Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

মুচলেকাতেই শেষ নয়, প্রচারেও পরিবার

এত দিন নাবালিকার বিয়ে রুখে, পরিবারকে সচেতনতার পাঠ বা আইনে শাস্তি বিধানের কথা জানিয়ে তাদের মুচলেকা নিয়ে নিত প্রশাসন।

মহেন্দ্র জেনা
বোলপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৭ ০২:১৪
Share: Save:

নিজেদের নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সব আয়োজন পাকা করেছিল দুই পরিবার। শেষ মুহূর্তে চাইল্ড লাইনের হস্তক্ষেপে সেই বিয়ে রোখা সম্ভব হয়। ওই দুই পরিবারকেই এখন নিজের নিজের এলাকায় বাল্যবিবাহ বিরোধী প্রচারে সামিল করেছে বীরভূম চাইল্ড লাইন। এক কথায়, অভিযুক্ত পরিবারকেই সচেতনতা প্রচারের ‘দূত’ করতে চাইছে চাইল্ড লাইন।

এত দিন নাবালিকার বিয়ে রুখে, পরিবারকে সচেতনতার পাঠ বা আইনে শাস্তি বিধানের কথা জানিয়ে তাদের মুচলেকা নিয়ে নিত প্রশাসন। কিন্তু, ওই পরিবারের সদস্যেরাই নাবালিকা বিয়ে রুখতে প্রচার এবং প্রসার কর্মসূচি নিজেদের এলাকায় নিলে এই সামাজিক ব্যাধি রোধে তাঁদের প্রয়াস আরও নিবিড় হবে বলেই মনে করছেন জেলা চাইল্ড লাইনের কর্মকর্তারা। কঙ্কালিতলায় দু’টি নাবালিকার বিয়ে রোখার পরেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছন তাঁরা। বীরভূম চাইল্ড লাইনের জেলা কাউন্সেলার মাধব রঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, “১৮ বছরের কমে মেয়ের বিয়ে দেবে না বলে মুচলেকা দিয়েছে বোলপুরের রজতপুর এবং মঙ্গলকোটের নতুনহাটের ওই দুই পরিবার। পাশাপাশি পরিবারদগুলি নিজেদের এলাকায় এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালাবে।”

সম্প্রতি শান্তিনিকেতন থানার কঙ্কালিতলা মন্দিরে ওই নাবালিকার বিয়ের তোড়জোড় করছিল তাদের পরিবার। খবর পেয়ে, ওই বিয়ে রুখে দেয় চাইল্ড লাইন। মাধবরঞ্জনবাবু শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ নিয়ে বিয়ের মণ্ডপে যান। বীরভূম চাইল্ড লাইনের জেলা কো-অর্ডিনেটর দেবাশিস ঘোষ বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে, চাইল্ড লাইন এবং পুলিশ গিয়ে বিয়ে আটকায়। নিয়ম মেনে, থানায় জেনারেল ডায়েরি করার পরে দুই নাবালিকা এবং তাদের পরিবারকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে নিয়ে আসা হয়।” চাইল্ড লাইন সূত্রের খবর, চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লিউসি) চেয়ারপার্সন নিত্যানন্দ রায় সরকারি কাজে বাইরে ছিলেন। নাবালিকা মেয়েদের কেন বিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাদের পরিবারের কাছে জানতে চান কমিটির তিন সদস্য কুন্তল চট্টোপাধ্যায়, সপ্তম ভট্টাচার্য এবং দীপ্তি দেবী। দুই পরিবারকেই মেয়েরা প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দিতে পারবে না, এই মর্মে মুচলেকা দিতে বলা হয়। সিডব্লিউসি-র পরামর্শ মেনে, মুচলেকা নিয়ে ওই দুই নাবালিকাকে পরিবারের হাতে তুলে দেয় চাইল্ড লাইন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কঙ্কালিতলায় যে দু’টি মেয়ের বিয়ে হচ্ছিল, তাদের এক জন নতুনহাটের বাসিন্দা। তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল ইলামবাজারের কালিকাপুরে। রজতপুরের বাসিন্দা অন্য নাবালিকার বিয়ে ঠিক হয়েছিল কাশিমবাজারের পাত্রের সঙ্গে। দুই নাবালিকার পরিবারই দাবি করেছে, ১৮ বছর কমে মেয়ের বিয়ে দেওয়া যে আইনত অপরাধ, তা তাদের জানা ছিল না। চাইল্ড লাইনের কর্তারা অবশ্য বলছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবারের তরফে এই অজুহাত দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ওই দুই পরিবারের সদস্যদের মুচলেকা দিয়েই ছেড়ে দেওয়া হয়নি, বরং প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়েছে, তাঁরা এলাকায় ফিরে কেউ যেন ১৮ থেকে কম বয়সে মেয়ের বিয়ে না দেয়, তার জন্য প্রচার চালাবেন। মাধববাবু জানিয়েছেন, ওই দুই পরিবার এলাকায় ফিরে বাল্যবিবাহ রোধে প্রচার চালাচ্ছে কিনা, তা তাঁরা নজরে রাখবেন। বর্ধমান চাইল্ডলাইনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘এক পরিবারের বোঝানোয় যদি আর একটি পরিবারও বাল্যবিবাহ থেকে পিছিয়ে আসে, সেটাই হবে আমাদের সাফল্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE