও এসে আউটডোর বন্ধ দেখে নিরাশ হই। লোকজনের মুখে খবর পেয়ে এখানে এসে ডাক্তার দেখলাম।’’ অধ্যক্ষ নিজেও পরিদর্শনে এসেছিলেন। তিনি ঘুরে ঘুরে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এত মানুষ ফিরে যাচ্ছিলেন। তোমরা রোগী দেখে খুব ভাল করেছ।’’

এ দিন সারা দেশ ব্যাপী চিকিৎসকদের ডাকে ধর্মঘটে সাড়া দিয়ে পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল, রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ও খাতড়া মহকুমা হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ রাখা ছিল।

খাতড়ার জামদা গ্রামের স্বপন হাঁসদা, হিড়বাঁধ থানার মশানঝাড় গ্রামের সুমন্ত হাঁসদা বলেন, ‘‘ডাক্তারেরা যে ধর্মঘট ডেকেছেন, তা জানতাম না। আউটডোরে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার সময়েও কেউ কিছু বলেনি। দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরে বেলা ১০টায় খবর পাই, আউটডোরে চিকিৎসা হবে না।’’ পরে তাঁদের জরুরি বিভাগে গিয়ে চিকিৎসা করাতে বলা হয়। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার তাপসকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘এ দিন জরুরি বিভাগে প্রায় পাঁচশোর বেশি রোগীর চিকিৎসা হয়েছে।’’

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের আউটডোরে অবশ্য টিকিট দেওয়া হয়নি। ঝালদা থেকে অসুস্থ ২ বছরের নাতনিকে নিয়ে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে এসেছিলেন অম্বা বিবি। তিনি বলেন, ‘‘নাতনির মাথার সিটি স্ক্যান করাতে এ দিন ডাক্তারবাবু আসতে বলেছিলেন। কিন্তু আউটডোরের দরজায় তালা। তাই ফিরে যেতে হল।’’ তবে খবর পেয়ে জরুরি বিভাগে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পেরেছেন হুড়ার মাগুড়িয়া থেকে অসুস্থ তিন বছরের মেয়ে অম্বিকাকে নিয়ে আসা বাসন্তী মাহাতো। নবান্নের বৈঠক সন্তোষজনক জানিয়ে দুই জেলার অধিকাংশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার থেকে আউটডোরে ফের ডাক্তারেরা রোগী দেখবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bengal Doctors Strike Purulia Bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE