Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বড় গোলমাল ছাড়াই ব‌্নধের প্রথম দিন

ধর্মঘট সমর্থনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হল রামপুরহাটে। শহরের পাঁচমাথা এলাকার ঘটনা। সিপিএমের এরিয়া কমিটির সদস্য পার্থপ্রতিম গুহর অভিযোগ, ‘‘ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শহর জুড়ে ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল, পিকেটিং করছিলাম

স্বাভাবিক রইল সিউড়ি বেসরকারি বাসস্ট্যান্ড।

স্বাভাবিক রইল সিউড়ি বেসরকারি বাসস্ট্যান্ড।

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:১১
Share: Save:

পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি


ধর্মঘট সমর্থনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হল রামপুরহাটে। শহরের পাঁচমাথা এলাকার ঘটনা। সিপিএমের এরিয়া কমিটির সদস্য পার্থপ্রতিম গুহর অভিযোগ, ‘‘ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শহর জুড়ে ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল, পিকেটিং করছিলাম। কিন্তু, রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের নেতৃত্বে পুলিশ আমাদের বিনা প্ররোচনায় হেনস্থা করেছে।’’ আরও অভিযোগ, মহিলা পুলিশ ছাড়াই মহিলাদের টানা-হ্যাঁচড়া করা হয়েছে। জেলা পুলিশ তা মানতে চায়নি। মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ধর্মঘট সমর্থনকারীরা শহরে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করছিল। পুলিশ তাতে বাধা দিয়েছে।’’ কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকের ইউনিফর্ম ধরে টানাটানি করা হয়েছে বলেও তাঁর অভিযোগ। তার পরেই কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়।

শঙ্কায় পরীক্ষার্থীরা


রামপুরহাট কামারপট্টি এলাকার বাসিন্দা শিবাজী দাস। ছেলে সুব্রত রামপুরহাট কলেজের প্রথম বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা চলছে। সুব্রতর পরীক্ষাকেন্দ্র পড়েছে মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা লপসা হেমব্রম কলেজে। আজ, বুধবার দুপুরে পরীক্ষা আছে। শিবাজীবাবু সাইকেলে চলে এসেছিলেন বাসস্ট্যান্ডে। একটাই প্রশ্ন, বাস কি চলবে? এই প্রশ্ন অবশ্য অনেকেরই। সোমবার রামপুরহাট মহকুমায় বেসরকারি বাস চলেনি। ফলে আশঙ্কা আরও বেড়েছে। অনেকেই অবশ্য বিকল্প পথ ভেবে রাখছেন। কেউ বলে রেখেছেন অটো, টোটোকেও।

পাঁচামি স্বাভাবিক


বন্‌ধের প্রভাব পড়ল না পাঁচামি শিল্পাঞ্চলে। বীরভূমের সব থেকে বড় শিল্পাঞ্চল হল পাঁচামি পাথর শিল্পাঞ্চল। মহম্মদবাজার এলাকায় রয়েছে শিল্পাঞ্চলটি। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার গাড়ি পাথর বোঝাই করে চলে যায় রাজ্যের বিভিন্ন অংশে। এখানকার শিল্পের উপরে নির্ভর করে দিন কাটে বহু শ্রমিকের। বন্‌ধের প্রথম দিন, মঙ্গলবার কোনও প্রভাব ছিল না পাথর শিল্পাঞ্চলে। এলাকার তৃণমূল ব্লক সভাপতি তাপস সিংহেরও দাবি, পাঁচামি শিল্পাঞ্চল এ দিন স্বাভাবিক ছিল। আর পাঁচটা দিনের মতোই কাজ হয়েছে।

বাড়তি কড়ি, তবু ভরসা টোটো


জেলাসদর ও দুবরাজপুরে তেমন অসুবিধা না হলেও রাজনগর, খয়রাশোল সহ জেলার যে সব এলাকায় সরকারি বাস চলাচল করে না সেখানে বেসরকারি বাসের অভাব অনুভূত হয়েছে। বাস না থাকায় অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাস চালানো মালিকদের উপরে নির্ভর করে না। যেখানে চালক, খালাসি চেয়েছেন সেখানে বাস চলেছে। যেখানে চাননি, চলেনি। এই পরিস্থিতিতে সহায় হয়েছে অটো, টোটো থেকে শুরু করে ছোট গাড়ি। পথে নামা লোকজন বলছেন, ‘‘ওরা ছিল বলেই দেরিতে হলেও গন্তব্যে পৌঁছেছি।’’ অবশ্য তার জন্য অনেক জায়গাতেই গুণতে হয়েছে বাড়তি কড়ি। নলহাটি থানার কুরুমগ্রামের বাসিন্দা, পেশায় রংয়ের মিস্ত্রি হৃদয় মণ্ডল জানালেন, ভাইপো অসুস্থ। তাই গ্রাম থেকে ৫০ টাকার বদলে ২০০ টাকা দিয়ে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়েছে। এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকেরই। তবে তা নিয়ে বড়সড় গোলমালের খবর নেই।

ডাকঘর, ব্যাঙ্কে সমস্যা


সপ্তাহ শুরুর প্রথম দিকে ব্যাঙ্ক ও ডাকঘর বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন প্রচুর মানুষ। সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিআইটিইউ সহ ১১টি ট্রেড ইউনিয়ন ও শিল্পভিত্তিক ফেডারেশনগুলির ডাকা দেশজুড়ে দু’দিন ব্যাপী ধর্মঘটের মধ্যে রয়েছে ব্যাঙ্ক ও ডাকঘর কর্মচারীদের সংগঠনগুলিও। ফলে রাষ্ট্রায়াত্ত সব ক’টি ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের শাখা বন্ধ ছিল মঙ্গলবার। ব্যতিক্রম বেসরকারি ব্যাঙ্ক। একই ভাবে বন্ধ থাকার কথা আজ, বুধবারও। রবিবার থেকে বুধবার মাঝে মাত্র এক দিন সোমবার ব্যাঙ্ক ও ডাকঘর খোলা ছিল। তার পরেই সব বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন জেলাবাসী। নানুর, লাভপুর, ময়ূরেশ্বর এবং
সাঁইথিয়ায় ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। স্কুল-কলেজ, অফিস, দোকানপাট খোলা ছিল। কীর্ণাহারে ২টি ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল৷ সাঁইথিয়া হেড পোস্টঅফিসে কর্মীরা থাকলেও দরজা বন্ধ ছিল। বাস চলাচল করলেও তার সংখ্যা ছিল খুবই কম।

স্টেশনে বাধা


ধর্মঘটের সমর্থনে মঙ্গলবার সকালে রামপুরহাট স্টেশনে ট্রেন অবরোধের চেষ্টা হয়। কিন্তু, রেল পুলিশের বাধায় প্রথম দিকে স্টেশন চত্বরে প্রবেশ করতে পারেননি সমর্থনকারীরা। পরে তাঁরা স্টেশনে ঢুকে প্লাটফর্ম ধরে মিছিল
করে বেরিয়ে যান। রেলপুলিশ জানায়, ভোর পাঁচটা নাগাদ ধর্মঘটের সমর্থনকারীরা স্টেশনে ঢুকলেও হাওড়াগামী বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার বা অন্য ট্রেনগুলি নির্দিষ্ট সময়ে স্টেশন ছেড়ে চলে যায়।

পর্যটকের দেখা নেই


শহরে ধর্মঘটের সে রকম প্রভাব না পড়লেও এ দিন শান্তিনিকেতনের রাস্তায় পর্যটকদের বিশেষ দেখা যায়নি। অন্য দিন যে সব
জায়গায় পর্যটকদের থিকথিকে ভিড় থাকে, মেলার মাঠে একের পর এক বাস সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মঙ্গলবার সব জায়গায় কার্যত ফাঁকা ছিল। হাতে গোনা পর্যটক দেখা গেছে শান্তিনিকেতনের রাস্তায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bandh Bharat Bandh CPM Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE