Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বিরোধী ভোট জড়ো করে লাভ বিজেপির

একটা পঞ্চায়েতও ছিল না। সেই বিজেপিই সংগঠন বাড়িয়ে এক লাফে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের ৩৮টি আসনের মধ্যে ১০টি দখল করে নিল। আর সেখানে গতবারে জেলা পরিষদের জেতা তিনটি আসন হাতছাড়া হল বামেদের। আসন কমেছে কংগ্রেসেরও।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৮ ০১:২০
Share: Save:

একটা পঞ্চায়েতও ছিল না। সেই বিজেপিই সংগঠন বাড়িয়ে এক লাফে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের ৩৮টি আসনের মধ্যে ১০টি দখল করে নিল। আর সেখানে গতবারে জেলা পরিষদের জেতা তিনটি আসন হাতছাড়া হল বামেদের। আসন কমেছে কংগ্রেসেরও।

যদিও তাঁদের এই ফলকে অপ্রত্যাশিত বলতে নারাজ বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, নির্বাচন মিটতেই তারা জানিয়েছিলেন জেলার বহু গ্রাম পঞ্চায়েত, সমিতি ও জেলা পরিষদের বহু আসনে তাঁদের প্রার্থীরা জিতবেন। বিপর্যয় ঘটবে তৃণমূলের। বাস্তবে সেটাই হয়েছে। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের এই ফলকে বিপর্যয় বলে মানতে চাননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। তিনি বলছেন, ‘‘কিছু জায়গায় খারাপ ফল হয়েছি ঠিকই। কিন্তু এটা বিপর্যয় নয়। আমরা ফল পর্যালোচনা করছি। কিছু ক্ষেত্রে সাংগঠনিক দুবর্লতা ছিল বলে বোঝা যাচ্ছে।”

বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের গণনা শুরু হতেই একের পর এক এলাকায় শাসকদলের রাশ আলগা হওয়ার খবর আসছিল। আসন হারানোর খবর মিলছিল দুই বিরোধী বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসেরও। পরিবর্তে আশাতীত ফল করতে চলেছে বিজেপি। গণনার শেষে দেখা যাচ্ছে, রঘুনাথপুর মহকুমায় কার্যত গেরুয়া ঝড় বয়ে গিয়েছে। এই মহকুমার ছ’টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে চারটিই দখল করেছে বিজেপি। জেলা পরিষদের ১১টি আসনের মধ্যে চারটিতে জিতেছে বিজেপি। ছ’টি ব্লকের পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে বেশিরভাগ এসেছে বিজেপির দখলে। শুধু রঘুনাথপুর মহকুমাই নয়, বিজেপি ভাল ফল করেছে জঙ্গলমহল এলাকাতেও। তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতি দখল করা ছাড়াও জয়পুর, বরাবাজারে শাসকদলকে সমানে টক্কর দিয়েছে তারা। এই দুই সমিতিতে কারা শেষ পর্যন্ত বোর্ড গড়বে, সেটাও স্পষ্ট নয়।

বস্তুত, মনোনয়ন পর্বেই শাসকদলের সঙ্গে সমানে টক্কর দিয়ে প্রার্থী দিয়ে বিজেপি বুঝিয়ে দিয়েছিল, তারা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। ফলে দেখা গেল, সেটাই হয়েছে।

কিন্তু, কী ভাবে এটা সম্ভব হল? রাজনীতি সচেতন মানুষজন এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে মেতেছেন। তার একটি মত হল, কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের নিচুতলার ভোট কৌশলে নিজেদের দিকে আনতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। বিভিন্ন দলের প্রাপ্ত আসনের দিকে চোখ রাখলেই স্পষ্ট, কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের আসন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

গত বারে এই দুই দলের জেতা বহু আসনে এ বার জিতেছে বিজেপির প্রার্থীরা। পাশাপাশি দলের নির্দেশকে অমান্য করেই বহু আসনে বিজেপির সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছিলেন বামফ্রন্টের নিচুতলার কর্মীরা। এতে যতটা লাভ হয়েছে বামেদের, তার থেকে বহুগুণ বেশি লাভ ঘরে তুলেছে বিজেপি। আসন সমঝোতার ভিত্তিতে লড়েই সাঁতুড়ির পঞ্চায়েত সমিতি জিতেছে বিজেপি। একই রসায়নে ওই ব্লকের জেলা পরিষদের আসন গিয়েছে বিজেপির ঝুলিতে। একই ভাবে রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বেশ কিছু পঞ্চায়েতে বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে বহু আসন নিয়ে গিয়েছে বিজেপি।

অন্যদিকে, বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের একটা অংশের ভোটও তাদের দিকে গিয়েছে বলে দাবি করছেন বিজেপির নেতাদের একাংশ। দল সূত্রের খবর, রঘুনাথপুর ২ ব্লক, পাড়া-সহ জঙ্গসমহলের যে এলাকায় বিজেপি ভাল ফল করেছে, সেখানে বাম, কংগ্রেসের নিচুতলার পাশাপাশি তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ অংশের ভোট পেয়েছেন তাঁদের প্রার্থীরা।

তবে সামগ্রিক ভাবে ভাল ফলের কারণ হিসাবে নির্বাচনের অন্তত ছ’মাস আগে থেকে বুথ স্তরে সংগঠন আরও বিস্তারের কাজে তাদের নেমে পড়া ও সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে কর্মীদের নাছোড় লড়াইয়েই এই ফল হয়েছে বলে দাবি করছেন বিজেপির জেলা সভাপতি। এ ছাড়া তৃণমূলকে একমাত্র বিজেপিই রুখতে পারে বলে একটা ধারণা ভোটারদের মনে তৈরি করতে পেরেছিলেন বলে দাবি করছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘প্রচারে গিয়ে আমরা যেমন তৃণমূলের অপশাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলেছি, তেমনিই তৃণমূলকে রুখতে একমাত্র বিজেপিই পারবে এই বিষয়টির উপরেও জোর দিয়েছিলাম।” একই সঙ্গে সুকৌশলে অন্য দুই বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেসের নিচুতলার ভোটকে তাঁরা ‘টার্গেট’ করেছিলেন বলে মানছেন বিজেপির জেলা সভাপতি।

জঙ্গলমহল এলাকার কয়েকটি ব্লকে তাঁদের নিচুতলার ভোট বিজেপির দিকে গিয়েছে বলে মানছেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতোও। তিনি বলেন, “সামগ্রিকভাবে আমাদের ফল খুবই খারাপ হয়েছে বিষয়টা এমন নয়। জেলা পরিষদের একটি আসন বাদ দিয়ে বাকি তিনটি আমরা ধরে রাখতে পেরেছি। তবে তৃণমূলকে প্রতিরোধ করতে বিজেপি পারবে এটা মনে করেই কংগ্রেসের নিচুতলার কিছু অংশের ভোট বিজেপির দিকে গিয়েছে।’’ প্রায় একই পর্যবেক্ষণ সিপিএমের। তবে দলের নেতারা সরাসরি বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ। সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের কথায়, ‘‘নিচুতলার ভোট কখনোই সংগঠিত নয়, এটা ভাসমান। ভোটারদের মধ্যে তৃণমূলকে হারানোর একটা জেদ তৈরি হয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু হতে পারে। আমরা সমস্ত বিষয় পর্যালোচনা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE